ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সেরা ফিচার রাইটার পুরস্কার পেলেন মাছুম

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ২২ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেরা ফিচার রাইটার পুরস্কার পেলেন মাছুম

আমিনুর রহমান হৃদয় : সেরা ফিচার রাইটার পুরস্কার পেলেন স্টামফোর্ড সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ছাইফুল ইসলাম মাছুম। সম্প্রতি রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় ফলাবর্তন অনুষ্ঠানে তার হাতে সেরা ফিচার রাইটার ক্রেস্ট তুলে দেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী আব্দুল মান্নান।

ফিচার লেখায় প্রথম হয়ে পুরস্কার পাওয়ার পর কথা হয় ছাইফুল ইসলাম মাছুমের সঙ্গে। কথায় কথায় মাছুম জানালেন, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ছড়া-কবিতা লেখার মাধ্যমে লেখালেখিতে যুক্ত হন। ১০ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় স্থানীয় এক পত্রিকায় ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ পান। সুযোগ পেয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন একদিন বড় সাংবাদিক হবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখনো নানা বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছেন।

তার জন্ম নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরচেঙ্গা গ্রামে। বাবা আবুল কাশেম পেশায় সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা আর মা শাহনাজ বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। প্রান্তিক এলাকা থেকে উঠে আসা এই তরুণ সাংবাদিক এরই মধ্যে ফিচার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, রাইজিংবিডি ডটকমসহ দেশের শীর্ষ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে। সম্প্রতি মাছুম ভারতের জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের লেখা কবিতা পড়ে লেখালেখিতে আগ্রহ জন্মায় মাছুমের। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় নিজেও চেষ্টা করেন কবিতা লেখার। কবিতা লিখে তা পড়ে শুনাতেন বন্ধুদের। পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা লেখা চালিয়ে যান তিনি। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় হাতিয়া দ্বীপের কিছু তরুণ মিলে ‘স্বপ্নীল হাতিয়া’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। ছাইফুল ইসলাম মাছুম বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকায় নিজের লেখা কবিতা খামে করে চিঠি করে পাঠাতাম। পরবর্তীতে বন্ধুরা মিলে নিজেদের লেখাগুলো দিয়ে নিজেরাই ম্যাগাজিন পত্রিকা বের করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হঠাৎ একদিন স্থানীয় একটি পত্রিকায় ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ আসে। শুরু হয় সাংবাদিক হিসেবে পথ চলা। সাইকেল চালিয়ে ইউনিয়নের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটেছি খবরে সন্ধানে। সেই খবর পত্রিকায় ছাপা হলে নিজেই আবার পত্রিকা বিলি করেছি। এরপর হাতিয়ার কমিউনিটি রেডিও ‘সাগর দ্বীপ’ এর সঙ্গে কাজ করেছি।’
 


মাছুম পরিবার থেকে লেখালেখিতে তেমন উৎসাহ পাননি। তারপরও দমে যাননি তিনি। সাংবাদিকতাকে ভালোবেসে ফেলেন। যে কারণে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি সরাসরি রাজধানীতে চলে আসেন। এ প্রসঙ্গে মাছুম বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে খুশি হয়ে বাবা ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন। যদিও এসএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। ফলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকতাম। সেই সময়টাতে আমার সঙ্গী ছিল বই। বই পড়ে সময় কাটাতাম। পরিবার থেকে ধরেই নিয়েছিল আমার দ্বারা কিছু হবে না। বাবা স্থানীয় বাজারে একটি দোকানও ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। প্রায় সময়ই আমার জন্য বাবার কাছে অভিযোগ আসতো। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পত্রিকায় লিখলেই বাবার কাছে অভিযোগ চলে আসতো। অনেক বাধা পেরিয়ে সংবাদ করেছি। কিন্তু ভয় পাইনি। এলাকায় মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করেছিল এসব কারণে।’

শুধু সাংবাদকিতা নয় এর ফাঁকে ফাঁকে সামাজিক কর্মকান্ডেও অংশ নিয়েছে এই তরুণ সাংবাদিক। ‘আলোর মশাল’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলে এলাকার তরুণদের সঙ্গে নিয়ে হাতিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদক বিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন তিনি। হাতিয়া দ্বীপের নদী ভাঙ্গন রোধসহ বিভিন্ন সমাজিক আন্দোলনেও রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমানে বাংলাদেশ জার্নালিজম স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিজেএসসি)’র স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মাছুম। পাশাপশি টিআইবির ইয়েস মেম্বার, ব্রিটিশ কাউন্সিলের অ্যাকটিভ সিটিজেন মেম্বার ও উপকূলীয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘আলোকযাত্রা’ ঢাকা দলের টিম লিডার হিসেবে দ্বায়িত্বে রয়েছেন, প্রচার সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন স্টামফোর্ড মাদক বিরোধী ফোরামে। সাংগঠনিক কাজের কিছু স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। সবুজ উপকূল ২০১৬ বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সংগঠক সাফল্য স্মারক সম্মাননা পান এই তরুণ।

এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে জাগে মাছুমের। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সাংবাদিকতায় ভর্তি করালে কোনো কিছুই বৃথা যাবে না এমন আশ্বস্ত করেন তার বাবাকে। পরে সাংবাদিকতা বিভাগে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মাছুম। এবারো পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তার। সাংবাদিকতা করার সুযোগ চেয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় যোগাযোগ শুরু করেন। প্রথমেই কাজের সুযোগ করে দেন দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ, সমকালসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ফিচার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে রাইজিংবিডি ডটকমেই নিয়মিত ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবেদন লিখছেন তরুণ এই সাংবাদিক।

এবার স্টার্মফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার বিভাগের তৃতীয় ফলাবর্তনে পানাম সিটি নিয়ে ফিচার ‘বিলুপ্তপ্রায় শহরে খুলছে পর্যটনের জানালা’ লেখাটির জন্য সেরা ফিচার রাইটার পুরস্কার পেয়েছেন মাছুম। ছাইফুল ইসলাম মাছুম সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে ভবিষ্যত স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, ‘প্রান্তিক এলাকার ছিন্নমূল শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের কথাগুলো সংবাদের পাতায় তুলে ধরতে চাই। যারা অবহেলিত, উপেক্ষিত সেই সকল কণ্ঠহীন মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করে যেতে চাই।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়