ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ফারুকের রেকর্ড

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ফারুকের রেকর্ড

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম। শৈশব কেটেছে গ্রামের অন্য দশটি ছেলের মতো। বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি, দৌড়ঝাপ, সাইকেল চালিয়ে আর পুকুরে সাঁতার কেটে পার করে দিতেন পুরো দিন। পড়াশোনায় মন বসতো না। একে একে পরিবর্তন করেছেন ১৪টি স্কুল। হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন এই ছেলেকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু এই ছেলেই একদিন সবাইকে চমকে দিয়ে দেশ সেরা রিপোর্টার হবেন এমনটি হয়তো কেউ ভাবেননি।

বলছিলাম সম্প্রতি চতুর্থবারের মতো ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডজয়ী মোহাম্মদ ওমর ফারুকের কথা। জন্ম কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে। পিতা আলী আশ্রাফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা পরিজা বেগম গৃহিণী। বাবা মায়ের চার সন্তানের মধ্যে ফারুক সবার বড়।

স্কুলশিক্ষক বাবার ইচ্ছা ছিল, ছেলে বড় আর্মি অফিসার হবে কিন্তু ছেলে সৃজনশীল কিছু করতে চাইতেন সব সময়। সেই ধারাবাহিকতায় লেখালেখিসহ বিভিন্ন সংগঠন করতেন তিনি। স্কুল জীবনে নিজেই ছিলেন বেশ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোক্তা। লিখতেন কবিতা, অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন প্রকাশ করেছেন কবিতার বই ‘বিদ্বান’। তখন বইটির জন্য তরুণ লেখক হিসেবে পেয়েছিলেন পুরস্কার।

ফারুকের সাংবাদিকতা জীবন বৈচিত্রময়। মফস্বল থেকে উঠে আসা এই তরুণ কাজ করছেন রাজধানীতে জাতীয় গণমাধ্যমে। মফস্বলের সরল পথ পেরিয়ে রাজধানীতে আসার পথটি মোটেও সরল ছিল না তার জন্য। নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে ছিনিয়ে আনতে হয়েছে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তরুণ এই সংবাদকর্মী।

বর্তমানে কাজ করছেন দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকার ফিচার রিপোর্টার হিসেবে। ফিচার রিপোর্টিং করেও তিনি অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে, প্রমাণ করেছেন সাংবাদিকতা মিশে আছে তার রক্তে। সদা হাস্যজ্জল ফারুক নিজের কাজগুলোকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়, প্রমাণ করেছেন- মেধা, পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় সবই সম্ভব। মানবিকতা, সচেতনতা এবং দেশের কল্যাণে সাংবাদিকতা- এমন বিশ্বাসেই এগিয়ে চলেছেন এই তরুণ। তুলে ধরছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা। কাজ করছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য। সাংবাদিকতা করে মানুষের জন্য যে কিছু করা যায়, সেটাই দেখিয়েছেন তরুণ এই সাংবাদিক।

সাংবাদিকতার শুরু কীভাবে জানতে চাইলে ওমর ফারুক জানান, নিজের লেখার পাশাপাশি অন্যের লেখা প্রকাশের জন্য সংবাদভিত্তিক ম্যাগাজিন মাসিক ‘বিশ্বের আলো বিশ্বকণ্ঠ’ সম্পাদনা দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। চৌদ্দ কি পনেরো বয়সেই সম্পাদক! সেটা দিয়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেই বয়সে। পরে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান কুমিল্লার স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘কুমিল্লার আলো’ পত্রিকায়। এরপর দৈনিক ‘আমাদের কুমিল্লা’, ‘কুমিল্লার ডাক’এ কাজ করেছেন। কুমিল্লার ডাকে কাজ করার পাশাপাশি কুমিল্লার সকল পত্রিকায় তখনকা কলাম লিখতেন। সেই সুবাদে কুমিল্লার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন ফারুক। কুমিল্লায় কাজ করার সময় চ্যানেল আইয়ের ‘সাপ্তাহিক’-এ তার অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়।

সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ শিশুদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সেরা রিপোর্টার হিসেবে চার বার পেয়েছেন ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০১১, ২০১২, ২০১৬ এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে, যা রেকর্ড। সেরা রিপোর্টার হিসেবে পেয়েছেন বিএফটিএসএসি অ্যাওয়ার্ড-২০১১। ২০১৫ সালে তৃতীয় লিঙ্গদের নিয়ে কাজ করে পেয়েছেন বন্ধু মিডিয়া ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড। সেরা রিপোর্টার হিসেবে নয়টি অ্যাওয়ার্ড আছে তার। ফারুক মূলত পলিটিক্যাল ইন্টারভিউ, নারী, শিশু, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাস হালচাল, তরুণ প্রজন্ম, অর্থনীতি, তৃতীয় লিঙ্গ বা সংখ্যালঘু, সমকামীতার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করছেন।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারুক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি সব সময় মাস্টার প্ল্যান করে পথ চলি। বর্তমানের মতো আগামী দিনেও আমি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করবো। আমি সাংবাদিকতা তাদের জন্যই করবো।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়