ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৪ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

শাহ মতিন টিপু : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কালজয়ী কথাশিল্পী । ওপার বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর মূল্যায়ন, 'কি পশ্চিম বাংলা কি বাংলাদেশ সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক।'

ষাটের দশকের এই শক্তিধর কথাশিল্পীর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি ক্যানসার হানা দিয়ে শক্তিধর এই কথাকারকে পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি মনে করতেন- ‘একজন মানুষ অন্ততপক্ষে তিনশ বছর বেঁচে থাকা উচিত।’অথচ অর্ধশত বছর পূর্ণ হতেই মাত্র ৫৪ বছর বয়সে চলে যেতে হয়েছে তাকে!

কিংবদন্তী এই কথাশিল্পীর জন্ম গাইবান্ধা জেলার সাঘাটায় । ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোট্টিয়া গ্রামে মামা বাডিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায়।  বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৮) এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন (১৯৬০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন (১৯৬৪)।এরপর কর্মজীবন শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ : গল্পগ্রন্থ- অন্যঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল। উপন্যাস-  চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭), খোয়াবনামা(১৯৯৬)। প্রবন্ধ সংগ্রহ- সংস্কৃতির ভাঙা সেতু। জীবনে খুব বেশি তিনি লেখেননি। তবে যা লিখেছেন তা বিশ্বমানের।

তার খোয়াবনামা’ও ‘চিলেকাঠার সেপাই’ পাঠকনন্দিত। ‘চিলেকাঠার সেপাই উপন্যাসে’স্বার্থকভাবে তিনি উপজীব্য করেছেন এ দেশের রাজনীতির পাকিস্তান পর্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আন্দোলন ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনকে। এটি অবলম্বনে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘খোয়াবনামা’র মূল প্রসঙ্গ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জনপদে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রভাব। এই উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।

১৯৭৭ সালে তিনি হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন ৷ ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন৷ ১৯৮৭ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে খোয়াবনামার জন্য পান প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার । এবছর কাজী মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক নামে আরেকটি পুরস্কারও পান তিনি।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নন্দিত ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও। পাঁচটি সংকলনে (অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল) সর্বমোট ২৩টি ছোটগল্প এবং একটি প্রবন্ধগ্রন্থ (সংস্কৃতির ভাঙা সেতু) আর দুটি মাত্র উপন্যাস রচনা করেই ইলিয়াস বাংলা সাহিত্যের অক্ষয় আসনটি দখল করে নিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের মূল্যায়ন- 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রকরণ-পরিচর্যায় নিরীক্ষপ্রিয় শিল্পী। অ্যান্টি-রোমান্টিক দৃষ্টিকোণে প্রাত্যহিক ভাষায় তিনি নির্মাণ করেন যাপিতজীবনের চালচিত্র। পুরনো ঢাকার ভাষা, কুট্টিদের খিস্তি-খেউড়, আর বাখরখানি-সংস্কৃতি ইলিয়াসের গল্পের শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত যেন। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন দীর্ঘ বাক্যগঠনে ...। পুরনো ঢাকার ক্ষয়িষ্ণুতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, স্বার্থপরতা আর জীবনসংগ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে তার গল্পের সমৃদ্ধভূবন। পুরনো ঢাকাকে ইলিয়াসের মতো এমন অনুপুঙ্খভাবে আর কেউ দেখেনি। তার গল্পে কাহিনী অপেক্ষা চরিত্র-মনস্তত্ত্ব মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে, যা আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নেতি দিয়ে শুরু করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার চরিত্রকে সমাপ্তিতে পৌঁছে দেন ইতির রাজ্যে। ডিটেইলস তার গল্পে উঠে আসে অবলীলায় ...। ফ্ল্যাশ-ব্যাক পদ্ধতিতে কাহিনীবয়ন ইলিয়াসের ছোটগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।'

বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবান্বিত মুহূর্ত ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করেও গড়ে উঠেছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের বৃহত্তর একটা অংশ। তন্মধ্যে 'জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল', 'রেইনকোট'সহ বেশকিছু লেখার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জানুয়ারি ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়