ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কালোত্তীর্ণ কথাশিল্পী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কালোত্তীর্ণ কথাশিল্পী

শাহ মতিন টিপু : কালোত্তীর্ণ কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে আন্দোলিত হননি বাংলা সাহিত্যে এমন পাঠক বিরল। তার কয়েকটি ছোট গল্পের শিরোনাম : জলসাঘর, তারিনী মাঝি, রসকলি, কালাপাহাড়, অগ্রদানী, বেদেনী, যাদুকরী, নটু মোক্তার, সওয়াল, কামধেনু, পিতা-পুত্র, ডাইনী, শ্মশানের পথে ইত্যাদি।এমন অসংখ্য গল্প তিনি লিখেছেন ।
তারাশঙ্করের অন্ততঃ ১০টি উপন্যাস এবং বেশ কিছু অনন্য সাধারণ ছোট গল্প স্বকালের সীমা ছাড়িয়ে কালজয়ী হয়েছে। এ অর্থেই তিনি বাংলার চিরায়ত কথা সাহিত্যের কালজয়ী শিল্প প্রতিভা।

বাংলা কথা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় এই কথাশিল্পীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি কোলকাতায় পরলোকগমন করেন।এক ক্ষুদ্র জমিদার পরিবারে তারাশঙ্করের জন্ম। ১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

পিতার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী। মায়ের বাস্তব দেশপ্রেম শৈশবেই তারাশঙ্করকে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময়ে তিনি ছিলেন ৭ বছরের শিশু । রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে মাতৃকুলের সংশ্রব কৈশোরেই তার মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। বিপ্লবী রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে সংযোগও ঘটে তার। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গ্রেফতার হন। কয়েকমাস জেলও খাটেন। কারাগারেই তার সাহিত্য চর্চার প্রকাশ ঘটে। এখানেই তিনি লেখা শুরু করেন ‘পাষাণপুরী' আর ‘চৈতালী ঘূর্ণি'।

কারামুক্তির দিনেই তারাশঙ্কর প্রতিজ্ঞা করেন, সাহিত্য সাধনার মাধ্যমেই তিনি দেশ সেবা করবেন।

তার প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি' ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ক্রমান্বয়ে তিনি রচনা করেন ‘ধাত্রীদেবতা' (১৯৩৯), ‘কালিন্দী' (১৯৩৯), ‘গণদেবতা' (১৯৪৩), ‘পঞ্চগ্রাম' (১৯৪৪), ‘মন্বন্তর' (১৯৪৪), ‘সন্দীপন পাঠশালা' (১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা' (১৯৪৬), ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা' (১৯৪৬-৪৭) এবং রাজনীতি নিরপেক্ষ কালজয়ী উপন্যাস ‘রায় কমল' (১৯৩৫) ও ‘কবি' (১৯৪২)।

চীন-ভারত মৈত্রী শক্তিশালী করার পক্ষে ছিলেন । সেই সূত্রে ১৯৫২ সালে তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় চীন সফরে যান। পরে ১৯৫৭ সালে আফ্রো এশিয়া সাহিত্য সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসবে রাশিয়ার তাসখন্দ ভ্রমণ করেন। তারাশঙ্কর ১৯৫২ সালে ‘আরোগ্য নিকেতন' লেখেন। এ গ্রন্থের জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তারাশঙ্করের ‘রাধা' উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১৯৬৭ সালে গণদেবতা'কে মুখ্যত স্মরণে রেখে তার সমগ্র সাহিত্য জীবনের পুরস্কারস্বরূপ তাকে ‘জ্ঞানপীঠ' প্রদান করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অনুকূল জনমত গঠনে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এ সময় তিনি দু'টি উপন্যাস রচনা করেন। একটি ‘সুতপার তপস্যা'। অপরটি ‘একটি কালো মেঘের কথা'। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামকে বিষয়বস্তু করে তিনি রচনা করেন তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘একটি কালো মেয়ের কথা।'। এ গ্রন্থে বাংলাদেশীদের ত্যাগ ও সংগ্রামের অনন্যতাকে সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।

তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রামজীবনের ভাঙনের কথা, নগরজীবনের বিকাশের কথা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়