ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তিন বিঘা জমিতে একটি আমগাছের রাজত্ব!

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তিন বিঘা জমিতে একটি আমগাছের রাজত্ব!

আমিনুর রহমান হৃদয় : আনুমানিক ২১০ বছরেরও বেশি একটি পুরোনো আমগাছ। সূর্যাপুরী জাতের এই আমগাছটি ডালপালা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় তিন বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে। গাছটির তিন বিঘা জমিজুড়ে রাজত্ব দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে মানুষ।

দূর থেকে গাছটি দেখে কখনো মনে হতে পারে, এটি বটগাছ। আবার কখনো মনে হতে পারে, এটি একটি বিশাল আমের বাগান। তবে কাছে যেতেই এসব ধারণার বিপরীত চিত্র দেখা যাবে। একটি আমগাছ থেকেই বের হওয়া ডালগুলো চারদিকে ছড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করেছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামে এই সূর্যপুরী জাতের আমগাছটি রয়েছে কালের সাক্ষী হয়ে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আম গাছটির মোটা ডালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়লেও সেখান থেকে নতুন কোনো গাছ জন্মায়নি। গাছটিতে এবার আমও ধরেছে প্রচুর। ইতিমধ্যে তিন বছরের জন্য গাছটির সব আম বিক্রিও হয়ে গেছে। আম কিনে নিয়েছেন সোলেমান আলী। তিনি বলেন, ‘দেড় লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য গাছটি লিজ নিয়েছি। ফলন মৌসুমে গাছটি আমাকে দেখাশোনা করতে হয়। এ বছর ভালোই আম ধরেছে। তবে আম ঝরে পড়ছে। তারপরও আশা করছি প্রায় ৮০ মণের মতো আম পাওয়া যাবে।’

আম গাছটি কেন্দ্র করে পাশেই খাবারের দোকান দিয়ে খোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তির ভাগ্য বদলে গেছে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ দর্শনার্থীর পদচারণা ঘটে জানিয়ে খোরশেদ বলেন, ‘এখানে ঝালমুড়ি, বিস্কুট, চিপস, চানাচুরসহ হালকা নাস্তা জাতীয় খাবার বিক্রি করে আমার দৈনিক প্রায় হাজার টাকা আয় হয়। ঈদ, পূজা, পয়লা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনগুলোতে লোকের সমাগম বাড়ে। সেই সঙ্গে আমার বিক্রিও বেশি হয়। তখন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হয়।’ আগে ঢাকায় রিকশা চালালেও গত ৩ বছর থেকে তিনি আম গাছের পাশে দোকান দিয়েছেন। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে স্কুলে পড়ছে। সংসারে আগে অভাব থাকলেও বর্তমানে এখন ব্যবসার কারণে কোনো অভাব নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘আম গাছটির চারপাশে দৃষ্টিনন্দন করে পিকনিক স্পট হিসেবে গড়ে তুললে এলাকার আমার মতো যাদের অভাব আছে তারা বিভিন্ন দোকান দিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।’ পৈতৃক সূত্রে এই গাছের বর্তমান মালিক সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। কথা হয় নূর ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গাছটি কবে লাগিয়েছিলেন তার পূর্বপুরুষেরা সেই তথ্য কেউ বলতে পারেনি। তবে তিনি জেনেছেন এই গাছ সম্পর্কে তার দাদার কাছ থেকে। তার দাদা আবার তার দাদার কাছ থেকে। এভাবেই আনুমানিক ২১০ বছরেরও বেশি সময় কালের সাক্ষী হয়ে আছে গাছটি।

নূর ইসলাম বলেন, ‘সূর্যাপুরী জাতের এই গাছটির আম খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। আগে মৌসুমে ১০০ মণের বেশি আম পাওয়া গেলেও এখন ৭০ থেকে ৮০ মণ আম পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে আমের জন্য।’ গাছটি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিকনিক স্পট গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দ্রুত সময়ে দর্শনার্থীদের জন্য পিকনিক স্পট গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

ভিডিও দেখুন-







রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়