ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যানজটে ভোগান্তি ভুলতে বাসে লাইব্রেরি

আমিনুর রহমান হৃদয় ও আবু রায়হান ইফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যানজটে ভোগান্তি ভুলতে বাসে লাইব্রেরি

ছবি সংগৃহীত

আমিনুর রহমান হৃদয় ও আবু রায়হান ইফাত: দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে ব্যস্ত এই নগরীতে। ক্রমাগত যানজট বৃদ্ধির কারণে অতিষ্ঠ নগরবাসী। কর্মস্থলে পৌঁছতে যানজট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে যানজট। আবার কাজ শেষে বাড়ি ফিরতেও যানজটে পড়তে হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে। ঢাকায় বসবাসকারী মানুষদের সিংহভাগই যাতায়াত করেন গণপরিবহনে। এজন্য যানজটে দিনের বেশির ভাগ সময় তাদের বাসেই কেটে যায়। তখন যাত্রীদের কেউ মোবাইলে গান শুনে, আবার কেউ ফেসবুকে চ্যাট করে, কেউ দু’চোখ বন্ধ করে কিছুটা ঝিমিয়ে সময়টুকু কাটানোর চেষ্টা করেন। 

ভাবুন তো, এই সময় কাটানোর জন্য যদি বই পাওয়া যেত তাহলে কেমন হতো? কিন্তু যানজটে বাসে পড়ার মতো বই যাত্রীরা পাবে কোথায়? হ্যাঁ, এবার যানজটে যাত্রীদের বাসে বসে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সম্প্রতি রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাজীপুর রুটে চলাচল করা ‘ভিআইপি-২৭’ পরিবহনের বাসগুলোতে ‘বইবন্ধু পরিবহন পাঠাগার’ যাত্রা শুরু করেছে। আর এই পরিবহন পাঠাগার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট (এসসিডি)-এর বইবন্ধু প্রকল্প সমন্বয়কারী ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা।
 


তিনি বলেন, ‘যানজটে বসে বিরক্ত যাত্রীদের সময় কাটাতে ভালো অনুষঙ্গ হতে পারে বই। তাই আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম বাসের ভিতরে যদি বই রাখা যায় তাহলে যানজটে বসে যাত্রীরা বই পড়ে সময় কাটাতে পারবে। এতে একদিকে তারা ভোগান্তির কথা ভুলে যাবে, অন্যদিকে বই পড়ে জ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে। অবশেষে আমার স্বপ্ন ও ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আমাদের আসল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। অধ্যয়নের বিকল্প নেই। আর এজন্য প্রয়োজন বই। আর এই বইয়ের যোগান দিতেই আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের একটি হলো গণপরিবহনে পাঠাগার করা।’

বাসের যাত্রীরা বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ পাবে। প্রাথমিকভাবে ভিআইপি পরিবহনের বর্তমানে ৮টি বাসে পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। কথা হয় বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। সাদ্দাম হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কর্মস্থলে প্রতিদিন আজিমপুর থেকে গাজীপুর যেতে হয়। অধিকাংশ দিন দীর্ঘ সময় যানজটে পড়তে হয়। খুব খারাপ লাগতো। বাসে এখন বই পড়ার সুযোগ থাকায় যানজটের কথা ভুলে গেছি। এটি আসলেই একটি ভালো উদ্যোগ।’
রোকেয়া বেগম নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘রাজধানীর প্রত্যেকটি পরিবহনে এই পরিবহন পাঠাগার চালু করা হলে যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠবে বই পড়ার অভ্যাস।’

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই যাতায়াত করি গণপরিবহনগুলোতে। যানজটে ভোগান্তিতে সময় কাটে আমাদের। এই সময়টুকু যাতে ভালোভাবে কাটে এজন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।’

সংগঠনটির প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পাদক রাশিব আহমেদ বলেন, ‘কিছু মানুষ বই দিয়ে ও সঙ্গে থেকে আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু মানুষ বলছে, এতো কিছু থাকতে এটা কেন? নিজেদের অর্থায়নে আজ এতদূর পর্যন্ত এসেছি। খুব ভালো লাগে যখন বাসের লোকজন বলে, নামাজ শিক্ষা বইটা খুব কাজে দেবে। আগে সঠিকভাবে পড়তে পারতাম না, এখন গাড়িতে বসেই বই পড়ে শিখে নেব।  কিংবা যখন কোনো যাত্রী বলে, শেক্সপিয়ারের বাংলা অনুবাদের হ্যামলেট গল্পটা দারুণ!’
 


রাশিব আহমেদ আরো জানান, ‘একটা বক্সে কিছু বই কম দেখে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলাম, আপনার বাসের বই তো অনেক মিসিং। সঙ্গে সঙ্গে বাসের ড্রাইভার বলল, না স্যার, বাসটা গ্যারেজে নিয়েছিলাম, গ্যারেজে যারা কাজ করে তারা পড়ার জন্য রেখেছে। গাড়ি আনার সময় আনতে ভুলে গিয়েছি, কাল সব বই নিয়ে আসবো।’

বইবন্ধু পরিবহন পাঠাগার উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনা রয়েছে, ভবিষ্যতে নৌপরিবহন, রেলগাড়ি, রেলস্টেশন এমনকি হাসপাতালেও পাঠাগার স্থাপন করার।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়