ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বই আছে, পাঠক নেই

বিল্লাল হোসেন রাজু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বই আছে, পাঠক নেই

বিল্লাল হোসেন রাজু, কুমিল্লা : ‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’ স্লোগানটি কুমিল্লা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের । এ গ্রন্থাগারে রয়েছে ৪২ হাজার বই। পরিবেশও শান্ত-নিরিবিলি  । গ্রন্থাগারজুড়ে বইয়ের সমাহার থাকলেও নেই পাঠক।

এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের একমাত্র সরকারি গ্রন্থাগার। বলা হয়, নগর জীবনে বই প্রেমীদের জন্য এক অপ্রত্যাশিত পাওয়া। কিন্তু কুমিল্লার এই সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে ঢুকলেই পাঠক শূন্যতা খুব বেশিই চোখে লাগে। অথচ সমৃদ্ধির সবটুকুই যেন পূর্ণ এখানে।

দশটি স্তরে সু-সজ্জিত গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণি বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, গ্রার্হস্থ অর্থনীতি, রসায়ন শিল্প, ধর্মশাস্ত্র, জ্ঞানতত্ত্ব, রহস্য, শরীর ও মন, দার্শনিক তত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, তর্কবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, আধুনিক দর্শন, পরিসংখ্যান, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন শাস্ত্র, লোক প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা ও বাণিজ্য যোগাযোগ, লোকসাহিত্য তত্ত্ব, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতিশাস্ত্র, ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞান, নির্মাণ শিল্প, গৃহ নির্মাণ শিল্প, শোভন-শিল্পকলা, স্থাপত্য শিল্প, ভাস্কর্য, অঙ্কন, অলঙ্কার, চিত্র ও চিত্রাঙ্কন, নকশা শিল্প, চিত্রকলা, আলোকচিত্র, সঙ্গীত শাস্ত্র, আমোদ-প্রমোদ, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সকল ধরনের ইতিহাস, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী, সাধারণ জীবনী ও প্রাচীন ইতিহাসসহ  বিভিন্ন রকমের ৪২ হাজার বই।

এতো আয়োজনের পরেও কুমিল্লার সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে ক্রমশই কমছে পাঠক সংখ্যা। ইতিমধ্যে শত বছরের পুরনো বইও নষ্ট হওয়ার পথে। এসব অপ্রতুল বইকে সংরক্ষণ করার জন্য নেই তেমন কোন ব্যবস্থা।

পাঠাগারটির অবস্থান কুমিল্লা মহানগরীর ছোটরা কলোনীতে  (আদালত গেইট থেকে ২০০মিটার উত্তরে)। প্রাচীন এ পাঠাগারটি ১৯৮২ সালে অর্থাৎ কুমিল্লা-চাঁদপুর- ব্রাক্ষণবাড়িয়া মহকুমা জেলায় রূপান্তরের ২ বছর পূর্ব থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ।


বিশিষ্টজনরা জানান, একসময় এ পাঠাগারটি ছিল পাঠকে ভরপুর । বইপ্রেমী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাহিত্যিক, আইনজীবী, গবেষক, লেখকদের প্রিয় ঠিকানা ছিল সরকারি এ গ্রন্থাগ্রার। অথচ নতুন প্রজন্মের অনেক পাঠক ও শিক্ষার্থীরা জানেনই না  বই সমৃদ্ধ সরকারি এ গ্রন্থাগারটিকে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের গণিত চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন বলেন,  ‘কুমিল্লায় এত সুন্দর মনরোম পরিবেশে একটি সরকারি পাঠাগার আছে, তা অনেকেই জানেন না। অনেক শিক্ষার্থী সময়মত পাঠ্যবই কিনতে না পারায় পড়ালেখায় বেশ অসুবিধা হয়। যার ফলে অনেক সময় কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হয় না।   গ্রন্থাগারটিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বেশ উপকার হতো।’

সদ্য এসএসসি পাশ করা রাজু, রাছেল, জাবেদ, সাগর সূত্রধর এরা জানান, পাঠাগারটি অনেক সুন্দর ও নিরিবিলি। এখানে অনেক ভালো ভালো বই পাওয়া যায়। চারপাশের পরিবেশটাও অনেক শান্ত। তাই সময় পেলে চলে আসি।

সাগর বলেন, ‘আগে নিজে একা এসেছিলাম আজ বন্ধুদের নিয়ে এসেছি।’

বিশিষ্ট লেখক এম এ আজিজ বলেন, ‘দিন দিন বই পড়ার প্রবণতা কম দেখা যায়। ফেসবুক ও ইন্টারনেটের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলেও  বই বিমুখ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাই সরকারের পাশাপাশি  বেসরকারি সংস্থা বা সংগঠনকেও বই পড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোঃ কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রচারের জন্য আমরা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকি ।’




রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/২২ মে ২০১৭/বিল্লাল হোসেন রাজু/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়