ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘বায়োস্কপের গল্প শুনেছি, আজই প্রথম দেখলাম’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বায়োস্কপের গল্প শুনেছি, আজই প্রথম দেখলাম’

ছবি- লেখক

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে বৈশাখি মেলা। ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যার কিছু আগে একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় হঠাৎ করেই বেশ জটলা। কারণ হিসেবে দেখা গেল, বটতলার নিচে হাতে খঞ্জনি আর একটি কাঠের ছোট্ট বাক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গণি মিঞা।

বায়োস্কোপের হাতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছড়া কাটছেন তিনি, ‘আরে চইলা আইলো সুন্দর বন, সামনে আছে, সুন্দর বনের বাঘ ভালুক সামনে আসে।’ আর সেই বায়োস্কোপে চোখ লাগিয়ে সবাই উপভোগ করছেন তা।

বায়োস্কোপের ছোট্ট ছোট্ট ফোকরগুলোতে চোখ গলিয়ে আছে ছয় বছরের শিশু মানহা এবং অরিত্র। সুন্দরবনের বাঘ, ভাল্লুক, দার্জিলিঙের পাহাড়, ফুলের বাগান, মক্কা শরীফ, মদীনা শহর, পরিস্থানের পরী; কি নেই এই বায়োস্কোপের মধ্যে। ছড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে চলে আসছে আলাদা আলাদা ছবি। এক একটি ছবি যেন এক একটি বিস্ময়।



বায়োস্কোপ দেখা শেষে ফোকর থেকে চোখ তুলে বড় বড় চোখে বেশ বিস্ময় নিয়ে তাকালো মানহা। চোখে মুখে তার ভালোলাগার রেশ। বললো- আমি এর আগে কখনো এটা দেখিনি। তবে আব্বু আম্মুর কাছে বায়োস্কপের অনেক গল্প শুনেছি। আজই প্রথম দেখলাম, অনেক ভালো লেগেছে আমার।

ফোকরে চোখ লাগিয়ে দু’হাত দিয়ে তা আড়াল করে ভীষণ মনোযোগ নিয়ে বায়োস্কোপ দেখছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরিফা আক্তার। বললেন, বায়োস্কপের অনেক গল্প শুনেছি, বইতে পড়েছি। তবে সামনা সামনি কখনো দেখা হয়নি এর আগে। আজই প্রথম বায়োস্কপ দেখলাম। এটা সত্যি অনেক সুন্দর এবং ভালোলাগার মতো।

একসময়ের গ্রামবাংলার অন্যতম প্রধান বিনোদনের মাধ্যম ছিল এই বায়োস্কোপ। তবে ঐতিহ্যবাহী এই বিনোদনের মাধ্যমটি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। আকাশ সংস্কৃতি আর কম্পিউটার গেম সহ বিনোদনের প্রায় সকল মাধ্যম এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ায় মুখ ফিরিয়েছে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য।

গণি মিঞা বললেন, ‘টিভি আইসা এখন তো আর লোকে এইগুলা দেখেই না। শুধু কয়েকটা মেলার সময় যা চলে। আর এতো কথা বইলা ২০ টাকায় কি আর প্যাট চলে বাজান!’

বায়োস্কোপ দেখতে এসেছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের প্রশিক্ষক এবং উপস্থাপক রূপশ্রী চক্রবর্তী। সকলের মতো তিনিও বেশ উৎসাহ নিয়েই বায়োস্কোপ দেখলেন।

রাইজিংবিডিকে রূপশ্রী জানান, গ্রামে বায়োস্কোপের দিনগুলো আগে অনেক সুন্দর ছিল। তখন তো সবাই একসঙ্গে দলবেঁধে বায়োস্কোপ দেখতো। তবে এখন এটি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের শিশু সহ আমরাও সবকিছুতেই এখন একটু নতুনত্ব চাই। সেদিক থেকে বায়োস্কোপটা আরো একটু সুন্দর এবং রঙিন করে উপস্থাপন করা যেতেই পারে।

এছাড়া উন্নয়ন করা যেতে পারে এর মেকানিক্যাল দিকটাও। ছবিগুলোতেও আনা যেতে পারে বৈচিত্রতা। এর ফলে এটি আমাদের কাছে আরো বেশি আগ্রহের বস্তু হবে এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলেই আমি আশা করি, যোগ করেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়