ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মোনালিসা ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মোনালিসা ও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

শাহ মতিন টিপু : এ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্মটির নাম নিঃসন্দেহে ‘মোনালিসা’৷ ছবিটি এঁকেছিলেন ইতালির চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। আজ এই মহান শিল্পীর প্রয়াণ দিবস।

৪৯৯ বছর আগে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের ২ মে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি প্রয়াত হন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে যখন রাজা ফ্রান্সিস ১ম মিলান দখল করলেন তখন লিওনার্দো তার অধীনে কাজ শুরু করেন। তিনি তখন রাজার বাসভবনের পাশেই ‘ক্লস লুইস’ নামের ভবনে বসবাস করেন। এই ভবনেই ১৫১৯ সালে তিনি মারা যান।

ভিঞ্চির জন্ম ১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল। ভিঞ্চি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্য ভিঞ্চির পিতা ছিলেন মেসার পিয়েরো ফ্রুওসিনো ডি আন্তোনিও দ্য ভিঞ্চি এবং মা ছিলেন এক স্থানীয় নারী, ক্যাটেরিনা। ধারণা করা হয়, ক্যাটেরিনা ছিলেন মেসার পিয়েরোর অধীনস্থ এক দাসী। তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। ৫ বছর বয়সে দ্য ভিঞ্চি তার বাবার কাছে চলে আসেন এবং এর পর মায়ের সাথে তার যোগাযোগ ছিল খুবই কম।

ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’তে আমরা দেখতে পাই সেই রমণী, যার রহস্যে ভরা মুখশ্রী, মুখে রহস্যময় হাসি৷ সে যত না সুন্দরী, তার চেয়ে আরো আকর্ষণীয় তার মুখের ওই হাসিটুকু৷ মোনালিসার অভিব্যক্তি, মুখে রহস্যমাখা হাসি পৃথিবীর অসংখ্য চিত্রামোদিকে আজো অভিভূত করে রেখেছে৷

‘মোনালিসা’ ১৫০৩-১৫০৬ সালের মধ্যকার কোনো এক সময়ে আঁকা। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এটি। ভিঞ্চির প্রিয় এ ছবিটি বর্তমানে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। ছবিটি তার এতটাই পছন্দের ছিল যে, তিনি সব সময়ই ছবিটিকে তার নিজের সঙ্গে রাখতেন।

মোনালিসার রহস্যময় হাসি যেমন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তেমনি বারবার করা হয়েছে ছবিটির স্থান পরিবর্তন। লিওনার্দো যখন ছবিটি আঁকা শুরু করেছিলেন তখন তিনি ইতালির ফ্লোরেন্সে থাকতেন। এখান থেকে চলে যান ফ্রান্সে। সেখানে তিনি ছবিটি নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। ভিঞ্চির মৃত্যু হলে রাজা ফ্রাংকয়েস ছবিটি কিনে নেন। পরে লুইস-১৪ এর হাতে গেলে তিনি ছবিটিকে প্যালেস অব ভারসাইলেসে স্থানান্তর করেন। ফরাসি বিপ্লবের সময় ছবিটিকে ল্যুভর মিউজিয়ামে নেওয়া হয়। ছবিটি খুব অল্প সময়ের জন্য নেপোলিয়নের শোবার ঘরেও ছিল। পরে ছবিটিকে ল্যুভর থেকে ব্রেস্ট আর্সেনালে সরানো হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কয়েকবার মোনালিসার স্থান পরিবর্তন করা হয়।



তার আঁকা অন্য বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘দ্য লাস্ট সাপার’, ‘দ্য ভাত্রুভিয়ান ম্যান’, ‘লেডি উইথ অ্যান এরমাইন’ ইত্যাদি।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ঘরোয়াভাবে লেখাপড়া করলেও কোনো রকমের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তরুণ বয়সে চিত্রশিল্পী আন্দ্রে ডেল ভেরোচ্চির কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে তাকে পাঠানো হয়। এরপর দ্রুতই তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। বলা হয়ে থাকে, দা ভিঞ্চির ‘দা ব্যাপ্টিজম অফ ক্রাইস্ট’ এতটাই সুনিপুণ হয় যে তা দেখার পর ভেরোচ্চি জীবনের জন্য আঁকা ছেড়ে দেবার পণ করেন।

বলা হয়, তিনি নাকি খুব ধীরে আঁকতেন। এ কারণে তিনি অনেক চিত্র শেষ করে যেতে পারেননি।

২৪ বছর বয়সে লিওনার্দোর জীবনে কিছু আঘাত আসে। তাকে আরও কয়েকজন সঙ্গীর সাথে সমকামিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এটা তার জন্য খুবই মর্মান্তিক একটা ঘটনা ছিল। তার খ্যাতির কারণে অনেকে তার শত্রু হয়ে ওঠে, যারা তার ধ্বংস সাধনে উঠে পড়ে লাগে। তবে কোনো সাক্ষী যোগাড় করা যায়নি তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের।

তার নোটবই ভর্তি ছিল অনেক অনেক নোট দিয়ে। মারা যাবার সময় তার ৬,০০০ পাতার বেশি নোট ছিল। তবে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ধর্ম, ইতিহাস আর সাহিত্য নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়