ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মহাশ্মশানের কবির জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহাশ্মশানের কবির জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু : এখন ভাষার মাস। এ মাসেই বাংলাভাষার আরেক মহাকবি কায়কোবাদ এর জন্মদিন। ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের বছরে (১৮৫৭ সাল) ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে এই মহাকবির জন্ম।

কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি,/ মর্মে মর্মে সেই সুর,/ বাজিলো কি সুমধুর,/ আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধ্বমনি।/ কি-মধুর আযানের ধ্বনি’।/ এই কবিতাটিই কায়কোবাদকে চিনিয়ে দেয়। এমন অসংখ্য কবিতাসহ আধুনিক শুদ্ধ বাংলায় গীতিকাব্য, কাহিনী কাব্য, কাব্য উপন্যাস রচনা করে গেছেন তিনি।

মহান ভাষা আন্দোলনের আগের বছর ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন হয়। তিনি ৯৪ বছর জীবিত ছিলেন। ৮২ বছরই তিনি সাহিত্য চর্চা করেছেন।

তার প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। মুন্সী কায়কোবাদ নামে লিখতেন।  মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪) প্রকাশের পর তিনি মহাকবি উপাধিতে ভূষিত হন। বাংলা মহাকাব্যের দুঃসময়ে মহাকবি কায়কোবাদ এর ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য বাংলা সাহিত্যকে গৌরবোজ্জ্বল করে তোলে। ১৯৩২ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনের সভাপতি ছিলেনে এই মহাকবি ।

বাবা শাহামাতুল্লাহ আলী কোরেশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী। কায়কোবাদের পড়ালেখা ঢাকার পোগোজ স্কুল এবং সেইন্ট গ্রেগরি স্কুল, তারপর ঢাকা মাদ্রাসায়। প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত। পরীক্ষা দেননি, বদলে তিনি পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে গ্রামে ফিরে যান, সেখানে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন।

কায়কোবাদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী । অতি অল্প বয়সে তার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। মাত্র তেরো বছর বয়সে প্রথম কাব্য ‘বিরহবিলাপ’ প্রকাশিত হয়। এ কাব্যে তিনি পিতা-মাতার বিয়োগ ব্যথা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের জীবনের কষ্টকে পরম সহানুভূতির সাথে তুলে ধরেছেন। কাব্যটি প্রকাশিত হবার পর সর্বমহলে তিনি প্রশংসিত হন।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে :   কুসুম কানন, অশ্রুমালা, মহাশ্মশান, শিবমন্দির, অমিয়ধারা, শ্মশান ভস্ম, মহররম শরীফ, প্রেমের ফুল, প্রেমের বাণী, প্রেম-পরিজাত, মন্দাকিণী-ধারা ও গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ।

‘মহাশ্মশান’ কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ এবং একমাত্র সার্থক মহাকাব্য হিসেবে স্বীকৃত। ৭৯০ পৃষ্ঠার এ মহাকাব্যটিতে একদিকে স্বাজাত্যবোধ, দেশপ্রেম ও মুসলিমসমাজের ঐতিহ্য প্রকাশ করেছেন, পাশপাশি বিশ্বশান্তি ও মানবতার কল্যাণে জাতিধর্ম বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের সুসসম্পর্ক, পারস্পরিক সহানুভূতি এবং ঐক্য কামনা করেছেন।

সম্পূর্ণ অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত ‘মহাশ্মশান’ শুধু কায়কোবাদের নয়, মুসলিম কবি রচিত শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য হিসেবেও স্বীকৃত। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধাবলম্বনে রচিত এ কাব্যে জয়পরাজয় অপেক্ষা ধ্বংসের ভয়াবহতা অধিক বিধৃত হয়েছে। তাই মহাকাব্যটির নাম রাখা হয়েছে ‘মহাশ্মশান’। ‘মহাশ্মশান’ কাব্যের জন্য কবি কায়কোবাদ বাংলা সাহিত্যে মহাকবির সম্মানে অধিষ্ঠিত। এ কাব্যের জন্যে তিনি মাইকেল দি সেকেন্ড নামে অভিহিত হন।

ঊনিশ শতকের যুগস্রষ্টা বিপ্লবী কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা। পরবর্তীকালে তার ধারা অনুসরণ করে যারা মহাকাব্য রচনায় অগ্রসর হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কায়কোবাদ ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী ও অসাধারণ ।

নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়