ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্যাগে বোঝাই ঈদের খুশি

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ব্যাগে বোঝাই ঈদের খুশি

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

আরিফ সাওন : ইসলাম ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজান মাসের সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপন করা হয়।

ঈদ বলতেই বোঝায় খুশি। এই খুশিতে নতুন মাত্রা যোগ করে নতুন পোশাক। বছরে একবারই আসে খুশির দিন ঈদুল ফিতর। তাই এই সময়ে সবাই সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সবারই ইচ্ছা থাকে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের।

ঈদ উদযাপনে দূরের কর্মস্থল থেকে বিড়াম্বনা আর ভোগান্তি কাঁধে নিয়ে বাড়ি ছোটেন বেশির ভাগ মানুষ। ঈদের সময় রাজধানী ঢাকা খানিক ফাঁকা হয়ে যায়। তবে ঈদের একদিন পর পর্যন্তও বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে থাকে উপচে পড়া ভিড়।

তবে ভিড় শুধু মানুষের নয়, ব্যাগেরও। যারা ঈদ করতে বাড়ি যান তাদের প্রায় সকলের কাছেই থাকে কমবেশি ছোট বড় ব্যাগ। আর ব্যাগের কারণেই পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এসব ব্যাগে থাকে ঈদের খুশি অর্থাৎ নতুন জামা-জুতা, জিনিষপত্র। কষ্ট করে ব্যাগ বহন করে বাড়ি নিয়ে গিয়ে নতুন পোশাক বের করে স্বজনের হাতে তুলে দিতেই সকলের মনে ওঠে খুশির ঢেউ।

বলতে গেলে দরজার সামনেই চলে এসেছে ঈদ। রাজধানী থেকে অনেক মানুষ ছুটছেন বাড়ি। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, যাত্রাবাড়ি, মহাখালি, গাবতলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যালসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, কাউন্টার ও কাউন্টারের আশপাশে এবং রাস্তায় বাসের জন্য অপেক্ষারতদের প্রায় সকলের কাছেই কমবেশি ব্যাগ দেখা গেছে। কারো হাতে, কারো মাথায়, কারো পিঠে আবার কারো ঘাড়ে, কোন কোন ব্যাগ দুই জনে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদূর যাওয়ার পর হাত বদলাতেও দেখা যায়। ব্যাগ রাস্তায় রেখে ব্যাথা হওয়া হাত একটু নেড়ে নেন তারা।

রাজধানীতে গত কয়েকদিন ধরে প্রায় সকলের কাছেই ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। কথা বলে জানা যায়, ব্যাগে তাদের নিজেদের ও স্বজনদের জন্য কেনা নতুন পোশাক রয়েছে। আর এই পোশাকের ব্যাগ নিয়ে তাদের বিড়াম্বনার শেষ নেই। রিকশা, অটোরিকশা বা বাসে ওঠানো, নামনো, হাতে করে বয়ে নেওয়ায় খুবই ভোগান্তি হচ্ছে।

গাবতলীতে কথা সাতক্ষীরার কলারোয়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন জিকোর সঙ্গে। তিনি বেসরকারি চাকুরিজীবী। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে। তার সঙ্গে রয়েছে তিনটি ব্যাগ। এগুলো বহন করতে তার খবুই কষ্ট হচ্ছে।

তিনি জানান, এই ব্যাগেই রয়েছে তাদের ঈদের খুশি। বিষয়টি পরিস্কার করে বলার জন্য বললে তিনি জানান, ব্যাগে রয়েছে নতুন পোশাক ও কিছু খাবার, ফলমুল। যা তিনি তার মা-বাবা, স্ত্রী-দুই মেয়ে ও ছোট ভাই-বোনের জন্য কিনেছেন। এখন কষ্ট হলেও বাড়ি যাওয়ার পর সবার খুশি দেখে আর কষ্ট থাকবে না। 

শুত্রবার ঢাকা থেকে বাগেরহাটে যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে ভোগান্তির বর্নণা দেন সুজন মাহমুদ। তার ভাষ্য মতে, সকল ধরনের যানবাহনে কমপক্ষে তিনগুণ ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘স্বজনদের জন্য ঢাকা থেকে যে পোশাক কিনেছি, তাতে ছোটবড় মিলিয়ে চারটি ব্যাগ হয়েছে। বাসের টিকিট পাইনি। তাই ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। ব্যাগ নিয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছি লঞ্চের কারণে।’

তিনি জানান, মাওয়া থেকে কাওড়াকান্দির একটি লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চ নিয়ে যায় পুরোনো ঘাটে, যেখানে শুধু লঞ্চ পারাপারের গাড়ি দাঁড়ায়। অন্য গাড়ি পাওয়া যায় না। কিন্তু এটা যাত্রীদের আগে জানানো হয় নি। এরপর সেখান থেকে আবার অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে নতুন ঘাটে। তিনি বলেন শুধু তিনি নন, বরিশাল বিভাগ ও খুলনা বিভাগের অসংখ্যা মানুষ এভাবে দুর্ভোগে পড়ছেন। পুরোনো ঘাট থেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে আবার ব্যাগ বহন করে নতুন ঘাটে আসতে হয়েছে।

সুজন আরো জানান, কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে বাগেরহাট যেতে আগে মাইক্রোবাসে ভাড়া নেওয়া হতো তিনশ টাকা। এখন নিচ্ছে আটশ টাকা। তবে তাতেও সিট পাওয়া কঠিন। পরে তিনি একটি বাসে উঠে দাঁড়িয়েই বাড়ি গেছেন। পথে ব্যাগ নিয়ে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। ব্যাগ রাখার জায়গাও মেলে না।

তিনি বলেন, ‘বাড়ি আসার পর সব কষ্ট, সব ভোগান্তি ভুলে গেছি। ঈদের আনন্দ অনেক মধুর, যা বাড়ি আসার পর উপলব্ধি করছি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়