ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঝুঁকির মুখে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর

বেনজির আবরার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝুঁকির মুখে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘর

বেনজির আবরার : ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। ডানপিঠে এই তরুণের নাম প্রথমেই উচ্চারিত হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের কথায়, সালাম-রফিক-জব্বার হয়ে। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বরে ফেনী জেলার দাগনভূইঁয়ার এক নিভৃতপল্লীতে জন্ম এই বীর সন্তানের। গ্রামের নাম লক্ষণপুর থেকে পরিবর্তিত হয়ে এখন সালামনগর।

আবদুস সালাম ৫২ এর সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের ‘পিয়ন’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় আবদুস সালাম ৩৬/বি নীলক্ষেত ব্যারাকে বাস করতেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে মিছিল করে, ঢাকায় চাকরিরত ২৭ বছরের যুবক সালাম মিছিলে যুক্ত হলে, শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া পুলিশের গুলিতে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দেশের এই সূর্য্যসন্তান। এরপর সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়া হয়। সে সময় সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, ভাই হাবিব উল্লাহসহ ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি, ফেনীতে শহীদ আবদুস সালামের বাড়িতে কথা হচ্ছিল সালামের পরিবারের জীবিত একমাত্র ভাই বয়োবৃদ্ধ আবদুল করিমের সঙ্গে। ঘুরে ঘুরে দেখালেন পুরো বাড়ি, জানালেন ভাইবোনদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন শুধু তিনি।

তিনি জানালেন, প্রশাসনের উদ্যোগে অমর একুশের সকালে ফেনীর দাগনভূইঁয়ার লক্ষণপুরে (বর্তমান সালামনগর) সালামের বাড়িসংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, এরপূর্বে সংলগ্ন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় ভাষাশহীদ আবদুস সালামের পরিবারের পক্ষ থেকে। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে মেলা আর স্থানীয় সংগঠনগুলোর আয়োজনে বিনামূল্যে রক্তপরীক্ষা।
 

                                            আবদুল করিম

এরপর প্রবেশ করি সালামের স্মৃতিতে নির্মিত জাদুঘর ও লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে, ভাষাশহীদ সালামের কিছু দুর্লভ ছবির সন্ধান পেলেও মিলল না তার কোনো স্মৃতির অংশ। কিছু বই সাজানো সেখানে। এ বিষয়ে শহীদ সালামের ভাই রাইজিংবিডিকে জানালেন, ‘ভাইয়ের কোনো স্মৃতি আমাদের সংরক্ষণে ছিল না, তবে রক্তমাখা একটি শার্ট ছিল সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি আরো জানালেন, ‘চাওয়া পাওয়ার অনেক কিছুই হয়তো আছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবির প্রতি সরকার সম্মান জানিয়েছে, আমাদের গ্রামের নাম হয়েছে সালামনগর, ফেনী স্টেডিয়ামের নাম ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়াম, আবদুস সালাম কমিউনিটি সেন্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম সালামের নামে।’

পরিবারের এবং ভাইদের মধ্যে শেষ ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনুরোধ জানালেন, ‘বাড়ি আসার পথটির অবস্থা পুরো খারাপ হয়ে আছে, অনেক দর্শনার্থীরা আসেন। যদি সংস্কার করা হতো, ভালো হতো।’ পাশাপাশি শহীদ সালামের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কলেজ নির্মাণের দাবি রয়েছে তার। এলাকাবাসীর দাবি, নদী ভাঙনে ঝুঁকির মুখে থাকা ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর বাঁচানো। ছোট ফেনী নদী লাগোয়া ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, সালামনগরে ভাষা শহীদ আবদুস সালাম প্রাথমিক বিদ্যালয়-এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীর গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে বলে তাদের ধারণা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়