ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবস

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবস

মনিরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ খয়রাত আলী

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস বাঙালির জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। এই বিজয় এমনি এমনি আসেনি। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়েছে।

৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান জানান দেয়।

জীবন বাজি রেখে বাঙালিরা মুক্তির সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কেউ হারিয়েছেন জীবন, কেউ শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন সারা জীবনের জন্য।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনে বিজয় দিবস কেমন? রণাঙ্গনের সেই মুক্তিযোদ্ধারা এখন কিভাবে উদযাপন করেন বিজয় দিবস? চলুন শোনা যাক তাদের মুখেই।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন এ প্রজন্মের তরুণদের
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম। ঠাকুরগাঁও হাজিপাড়া পৌরসভায় বাড়ি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগে, সক্রিয় ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন মনিরুল ইসলাম।

ভারতের ঠকরা বাড়ী বিএসএফ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ৬ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি জানান, তখন পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, যুদ্ধ না করে উপায় নেই। রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশ থেকে হানাদার মুক্ত করতে হবে। তখন দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছি।

১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শত্রু পক্ষের গুলিতে মারাত্মক আহত হন মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম। ভারতে কিছু দিন চিকিৎসা নিয়ে পরে আবারো যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলাকে শত্রু মুক্ত করেন।

যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে। জানতে চাই এখন বিজয় দিবস কিভাবে কাটে তার। তিনি জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন সভা সমাবেশে যোগ দেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন এ প্রজন্মের তরুণদের সঙ্গে।

বিজয় দিবস কাটে বঙ্গভবনে
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ থানার মোহাম্মদ খয়রাত আলী। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ২৬ বছরের টগবগে যুবক। পেশায় একজন কৃষক হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতের পানি ঘাটা ক্যাম্পে এক মাস প্রশিক্ষণ নেন। পরে দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে গেরিলা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একবার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন খয়রাত আলী।

খয়রাত আলী জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ভারতের রায়গঞ্জ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে সময় লেগেছিল প্রায় দেড় মাস। মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলীর সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে।

বিজয় দিবস কিভাবে উদযাপন করেন জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলী বলেন, বিজয় দিবস আমাদের কাছে আনন্দের দিন। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধার ক্যাপ পরে ও ব্যাচ লাগিয়ে বঙ্গভবনে যান। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপ্রতির সঙ্গে উদযাপন করেন বিজয় দিবসের আনন্দঘন মুহূর্ত।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়