ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মা’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মা’

ছবি : লেখক

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : ১৪ মে রোববার, বিশ্ব মা দিবস। দিনটি মূলত বিশ্বের নানা দেশে বিভিন্ন দিনে আলাদাভাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

আমাদের দেশে উদযাপন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিয়ে মে মাসে দ্বিতীয় রোববার। দিবসটি উপলক্ষে সন্তানেরা এ দিন মায়ের জন্য বিভিন্ন উপহার সহ একটু একসঙ্গে থাকার মাধ্যমে মাকে ভালো সময় দেন।

যদিও মাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন লাগে না, তবু মা দিবসটা যেন মাকে অনেক না বলা কথা বলে দেওয়ার একটা সাহস যুগিয়ে যায় মনে। যার অন্যতম একটি মাধ্যম চিঠি। তাই এদিনে অনেকেই মায়ের জন্য চিঠি লিখেন। ঠিক তেমনি খুব সাধারণ কিছু মানুষের মায়ের কাছে লেখা অসাধারণ কয়েকটি চিঠি নিয়ে সাজানো এই পর্ব।

রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ চিলড্রেন হোমস প্রি-ক্যাডেট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আশিক বর্মণ। মা দিবস উপলক্ষ্যে এই ছোট্ট সোনামনির চিঠি তার আম্মুর জন্য-

“‌প্রিয় মা,

আমার প্রণাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। তুমি আমাদের জন্য কতকিছু করো। আমরা যেন ভালো শিক্ষা পাই সেজন্য তুমি আমাদেরকে স্কুলে ভর্তি করো। আমরা যেন ভালো মানুষ হই এবং সৎ ব্যক্তি হয়ে মানুষের উপকার করি সেই জন্য তুমি আপ্রাণ চেষ্টা করো। আমরা যদি ভুল করে কোনো কাজ করি বা কোনো জিনিস ভেঙে ফেলি তাহলে তুমি আমাদের না মেরে না বকে আদর করে বুঝিয়ে বলো। তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো মা।”

কুষ্টিয়া সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জাকিয়া জবা। মা দিবসে মায়ের কাছে তার চিঠি-

“প্রিয় মা,

ঠিক কেমন আছো বলোতো? তুমি তো নাকি সবসময়ই ভালো থাকো! মা পারো কি করে বলোতো? তুমি সত্যিই দেবীর মতো। সব কাজ সামলিয়ে সেই সঙ্গে ভালোও থাকো।

মা তুমি আমাদের দায়িত্ব যেমন পালন করেছো, যেমন ভালোবেসেছো, শাসন করেছো, তেমনটা কি কেউ কখনো করতে পারতো? পৃথিবীতে এতো নিঃস্বার্থভাবে কেউ এতোটা করতে পারে, তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না। ইশ্বরকে প্রথম চিনতে শেখালে তুমি, তিনি নাকি আমার সত্ত্বা। কিন্তু না মা, আমার সত্ত্বা তুমি। তুমিই আমার সব, তুলনাহীন।

যখন লেখাপড়ার চাপে অনেক রাত জাগি তখন বকা দিতে। আজও বকো.. ইশ্শ্.. মনে হয় কষ্টটা আমার হচ্ছে না, তোমার হচ্ছে। যখন আমি না ঘুমাই, তুমি শান্তিতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারো না। মা, এতোটা কিভাবে করো? আমার চোখের পানি তোমার চোখ দিয়ে পড়েছে সব সময়। মনে আছে সেই দিনগুলো, যে সময় তোমার সঙ্গে খুব ঝগড়া করতাম? রাগারাগি, চিৎকার তুমিও করতে। কিন্তু কি কষ্টেই না চিৎকারগুলো বের হতো মুখ দিয়ে। বুঝতাম না, আজো বুঝি না। এখনো তো রেগে যাই। তাও তুমি বলেই পরমুহূর্তে আবার হাসি মুখে ডাকো। আর তোমার ওই হাসি মুখ দেখলে আমি আমার রাগ কেন, পুরো পুথিবীও ভুলে যেতে পারি। মা, এটা তুমি বলেই তো সম্ভব।

তোমার কাছে কিছু চাওয়া লেগেছে বলে মনে পড়েনা। সব দিয়েছো। কতো কষ্ট করেছো। আচ্ছা বলো দেখি, কি দরকার ছিল এতো কষ্ট করার? খুব অপরাধীও মনে হয় মাঝে মাঝে নিজেকে। এতো কষ্ট তো আমার জন্যেই করেছো। কিন্তু কি জানি, তোমাকে তার অল্প একটু খুশিও দিতে পারি কিনা..

আচ্ছা মা, আমি কতটুকু তোমার মতো হয়েছি? তোমার মতো কি কি পেয়েছি? কতটা ভালো তোমার মতো? আমি তোমার মতো এতো সুন্দর দেখতে হইনি। তুমি কি সুন্দর! একদম প্রতিমার মতো। ইশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তোমার মতো আমি কাউকে পাইনি। তোমার মতো এতো সুন্দর মন কি আমার আছে মা, নাকি কখনো হবে?

সব ভুলগুলোর জন্য সত্যিই সরি। আরেকবারও মাফ করে দিও।”

সম্প্রতি স্নাকোত্তর সম্পন্ন করে নতুন চাকরিতে ঢুকেছেন রাসেল আহমেদ। মা দিবসে মায়ের কাছে তার চিঠি-

“প্রিয় মা,

তোমার স্পর্শ ছাড়া তোমার বোকা ছেলেটা কেমন আছে তা তুমি ভালোই জানো। তুমি কেমন আছো?

সন্তানের মন-মগজের সব খবরই মা তোমার জানা। তবে তোমার খবর জানার ক্ষমতা তো বিধাতা আমাকে দেয়নি।

মা, আমি তোমার স্বার্থপর সন্তান। ছেলেবেলাতে বাবা মারা যাওয়ার পরে তুমিই আমাকে আগলে রেখেছিলে। তখন থেকে জানি তুমিই আমার বাবা তুমিই আমার মা। বাবার আদর-স্নেহ কেমন বুঝতে পারিনি সত্যি, তবে বুঝতেও চাই না।

আমার হৃদয় তোমার আদর-স্নেহতেই পরিপূর্ণ; তাই অন্য কিছু বোঝার দরকার অনুভব করি না। অথচ এই আমি এখন তোমাকে ফেলে চলে গেছি বুহুদূরে। জীবন আর জীবিকার তাগিদ আমাদের পৃথক করে দিলো।

মা, আমি ফিরবো, অচিরেই তোমার কাছে ফিরবো। দোয়া কর, তোমার আশা পূরণ করে ফিরে আসবো।”

মা দিবসে মায়ের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নওশীন তাবাসসুম

“প্রিয় মমতাময়ী জননী,

পত্রের শুরুতে সালাম নিও। কেমন আছ তুমি? তোমার হাতটি ধরে আমি এই সুন্দরতম পৃথিবীর সবকিছু অনুধাবন করতে পেরেছি। তোমার ভালোবাস আর প্রেরণা আমার প্রতিদিন হয়ে ওঠে সুন্দরময় ও আনন্দময়। তোমার আত্মত্যাগ ও সাহস আমাকে করে তোলে দৃঢ়, প্রত্যয়শীল।

তুমি শুধু আমার মা নয়, ভালো বান্ধবীও। তোমার সঙ্গে কতনা খুনসুটি হয়েছে। তারপরও তুমি আমাকে ভুল বোঝনি। বরং আরো ভালোবেসেছো।

তুমি শিখিয়েছো কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। তারপরও আমি তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি, অনেক কষ্ট দিয়েছি, অনেক কাঁদিয়েছি। মাফ করে দিও মা।

তুমি অনন্যা। তুমি সাহসী। তুমি আমার মা। তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। তুমি আমাকে কখনোই দূরে সরিয়ে দাওনি বরং তুমি আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে, মাফ করে দিয়েছো।

জানি তুমি কত কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছো। আমাদের সকল আবদার পূর্ণ করছো।

তোমার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো আমি পূর্ণ করবো। আমি শুধু তোমার মেয়ে না ভালো বান্ধবীও।

মা দোয়া করো তোমার মেয়ে তোমার স্বপ্নগুলো যেন পূর্ণ করতে পারে।

তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি এবং তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত, মাফ করে দিও।”

আসুন না, মা দিবসে আমরাও একটি চিঠি লিখি মায়ের কাছে। যেখানে মায়ের জন্য নিজের সবটা না বলা কথা ঠাঁই পাবে। একটিবার লজ্জা ভেঙে সেই চিঠিটা তুলে দিন মায়ের হাতে। হতেও তো পারে, সমগ্র জীবনে আপনার মায়ের কাছে এটাই সবথেকে বড় উপহার।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মে ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়