ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

টাকার অভাবে ঢাকা যেতে পারছেন না বৃক্ষশিশু রিপন

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টাকার অভাবে ঢাকা যেতে পারছেন না বৃক্ষশিশু রিপন

চিকিৎসা শুরু আগে

আমিনুর রহমান হৃদয় : টাকার অভাবে আবারো চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বৃক্ষশিশু রিপন রায়ের (৯)। গত অক্টোবরের শেষ দিকে দুইমাসের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কেটগাঁও গ্রামে নিজ বাড়িতে এসেছিল সে।

জুতা সেলাই কাজ করা রিপনের বাবা মহেন্দ্র রায় জানান, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল রিপন। এরই মধ্যে তার হাতে-পায়ে তিন দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আগের থেকে কিছুটা সুস্থ হলেও আরো অস্ত্রোপচার হবে বলে ডাক্তাররা তাকে জানিয়েছেন। এজন্য দুই মাসের জন্য বাড়িতে ঘুরতে পাঠানো হয় রিপনকে।

মহেন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই মাস হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আমি ছেলেকে নিয়ে যে আবারো ঢাকা মেডিকেলে যাব সেই টাকা আমার নাই। জুতা সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চলে আমার। দুই মাস হয়ে গেছে। দুই মাস পর ডাক্তাররা-স্যাররা নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু এখন যাবার টাকাই নাই।’ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে সহযোগিতা করা হলেও এখন কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এই বিষয়ে জানা নেই।’ পরে কথা বলবে এই বিষয়ে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।


অস্ত্রোপচারের পর


প্রসঙ্গত, জন্মের ৩ মাস পর হাতে পায়ে গুটি বসন্তের মতো আচিঁল দেখা দেয় রিপনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুটির মতো আচিঁলগুলোও বাড়তে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসকদের ওষুধেও কাজ না হলে পাশ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর ও রংপুরের ডাক্তারের শরণাপন্ন হন রিপনের পরিবার। দীর্ঘ ৬ বছর ওষুধ খেয়েও উন্নতি দেখা দেয় না বরং হাতে-পায়ের আচিঁলগুলো গাছের শিকড়ের মতো আকার ধারণ করতে শুরু করে। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না জুতা সেলাইয়ের কাজে নিয়োজিত রিপনের বাবা মহেন্দ্র।

এরপর স্থানীয় এক সাংবাদিক রিপনকে নিয়ে সংবাদ করলে জেলা প্রশাসন সহ অনেকেই রিপনের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। পরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রিপনকে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরই মধ্যে রিপনের হাতে পায়ে তিন বার সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আগের থেকে অবস্থার বেশ উন্নতিও হয়েছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা।

প্রসঙ্গত, বৃক্ষশিশু রিপনের আগেও আবুল বাজানদার নামে বাংলাদেশে প্রথম এক বৃক্ষ মানবের সন্ধান পায় চিকিৎসকেরা। তার হাতে-পায়ে ‘শেকড়ের মতো’ আঁচিল নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠেন। পরে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসে সরকার। এক বছরে কমপক্ষে ১৬টি অস্ত্রোপচার শেষে তার শরীর থেকে ১০ কেজি বর্ধিত আচিঁল (গাছের শিকড় টাইপের) অপসারণ করা হয়েছে। তিনি এখন ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেলে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়