ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সমাজতন্ত্রী চীনের জনক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমাজতন্ত্রী চীনের জনক

শাহ মতিন টিপু : মাও সেতুং। প্রয়াণের ৪১ বছর পরেও চীনে ও সমাজতন্ত্রে তিনি যেন এক জীবন্ত সত্তা। মানব মুক্তির সংগ্রামী এই বিপ্লবীকে চীনা জনগণ তাদের বুকে জাগ্রত করে রেখেছেন।

এই মহান নেতার ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চীনে সমাজতন্ত্রের সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার অবদান চিরস্মরণীয়। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ প্রচেষ্টায় তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যানের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এবং গণচীনের সফল রাষ্ট্রনায়ক  হয়েছিলেন।

১৯৪৯ সালে চীনে  সমাজতন্ত্র  প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চীন শাসন করেন মাও সেতুং । মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখানে একত্রে মাওবাদ নামে প্রতিষ্ঠিত। দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করতে সেকেন্ড ইউনাইটেড ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন মাও। চীনের গৃহযুদ্ধে কুমিনটাং দলের বিরুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জয় ছিল মাওয়েরই অবদান।

১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর হুনান প্রদেশের শাওশানে এক গরিব কৃষক পরিবারে মাওয়ের জন্ম । ৮ বছর বয়সে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু। ১৩ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে পারিবারিক খামারে, পরে অবশ্য মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন।  তিনি শ্রমিকের বদলে কৃষককে চিহ্নিত করেছেন বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে, গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র রেড আর্মি, প্রচলন করেছেন আরণ্যক গেরিলা যুদ্ধের।

১৯১১ সালে হুনান প্রদেশের রাজধানী মাও চাঙশা’য় পড়তে এসে প্রথম পাশ্চাত্য দর্শন সম্বন্ধে জানতে পারেন। সে সময়টায় চিনে চলছিল কিঙ রাজতন্ত্রের দুঃশাসন। তার বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদীদের তীব্র গণআন্দোলন হচ্ছিল। সান ইয়াত সেন ছিলেন জাতীয়তাবাদীদের নেতা। তিনি রাজতন্ত্র ভেঙ্গে গঠন করতে চান প্রজাতন্ত্র। তার ডাকে মাও উদ্ধুদ্ধ হলেন। যোগ দিলেন প্রজাতন্ত্রের সৈন্যবিভাগে।

১৯১৮ তে বেজিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে কাজের সুবাদে জানলেন মাকর্সবাদকে, মাকর্সবাদের তত্ত্বকে । ১৯১৯ সালে চীনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে বুদ্ধিজীবিদের তরফ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনে যোগ দিলেন মাও। ১৯২০ সালে চাঙশায় ফিরে এলেন । হুনান প্রদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হলেন। ১৯২১ সালে সাংহাইতে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল। সেই গোপন মিটিং-এ উপস্থিত হলেন মাও। তারপর ফিরে এসে হুনানে কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক শাখা খুললেন।

১৯২৫ সালে জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও। ১৯২৭ সালে মাও লিখলেন যে, বিপ্লবে কৃষকরাই মূল চালিকা শক্তি, শ্রমিকরা নয়। মার্কসবাদবিরোধী বক্তব্যে নিজের দলেই হইচই পড়ে গেল। ফলে জাতীয়তাবাদী কুমিনটাং দলের নেতা চিয়াং কাই সেক প্রবল কমিউনিস্টবিরোধী দমননীতি অনুসরণ করলেন। সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিলেন মাও। হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন মাও। অবশ্য পরাজিত হলেন।

দক্ষিণে পার্বত্য এলাকা জিয়াংজি প্রদেশে চলে এলেন। এখানে অসংখ্য তরুণ দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিচ্ছিল। মাও তাদের সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি। এদের লক্ষ একটাই-কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করলেন ।

১৯৩৪ সালে চিয়াং কাই সেক জিয়াংজি প্রদেশ ঘিরে ফেলল।এক বিস্ময়কর ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগে সে বেড়াজাল ছিন্ন করে রেড আর্মিকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন মাও। এরপর তিনি আরম্ভ করলেন এক দীর্ঘ পদযাত্রা। যা ইতিহাসে লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। রেড আর্মির সঙ্গে ৬ হাজার মাইল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উত্তরের ইয়ানান প্রদেশ পৌঁছে গেলেন মাও। হাঁটতে হাঁটতে অগণিত কৃষকের সমর্থন পেলেন মাও। তারপর শুধুই সাফল্য আর সাফল্য।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়