ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

'পপ কিং' আজও বিস্ময়

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৯ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
'পপ কিং' আজও বিস্ময়

মাইকেল জ্যাকসন

শাহ মতিন টিপু : সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী তিনি। এই স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।এমন কোনো সঙ্গীত শ্রোতা খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে এই বিখ্যাত শিল্পীকে জানেনা। হ্যাঁ 'পপ কিং' মাইকেল জ্যাকসন এর কথাই বলছি।

শিল্পী হিসেবে পুরো বিশ্বে  খ্যাতি ছিল তার।  কিংবদন্তী এই সঙ্গীত শিল্পীর জন্মদিন আজ। ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন ।

বলা যায়, জ্যাকসনের শিল্পী পরিবার।বাবা জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন ও মা ক্যাথরিন জ্যাকসন। পাঁচ ভাই ও তিন বোন, সবাই কোনো না কোনো সময় পেশাগতভাবে সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে ছোট বোন জ্যানেট জ্যাকসন একজন সফল সংগীত শিল্পী।

সেই সুবাদে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মাইকেল জ্যাকসন । সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি জ্যাকসন ফাইভ নামের সঙ্গীত গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে গান গাইতেন। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে তিনি একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন।

মাইকেল জ্যাকসনের বাবা জোসেফ জ্যাকসন কারখানায় চাকরির পাশাপাশি ভাই লুথারকে নিয়ে ‘দি ফ্যালকন’ নামের একটি ব্যান্ড দল বানিয়েছিলেন, বিভিন্ন জায়গায় তিনি গান গেয়ে বেড়াতেন। ফলে তার প্রভাব ছেলে-মেয়েদের উপরও পড়েছিল।  বিশেষ করে তার ৯ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সপ্তম ছেলেটির উপরে এতটাই যে, পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন বিশ্বের ‘কিং অফ পপ’।

১৯৮০র দশকে মাইকেল সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রোবট ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) । মুনওয়াক হচ্ছে, সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা।

তার অর্জনে রয়েছে অনেক অনেক রেকর্ড। ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১নম্বর একক সঙ্গীত এবং ৭৫ কোটি অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড রয়েছে তার। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সঙ্গীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে- অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)।

২০০৯ সালের ২৫ জুন বিখ্যাত এই পপ গায়কের মৃত্যু হঠাৎ করেই সঙ্গীত বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয় । মৃত্যু নাকি হত্যা, এমন বিতর্কও ওঠে। কিন্তু যে হারিয়ে যায়, সেতো আর ফিরে আসবে না।তার মতো জনপ্রিয়তার আকাশ আর কেউ ছুঁতে পারবেন, এমনও মনে হয়না।

জীবিত মাইকেলের চেয়ে মৃত মাইকেল যেন আরোও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। মৃত্যুর পর সংগীতের ইতিহাসে জনপ্রিয়তার হিসাব-নিকাশই পাল্টে দেন মাইকেল জ্যাকসন । পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া বছরই সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন জ্যাকসন। মৃত্যুর এক বছরের মাথায় কেবল আমেরিকাতেই তার অ্যালবাম বিক্রি হয় ৮.২ মিলিয়ন কপি। আর বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয় ৩৫ মিলিয়ন।

মৃত্যুর পর গান ডাউনলোডের ইতিহাসেও রেকর্ড গড়েন 'পপ কিং'। মৃত্যুর পর তার নির্বাচিত গান নিয়ে প্রকাশিত তিনটি অ্যালবাম এত বেশি বিক্রি হয় যে, কোনো জনপ্রিয় শিল্পীর নতুন অ্যালবামও এত বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া এক বছরে সর্বাধিক বিক্রীত সেরা বিশের তালিকায় জায়গা করে নেয় জ্যাকসনের চার-চারটি অ্যালবাম। আমেরিকার সংগীতের ইতিহাসে আর কোনো শিল্পীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি।

২০১৫ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের পরিবেশক সংস্থা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল সনি মিউজিক। কিন্তু পপ কিংয়ের মৃত্যুর পর তার গানের বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে জ্যাকসন এস্টেটের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে সনি মিউজিক। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের স্বত্ব কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

আসলে জীবিত মাইকেলের মতো মৃত মাইকেলও ছিলেন বিস্ময়কর। তার জনপ্রিয়তাই সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বারবার।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ আগস্ট ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়