ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

স্মরণ

‘দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক’

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক’

শাহ মতিন টিপু : সুভাষ দত্ত চলচ্চিত্র দর্শকদের মন থেকে হারিয়ে যাননি এখনো।  দেশীয় চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি পরিচালক অনেক অনেক দিন স্মৃতি হয়ে ভাসবেন মানুষের মনের মুকুরে । এ বরেণ্য মানুষটির পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি  ১২ রামকৃষ্ণ মিশন রোড, ঢাকার নিজ ফ্ল্যাটে  মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২০০১ সালের অক্টোবরে মারা যান স্ত্রী সীমা দত্ত । জন্ম ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে মামার বাড়িতে। শৈশব-কৈশোরও কেটেছে তার মামাবাড়িতে।  বাবা-মায়ের বাড়ি ছিল বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। শৈশবে নাটকে অভিনয় এবং নাট্যনির্দেশনা দিলেও তার পেশাগত জীবন শুরু হয় একজন কমার্শিয়াল শিল্পী হিসেবে।

১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখে তিনি ছবি নির্মাণে দারুণভাবে আগ্রহী হন। চলতে থাকে প্রস্তুতি। এর মধ্যে এহতেশামের  ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতে কমেডি চরিত্রে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। 

১৯৬২ সালের শেষ দিকে শচীন ভৌমিকের একটি গল্পের চিত্রনাট্য সৈয়দ শামসুল হককে দেখালেন। তিনি উৎসাহ দিলেন। এরপর সত্য সাহার সঙ্গে  কথা হলো তার। নায়িকা নির্বাচিত করলেন কবরীকে। ১৯৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল মুক্তি পেলো ‘সুতরাং’ ।  ছবি সুপারহিট। হিট  ছবির নায়িকা কবরীও। এই ছবির নায়ক তিনিই ছিলেন।

এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক । এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল তার সৃজনশীল কর্মের ঈর্ষণীয় সাফল্য। তিনি ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ। তার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল সিনেমার পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি। মূলত, ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মধ্য দিয়ে তার পরিচালনা জীবন শুরু হয়। এরপরে তিনি এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। তার পরিচালিত  সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ আমার ছেলে’ ২০০৮ সালে মুক্তি লাভ করে।

সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো সুতরাং, আবির্ভাব, রাজধানীর বুকে, সূর্যস্নান, চান্দা, তালাশ, নতুন সুর, রূপবান, মিলন, নদী ও নারী, ভাইয়া, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, ক্যায়সে কাহু, আখেরি স্টেশন, সোনার কাজল, দুই দিগন্ত, সমাধান প্রভৃতি।

পরিচালিত চলচ্চিত্র : সুতরাং , আবির্ভাব , কাগজের নৌকা, পালাবদল, আলিঙ্গন, আয়না ও অবশিষ্ট, বিনিময়, আকাঙ্ক্ষা, ডুমুরের ফুল, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী , সকাল সন্ধ্যা, ফুলশয্যা , বসুন্ধরা , আবদার, নাজমা, সবুজসাথী, স্বামী-স্ত্রী ও আমার ছেলে।

তিনি প্রচুর মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা কবর নাটকে তার প্রথম মঞ্চাভিনয় ১৯৭২ সালে।

১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সুতরাং’ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হয়েছে সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্র।

সুভাষ দত্ত  ছিলেন শিল্পী গড়ার  মহান কারিগর । তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে কবরী, সুচন্দা, উজ্জল, শর্মিলী আহমেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফ ও মন্দিরার।

১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ ছবিটির জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুভাষ দত্ত। এরপর ১৯৯৯ সালে একুশে পদকও অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও তিনি দেশি-বিদেশি অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছিলেন।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একবার আটক করে সুভাষ দত্তকে। তবে কয়েকটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করার কারণে তখন পাকিস্তানেও তিনি পরিচিত মুখ। সেই সুবাদে সেদিন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন তাকে ছেড়ে দিতে বলেন।  প্রাণে বেঁচে যান সুভাষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মাণ করেন ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, যা তার বানানো অন্যতম সেরা ছবি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়