লিপস্টিক ও লাইলী মজনু গাছ
তাসফিয়া আইরিন শুভ্রা || রাইজিংবিডি.কম
ছবি : কাওছার আহমেদ
তাসফিয়া আইরিন শুভ্রা : লিপস্টিক বা লাইলী মজনু; পরিচিত দুটি শব্দ। নারীর ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাধারণত লিপস্টিক ব্যবহার করা হয়। আর লাইলী মজনু অমর প্রেমের অনবদ্য এক কাহিনি। যুগ যুগ ধরে এই কাহিনি বেঁচে রয়েছে মানুষের প্রেম-ভালোবাসায়।
অদ্ভুত হলেও সত্য, লিপস্টিক ও লাইলী মজনু নামে দুই প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। প্রায় দুষ্প্রাপ্য এই দুটি প্রজাতির দেখা মেলে সিলেটের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ প্রাঙ্গণে। কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে এই দুই প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো বড় হচ্ছে। গাছ দুটি দেখতে শিক্ষার্থীরা তো বটেই, সিলেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে আসেন। বেশিরভাগ মানুষের আগ্রহ লাইলী মজনু গাছ ঘিরে।
কথা হয় আশিক ও সোনিয়ার সঙ্গে। দুজনেই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা বলেন, অনেক দিন ধরে লাইলী-মজনু গাছের নাম শুনে আসছি। তাই দেখতে এলাম। আসলেই গাছটি অনেক সুন্দর। এখানে আসার পর জানলাম লিপস্টিক নামেও একটি গাছ আছে। সেটিও দেখলাম। গাছগুলো সুন্দর। তাদের নামগুলোও যথার্থ।
লিপস্টিক গাছ সম্পর্কে জানা গেছে, এই গাছের নাম lipstick tree. বৈজ্ঞানিক নাম Bixa orellana; এই নামকরণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল কোড অব নোমেন কালচার। এটি Bixaceae গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। এর বাংলা নাম দই গোটা। এই গাছের বীজ দিয়ে মূলত প্রসাধনী তৈরি করা হয়। এটি লিপস্টিক তৈরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়।
লিপস্টিক গাছ
এছাড়া লাইলী মজনু গাছ সম্পর্কে জানা গেছে, এর নাম Chines croton, jungle fire plant. বৈজ্ঞানিক নাম excoecaria cochinchinensis। এটি Euphorbiaceae গোত্রের বৃক্ষ। এই গাছটিও এমসি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে। এটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা এই বিভাগ থেকে করা হয়।
গাছ দুটি প্রসঙ্গে আলাপ হয় এমসি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তিনি জানান, দুটি গাছই বিরল। এগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় না বললেই চলে। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের এই গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, গবেষণা ও কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। ড. আব্দুল খালেক আরো বলেন, লিপস্টিক গাছের বীজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী তৈরি করা হয়। এছাড়া বীজের ভেতরে এক ধরনের উপাদান বা রং রয়েছে, যা দিয়ে লিপস্টিক তৈরি করা হয়।
লাইলী মজনু গাছ প্রসঙ্গে ড. খালেক বলেন, এটি বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। আমরা সংরক্ষণ করার জন্য এই গাছ রোপণ করেছি। লাইলী মজনু নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই গাছের পাতার ওপরের অংশ সবুজ এবং নিচের অংশ লাল। সবুজ ও লাল অংশ ঠিক যেন ছায়ার মতো; এটিকে আমরা বন্ধন বলি। বন্ধন বা প্রেমের প্রতীক হিসেবে লাইলী মজনুর কথা বলা হয়। সেই হিসেবে আমরা এই নামকরণ করেছি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন