ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মাইক্রোফোন বদলে দিয়েছে জীবন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাইক্রোফোন বদলে দিয়েছে জীবন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : শৈশবেই মাইক্রোফোনে হাতেখড়ি তার। স্থানীয় নির্বাচনের মিছিলে মামার কাঁধে চড়ে মাইক্রোফোনে স্লোগান দিতেন তিনি। হয়তো তখন পরিবারের কেউ ভাবেননি এই মাইক্রোফোন একদিন তার জীবন বদলে দেবে। এনে দেবে অর্থ-সম্মান ও পুরস্কার।

কমিউনিটি রেডিও ‘সারাবেলা’র সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজ ফারুক জন্মেছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার প্রত্যন্ত আইহাই গ্রামে। বাবা রমজান আলী। মা যোহরা বেগম। বাবা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। একবার আগুনে পুড়ে পুঁজি হারান তিনি। একমাত্র সম্পত্তি বাড়ি বিক্রি করে তিনি পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যে। ফলে নিজেদের কোনো বাড়ি ছিল না, মাহফুজ ফারুকের শৈশব কৈশোর কেটেছে মামাবাড়ি।

মাহফুজ রাইজিংবিডিকে জানান, আমার শৈশব কষ্টের ছিল। আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি নেই, এই জিনিসটা আমাকে খুব ভাবাতো। খেলার মাঠ ছাড়া অন্য জায়গায় আমি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারিনি। তবে সব সময় স্বপ্ন দেখতাম আমাদেরও একদিন বাড়ি হবে।
 


শৈশবে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে থাকতেন হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেট খেলাসহ নানা খেলায়। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন বাজার থেকে আয়না, চিরুনি কিনে নিয়ে এসে খেলাধুলায় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। হাডুডু প্রতিযোগিতায় পুরস্কার থাকতো নারিকেল ও বাতাবি লেবু। সুযোগ পেলে বন্ধুদের নিয়ে করতেন চড়ুইভাতি। মাহফুজ ফারুকের পড়ালেখা শুরু হয় আশড়ন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণী থেকে তার লেখালেখির হাতেখড়ি। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় স্থানীয় পত্রিকায়। নিয়মিত চিঠি পাঠাতেন রেডিও চীন, ডয়েচে ভেলে, রেডিও তেহরান, ভয়েস অব আমেরিকায়। অষ্টম শ্রেণীতে নিজের লেখা কবিতা প্রথম আবৃত্তি করেন স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে। এই সময় তিনি ‘কিশোর আয়োজন’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন। কাজ করতেন থিয়েটারে। তখন মঞ্চ উপস্থাপনাতেও ডাক পড়ত তার।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় একাধিক বার রেজাল্ট খারাপ করায় পরিবার ও সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। সবাই ধরে নিয়েছিলেন ছেলেটির জীবন শেষ! পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বল্প পুঁজিতে একটি ব্যবসা ধরিয়ে দেবেন। কিন্তু মাহফুজের ভাবনা ছিল অন্যরকম। জীবনে তাকে কিছু একটা করতে হবে। চলে গেলেন নওগাঁ জেলা সদরে। মেসে থেকে একবেলা খাবারের বিনিময়ে টিউশনি করে পুরোদমে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করলেন। যুক্ত হলেন নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। এর ফাঁকে চলল পড়াশোনা। কাজ পেলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। পরে নওগাঁতে কমিউনিটি রেডিও ‘বরেন্দ্র রেডিও’র কার্যক্রম শুরু হলে হেড অব নিউজ হিসেবে যোগ দিলেন সেখানে। এ সময় প্রকাশিত হয় কমিউনিটি রেডিও নিয়ে তার প্রথম বই ‘কমিউনিটি রেডিও সাংবাদিকতা’। ২০১৮ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার দ্বিতীয় বই ‘কমিউনিটি রেডিও ব্রডকাস্টিং ছোটদের পাঠ’।

মাহফুজ ফারুক চমৎকার সব প্রোগ্রামের জন্য অর্জন করেন ইউনিসেফ কর্তৃক ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৫’, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক ‘গার্ল পাওয়ার মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০১৪’। দারুণ সব কাজ করায় বাংলাদেশের কমিউনিটি রেডিও অঙ্গণে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে তিনি কমিউনিটি রেডিও সারাবেলার সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। মাহফুজ ফারুক কমিউনিটি গণমাধ্যমের স্থায়ীত্বশীলতা নিয়ে কাজ করতে চান। কমিউনিটি গণমাধ্যমকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে চান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়