ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ককশিটেই জীবন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ককশিটেই জীবন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বড় আকারের ককশিট এনে করা হয় নানা রকম ডিজাইন। কখনো তৈরি করা হয় বাঘের মুখ। পুতুল, ঘোড়া, ঢোল, তবলা, হাতি, ফুল পাখিসহ নানা ডিজাইনের কারুশিল্প। তৈরি করা হয় ঈদ, পূজা, গায়ে হলুদ, নববর্ষের বিশেষ বোর্ড। রং-তুলির আচঁড়ে ককশিটের হস্তশিল্পগুলো হয়ে ওঠে আরো বর্ণিল।

সালাউদ্দিন দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে রাজধানীর শাহবাগে ককশিটের ব্যবসা করেন। তিনি ককশিটের ডিজাইন তৈরির কারিগর। সালাউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুর থানায়। তিনি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। পারিবারিক অভাবের কারণে পরে আর পড়ালেখায় আগ্রহ দেখাননি। এরপর চাকরির পালা, অনেক খোঁজাখুজিঁর পরেও পছন্দের চাকরি পাননি তিনি।

সালাউদ্দিন শখের বসে ছোটবেলায় আঁকাআঁকি করতেন। হাতের কাজ জানেন বলে পেয়ে যান দেয়ালে চিকা মারার চাকরি। দিন প্রতি তিনশ টাকার চুক্তিতে তিনি চিকা মারতেন। ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে রাজনৈতিক চিকা। তিন মাস এভাবে কাটিয়েছেন তিনি। পরে শাহবাগে ককশিট ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ককশিটের ব্যবসা। শাহবাগে নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম চন্দন আর্ট গ্যালারি। তিনি বলেন, পরের অধীনে কাজ করে মজা নেই। নিজের প্রতিষ্ঠানে নিজের পছন্দের কাজ স্বাধীনভাবে করার মজাই আলাদা।



ঢাকার আনন্দবাজার এলাকা থেকে কিনে আনেন ৩/৬ ফুটের ককশিট। ককশিটে ডিজাইন করে তৈরি করেন নানা রকম আইটেম। ডিজাইন করা শিল্পকর্মগুলোর দাম ৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। অর্ডারে ককশিটের আইটেম তৈরি করেন। অনেক সময় কমিশনে অনেক বড় কাজ হাতে নেন।

তিনি জানান, ককশিটের কাজ সারা বছর জুড়ে রয়েছে। ককশিটের কাজে বেশি ডাক পড়ে বিয়ের স্টেজ সাজানোর জন্য, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, পয়লা বৈশাখে বিশেষ আয়োজনের জন্য। ছোট্ট শিশুর জন্মদিনের ফ্রেম যেমন তৈরি করা হয়, তেমনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, সেনাকুঞ্জের মতো বড় আয়োজনেও থাকে ককশিটের ব্যবহার। ককশিটের ব্যবসা থেকে সালাউদ্দিনের মাসিক আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সালাউদ্দিন পরিবার সমেত থাকেন ডেমরা এলাকায়। তার দোকানে কর্মী রয়েছেন ৫ জন।

চন্দন আর্ট গ্যালারির একজন কারিগর মেহেদী হাসান। ৬ বছর ধরে ককশিটে রঙয়ের কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, হাতের কাজ করে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। ককশিটে রঙয়ের কাজে আয়ও বেশ ভালো।



ককশিট ব্যবসায়ী চন্দন আর্ট গ্যালারির মালিক সালাউদ্দিন ককশিটের দাম ও ককশিটের কারুশিল্প তৈরি সম্পর্কে জানান, ১০০টি ককশিটের পাইকারি দাম ৮০০০ হাজার টাকা। যা প্রতিটি শিটের দাম ৮০ টাকা দরে আনতে হবে। এ ছাড়া ব্রাশ ২ সেটের দাম পড়বে ৫০০ টাকা। রঙ প্লাস্টিক, ফ্লোরেশন, জল রঙগুলো ৯০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।

এ ছাড়া আইকা ২০০ টাকা, ককশিট কাটার জন্য ব্লেড ৫টি ১০০ টাকা এবং কৌটা বা পাত্র ৩০টি ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারেন। তবে ১০০টি ককশিট একসঙ্গে না কিনে অল্প করতে কিনতে পারেন। এই ককশিট পাওয়া যায় ঢাকার আনন্দবাজারে। আর অন্য জিনিসপত্রগুলো কিনতে পারবেন নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট থেকে। তবে গাউছিয়া মার্কেটে রঙ বিক্রি হয় পাউন্ড হিসেবে। আর পাউন্ড প্লাস্টিক রঙের দাম পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এর সঙ্গে মিকশ্চার হিসেবে ২ থেকে ৩টি রঙের ফ্লোরেসন্ট কিনতে পারবেন। এটা আবার তোলা হিসেবেও কেনা যায়। এর দাম পড়বে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়