ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চলমান বিশ্বকোষখ্যাত বরেণ্য দার্শনিক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৩ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলমান বিশ্বকোষখ্যাত বরেণ্য দার্শনিক

শাহ মতিন টিপু : বিভিন্ন ভাষায় তার দখল ছিল অসাধারণ ও অসামান্য। বহুভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এমন বহু অভিধায় তাকে ভূষিত করা হয়। তিনিই আমাদের ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব নিয়ে যার গবেষণা আজো তুলনাহীন। তিনি ২৪টি ভাষা আয়ত্ত্ব করেছিলেন, এগুলোর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তার । বিশেষ করে সংস্কৃতের ওপর তার পান্ডিত্য ছিল অসাধারণ। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় ইরানের বিশিষ্ট কবি হাফিজ ও ওমর খৈয়ামের বই অনুবাদ করেন। জ্ঞান-সাধনার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত বলে তাকে বলা হতো ‘চলমান বিশ্বকোষ’।

এই মহান দার্শনিকের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ভবনেরও নামকরণ করা হয়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে ১০ জুলাই ১৮৮৫ সালে।  তাদের পরিবার ছিল আরবী, ফার্সি ও উর্দুতে শিক্ষিত পরিবার। শহীদুল্লাহর বাবা ৫টি ভাষা জানতেন। ১০ বছর বয়সে শহীদুল্লাহকে হাওড়া জেলার সালদিয়া মাইনর স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুলে তিনি আরবী-ফার্সির বদলে সংস্কৃতিকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং সংস্কৃতিতে বরাবরই প্রথম হতেন। একজন মুসলমান ছাত্রের এই কৃতিত্ব দেখে স্কুলের হিন্দু শিক্ষক অবাক হয়ে যেতেন!

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে  তিনি সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের একমাত্র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর একটানা ২৩ বছর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি দু'বছর আইনের অধ্যাপনাও করেছেন।

১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু'বছরের ছুটি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি প্যারিসে যান। ফরাসী ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরনো কাব্যগ্রন্থ ‘চর্যাগীতি' সম্পর্কে দু'বছর গবেষণা করে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে দেশে ফিরে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি পত্র-পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজিতে উঁচু মানের প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম প্রবন্ধের বই ‘ভাষা ও সাহিত্য' প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে। এরপর তিনি একের পর এক বই লিখতে থাকেন। তার লেখা বইয়ের সংখ্যা একশ'র কাছাকাছি আর দেশি-বিদেশি ভাষায় লেখা তার প্রবন্ধের সংখ্যা কয়েকশ'।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যখন বাংলা ভাষার প্রথম সহজবোধ্য ‘বাংলা ব্যাকরণ' লিখলেন তখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুশী হয়ে তাকে একটি চিঠি লিখেন। এতে ছাত্রদের উপকার হবে বলে  চিঠিতে তিনি জানান।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মাতৃভাষাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে ক’জন ব্যক্তি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুলাই ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়