ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বপ্নপূরণে আতিকের পথচলা

মো. ওয়াহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৩, ২৬ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বপ্নপূরণে আতিকের পথচলা

মো. ওয়াহিদুল ইসলাম: সচেতনতার অভাবে আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীদের এখনো অনেকে ‘বোঝা’ মনে করেন। আবার অনেকে অজ্ঞতার কারণে ধরেই নেন, প্রতিবন্ধীরা অভিশপ্ত। তাদের দ্বারা হয়তো ভালো কিছু হবে না। তাদের সমাজে অবদান রাখার তেমন সামর্থ্য নেই। এ সবই যে আমাদের ভুল ধারণা এ বিষয়ে দ্বিধার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা যখন বাহ্যিক দৃষ্টিতে না দেখে অন্তর দৃষ্টিতে প্রতিভাবান কোনো প্রতিবন্ধীকে বিবেচনা করি তখন খুব সহজেই দেখতে পাই, তারা স্বাভাবিক আর দশজনের চেয়ে সমাজের জন্য অনেক বেশি ইতিবাচক। আমরা তাদের মেধা বিকাশে সাহায্য করলে তারা অনেক বেশি সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে- এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। প্রতিবন্ধীরা যে সুযোগ পেলে মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ আতিকুল ইসলাম আতিক।

সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো আতিক স্বাভাবিক নন, কিন্তু অসম্পূর্ণ হয়েও ভাগ্য তার জয়রথ থামাতে পারেনি। মনোবল আর সাহস সঙ্গী করে আতিক এগিয়েছে জীবনের পানে। যে কারণে তার কাছে পরাস্ত হয়েছে সব বাধা।

পাড়াগাঁয়ের ছেলে আতিক। গ্রামে সকলের তাচ্ছিল্যের শিকার হতেন। অথচ তার গ্রাম আজ তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। সে এখন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের গ্র্যাজুয়েট। তার গাঁয়ে এমন গ্র্যাজুয়েট আর কেই বা আছে!

২০০৮ সালে কাটাখালী হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আতিক। এরপর ভর্তি হন আনন্দ মোহন কলেজে।  ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকায় ৩৬তম স্থান অর্জন করে ভর্তি হন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আতিক বর্তমানে এখানেই এমবিএ পড়ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিতর্ক, ক্রীড়া, আবৃত্তি, গান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করে প্রশংসিত হয়েছেন।

 


স্কুলে পড়ার সময় তার আবৃত্তিতে হাতেখড়ি। স্কুলে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগেও তিনি উপস্থিত বক্তৃতায় সেরা। তার সাংগঠনিক দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। ‘সৎসঙ্গ’ নামে একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। স্কুলে প্রায় একশ ছেলেমেয়ে পড়ছে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন আতিক নিজেই। এখন তিনি স্বপ্ন দেখেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু করার।

আতিক পড়ালেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চান। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কোনো সংগঠন তার বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকায় তারা অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। এগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। যে কারণে  প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তার পাশাপাশি তাদের অধিকার আদায়েও কাজ করে অবদান রাখতে চান তিনি।

আতিকের ইচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবেন। নিজেকে তিনি প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা (অ্যাডমিন)  ভাবতে পছন্দ করেন। স্বপ্নপূরণে দিনরাত সে ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আতিক জীবনের পথ পাড়ি দিচ্ছেন দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়