ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘চামচঠুটি’ বিরল প্রজাতির বক

হাসনাত রনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চামচঠুটি’ বিরল প্রজাতির বক

ছবি: লেখক

হাসনাত রনি : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ শনিবার।  পদ্মায় পাখি পর্যবেক্ষণ এবং ফটোগ্রাফির জন্য সাতসকালে নৌকা নিয়ে রওনা হলাম । ঢাকা থেকে এসে অফিশিয়াল কাজের ফাকে সঙ্গী হয়েছেন বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব  শ্রদ্ধেয় জালাল আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালেহ রেজা এবং আমার পদ্মার নিত্যসংগী মাঝি অনিক।

প্রায় এক ঘণ্টা নৌকা চলার পরে এক জায়গায় দেখলাম অল্প কিছু হাঁস এবং চখা-চখি বসে আছে, পাশে এক ঝাঁক বড় আকারের বক, বকগুলো মাথা গুঁজে ঘুমাচ্ছে। বক দেখে আমাদের আর কোনো আগ্রহ থাকলো না, শুধুই রেকর্ড রাখার জন্য বেশ দূর থেকে কিছু ছবি নিলাম। তারপর নৌকা ঘুরিয়ে আবার চলতে থাকলাম। শীত বিদায় নিচ্ছে, একটু একটু গরম পড়া শুরু হয়ে গেছে। রাজশাহীর বার্ডিং সিজন প্রায় শেষ, এখন বোধহয় আর তেমন কোনো পাখির দেখা মিলবে না। ঘণ্টাখানেক নৌকা চলছে, তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পাখি দেখছি না । দু’একটা চখা-চখি, একটা পেরিগ্রিন ফ্যালকন, কিছু ছোট হাঁস, পানকৌড়ি আর ভুবন চিল। পাখি না পেলে নৌকায় একঘেয়ে লাগতে শুরু করে।



মনের মধ্যে বারবার একটা বিষয়ে খটকা লাগছে, বকগুলোর মাঝে কেমন যেন অস্বাভাবিকতা দেখেছিলাম! ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে বকের তোলা ছবিগুলো দেখার চেষ্টা করছি। প্রখর সূর্যের আলোয় ক্যামেরার ডিসপ্লে থেকে এরকম দূরের ছবি দেখা বেশ অসুবিধা। তারপরও কেমন জানি খটকা লাগছে, মনে মনে ভাবছি কোনো প্রজাতির বক কি এরকম মাথা গুঁজে থাকে? নাহ! ডিসপ্লেতে জুম করে যাচ্ছি হঠাৎ মনে হলো আরে, একটার ঠোঁট এত বড় কেন? সেই পুরনো অনুভূতি ফিরে এলো, বুঝতে পারছি এটা বক নয়, সম্ভবত বিরল প্রজাতির চামচঠুটি (Euresian Spoonbill)। নৌকা ঘুরাতে বললাম এবং নিশ্চিত হওয়ার জন্য জালাল স্যারকে তার তোলা ছবি দেখতে অনুরোধ করলাম। জালাল স্যারের ভালো ফোকাস হয়েছে, তার ক্যামেরায় দেখে আনন্দের বাঁধ ভেঙে গেল,  ইয়েস এটাই সেই বিরল চামচঠুটি!

নৌকা আবার ঘুরিয়ে নিয়ে এলাম, বসেই আছে সেই অতি বিরল পাখিগুলো। ১৬টির এক ঝাঁক! অবাক বিস্ময়ে দেখছি আর ক্যামেরার শার্টার টিপেই যাচ্ছি। পাখিগুলো বেশ সাহসী বলেই মনে হলো, বেশ কাছে থেকেই অনেক ছবি নিয়ে তাদের ওখানেই বসিয়ে রেখে ফেরার পথ ধরলাম। নতুন পাখি খুঁজে পাবার বিরল অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিলো সকল ক্লান্তি । জালাল স্যার, সালেহ স্যার, অনিক মাঝি সকলের মুখে চোখে আনন্দের দীপ্তি। হাজারো অশান্তি, অপ্রাপ্তি, অভাব-অনুযোগের মাঝে এই প্রশান্তির জন্যই বছরের পর বছর পাখির সঙ্গে আছি, থাকবো যতোদিন সুস্থ থাকি।



পাখিটার বৈজ্ঞানিক নাম: Platalea leucorodia. এটা জলচর পাখি। সাধারণত স্পেন, জাপান, উত্তর আফ্রিকা, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরী এবং ইংল্যান্ডের কিছু অংশে দেখা যায়। আমাদের দেশী বড় বক ( Great Egret ) এর চাইতে একটু বড় এবং বেশ শক্তপোক্ত গড়নের এই পাখিটা দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। অল্প পানি, লবণাক্ত পানির উপকূলে এদের দেখা যায়। পানির বিভিন্ন পোকা, জোঁক, ছোট ব্যাঙ, ছোট মাছ এবং কখনো কখনো শ্যাওলা বা পানির ছোট গাছ খেয়ে থাকে। মাটি থেকে ১৫-২০ ফিট উপরে ডালপালা দিয়ে বাসা বানায় এবং বাসা থেকে ৫-১০ কিলোমিটারের মাঝেই খাবার সন্ধান করে।

লেখক: পাখি বিষয়ক ফটোগ্রাফার এবং ব্যাংকার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়