ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্ষত শুকাতে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ উদ্ভাবন

স্বপ্নীল মাহফুজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষত শুকাতে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ উদ্ভাবন

স্বপ্নীল মাহফুজ : আমাদের শরীরে যেকোনো সময় যেকোনো ভাবে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যেমন: আঘাত, অ্যাকসিডেন্ট, বার্ন, অপারেশন ইত্যাদি। ক্ষত সময় মতো না শুকালে এর থেকে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষত মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ ও ‘বেড সোর’ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষত নিয়ে সমস্যায় ভোগেন।

তবে এবার সুখবর রয়েছে, রোগীদের জন্য। সিলেট তথা বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু হলো ‘ডায়বেটিক ফুট’ ও ‘বেড সোর’ রোগীদের জন্যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীদের গভীর বা অগভীর ক্ষতস্থানগুলো দ্রুত ভালো করা সম্ভব। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নাম ‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপি’ বা সংক্ষেপে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’। যন্ত্রটি তৈরি করেছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মো. রাজু মিয়া। তবে যন্ত্রটি তার একার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি, এই যন্ত্রের আইডিয়া দেন ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টার, সিলেট এর পরিচালক ডা. এম. মঞ্জুর আহমেদ। দুইজন মিলে চালিয়ে যান গবেষণা। আর দীর্ঘ দিন গবেষণার ফসল ঘরে তুল্লেন এই দুই গবেষক।

তবে এটি বিশ্বে নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা ১৯৯৫ সালে এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বর্তমানে এটি ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি দেশে তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি যন্ত্র বাংলাদেশে আমদানী করতে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু বাংলাদেশী এই দুই গবেষক দেশীয় যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এই যন্ত্র তৈরি করেন। এই জন্য খরচটাও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম পরে। যন্ত্রটি কাজ করে কি না তা দেখার জন্যে বেশ কিছু রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহে আশাতীত ভালো ফলাফল পাওয়ার পর, যন্ত্রটি দিয়ে এখন ডায়বেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারের মাধ্যমে সিলেটের রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।

যন্ত্রটি তৈরি করতে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রাজু মিয়া জানান, সফটওয়্যারটি তৈরি করার জন্য রাত-দিন অনেক কাজ করতে হয়েছে তাকে, কখনো বাসায় আবার কখনো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ তে কাজ করতে হয়েছে। সফটওয়্যারের কাজ শেষে একটি কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ড তৈরি করেন, এই কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ডটি সমস্ত যন্ত্রটাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

যন্ত্রটি যেভাবে কাজ করে
এই যন্ত্রটির মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম ক্ষতস্থানে স্থাপন করে বিশেষ এক ধরনের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সিল) দেওয়া হয়। সিলের ভিতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদান সমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে আরেক গবেষক ডা. এম মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘বেড সোর বা শয্যাক্ষত একটি মারাত্মক সমস্যা। সাধারণত প্যারালাইসিস রোগী, কিডনী রোগী, হাড়ভাঙ্গা রোগী বা পঙ্গু রোগীদের দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় এবং পিঠে বা কোমরে বড় বড় ক্ষত হয়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়া সহ রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। ভ্যাকুয়াম থেরাপির মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষত শুকানো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ।’

ক্ষত দূর করতে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য ‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপি’ বা ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ এক নতুন যুগের সুচনা করবে এমনটাই আশা করছেন গবেষকগণ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়