ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ওদেরও ইচ্ছে করে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওদেরও ইচ্ছে করে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে

আমিনুর রহমান হৃদয় : ‘আমার ইচ্ছে করে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে। কিন্তু সব লেখকের বই পড়তে পারি না। বইমেলায় আমাদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে খুব বেশি বই প্রকাশ হয় না। মেলার স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী আমাদের জন্য একটা আলাদা প্রয়াস। তারা প্রতিবছর বইমেলায় আমাদের জন্য বিভিন্ন লেখকের বই ব্রেইল আকারে প্রকাশ করে। মেলায় এসে এখানে বই পড়তে ভালো লাগে।’- কথাগুলো বলছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইরিন সুলতানা আঁখি। সে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। শুক্রবার একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে কথা হয় তার সঙ্গে।

আইরিন সুলতানা আরো বলেন, ‘বইমেলায় অসংখ্য প্রকাশনী। প্রতিদিন বিভিন্ন লেখকের বই প্রকাশ হচ্ছে। দৃষ্টিশক্তি না থাকায় সব বই আমরা পড়তে পারি না। আমার মতো দৃষ্টিহীনদের জন্য অন্য কোনো প্রকাশনী ব্রেইল আকারে বই প্রকাশের কথা ভাবে না।’

ব্রেইল আকারে প্রকাশিত জাফর ইকবালের লেখা ‘আখি এবং আমরা কজনা’ গল্পের বইটি হাতের আঙুল দিয়ে স্পর্শ অনুভব করে পড়ছিলেন আইরিন। তার পাশে বসে মালেকা বেগমের লেখা ‘ছোটদের সুফিয়া কামাল’ পড়ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ শাহিন মিয়া। তিনিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এই বইটিও ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে এসে বই পড়েন তিনি। বই পড়তে ভালো লাগে। শাহিন বলেন, ‘আমি চাই দৃষ্টিহীনদের জন্য বেশি বেশি বই ব্রেইল আকারে প্রকাশ হোক। আমাদেরও বিভিন্ন লেখকের বই পড়ার ইচ্ছে হয়।’



আইরিন ও শাহিনের মতো আরো অনেক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীকে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলে বসে ব্রেইল আকারে প্রকাশিত বই পড়তে দেখা যায়। তাদের প্রত্যেকের দাবি, ব্রেইল আকারে বেশি বেশি বই প্রকাশ করে যেন তাদের বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন লেখকের বই পড়া থেকে তারা বঞ্চিত হতে চান না।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা সংস্থাটির সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর বইমেলায় গল্প ও কবিতার বইসহ ১৪টি বই ব্রেইল আকারে তারা প্রকাশ করেছে। ২০১১ সাল থেকে এই প্রকাশনা সংস্থাটি ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করে আসছে। এখন পর্যন্ত ৫০টিরও অধিক বই ব্রেইল আকারে তারা প্রকাশ করেছে। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় স্টলটি চলছে। এই প্রকাশনীর সব বই দৃষ্টিহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সার্বজনীন এই বইমেলায় দৃষ্টিহীনদের অংশ নিশ্চিত করতে আমাদের এই উদ্যোগ। ব্রেইল আকারে বিভিন্ন লেখকের বই প্রকাশ করে দৃষ্টিহীনদের বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। তারাও বইমেলায় আমাদের স্টলে আসছে এবং বসে বসে বই পড়ছে।’



বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ডা. অনু হোসেন বলেন, ‘বইমেলায় দৃষ্টিহীনদের জন্য আরো প্রকাশনা সংস্থা থাকা উচিৎ। ব্রেইল পদ্ধতিতে বই প্রকাশ করে দৃষ্টিহীনদের পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলা একাডেমি সব সময় এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করে। বইমেলা সার্বজনীন মানুষের মেলা। সবাই মেলায় আসবে বই পড়বে, বই কিনবে।’

প্রসঙ্গত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা দানের জন্য লুই ব্রেইল একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা ব্রেইল পদ্ধতি নামে পরিচিত। এতে ছয়টি উঁচু বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে অক্ষর, সংখ্যা প্রভৃতি প্রকাশ করা হয়। একটি বিশেষ ছিদ্রযুক্ত ধাতব পাত অথবা টাইপরাইটার ব্যবহার করে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা যায়। আঙুলের স্পর্শ অনুভূতি ব্যবহার করে বই পড়তে হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়