ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বায়োস্কোপ: নিস্তরঙ্গ জীবনের বিনোদন

শিহাব শাহরিয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়োস্কোপ: নিস্তরঙ্গ জীবনের বিনোদন

ছবি: মোহাম্মদ আসাদ

|| শিহাব শাহরিয়ার ||

জলবিহীন নদীর যেমন তরঙ্গ নেই, তেমনি বিনোদনবিহীন মানুষের জীবনও নিস্তরঙ্গ। মানুষের জীবনে বিনোদনের জন্য তরঙ্গ তৈরি করার অনেক মাধ্যম রয়েছে; বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বাঙালির জীবনে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ লোক-সংস্কৃতি থাকার কারণে বাঙালির জীবনে বিনোদনের মাধ্যমও সমৃদ্ধ- যার একটির নাম বায়োস্কোপ। বায়োস্কোপ নিয়ে চমৎকার একটি গান রয়েছে: ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়/দেখেছিলাম বায়োস্কোপ/বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না।’

মনে পড়ে, সেই ছোটবেলার কথা। উনিশশ সত্তরের দশক। তখন আমার জন্মগ্রামে থাকি। গ্রামটি ছিল তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের একটি অজপাড়া গাঁ। ধুলাওড়া, পাখি ডাকা, ছায়াঘেরা, মায়াভরা অভাবী মানুষদের গ্রাম। আমাদের বাড়িরপাশেই ধুলোময় সড়ক। সড়ক ধরে মানুষের পাশাপাশি গরুর গাড়ি, মোষের গাড়ি, পালকি, বাইসাইকেল চলত। হয়ত বসে আছি ঘরের জানালার পাশে; হঠাৎই শুনতে পেলাম-‘কী চমৎকার দেখা গেল/ রহিম-রূপবান আইসা গেল/ ঢাকা শহর দেখেন ভালো/ কী চমৎকার দেখা গেল।’ অথবা ‘ওই দেখা যায়, কেমন মজা/ দ্যাখেন, তবে মক্কা-মদিনা/ তার পরেতে মধুবালা/ এক্কা গাড়িতে উত্তম-সুচিত্রা।’ এই আওয়াজ শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে লাফ দিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে উঠতাম। সচক্ষে দেখতাম একজন লোক এক হাতে খঞ্জনি, অন্য হাতে লাল কাপড় নিয়ে ছন্দভরা বাক্যে অবিরাম বলে যাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে একটি কাঠের বাক্স যেটি বায়োস্কোপ। এই বায়োস্কোপ দেখা কি যে আনন্দের!

বায়োস্কোপ একটি বাক্স, যার বাইরে দিয়ে মুড়ির টিনের মতো একাধিক খুপড়ি বা একটি জানালার মতো জায়গা, যেখানে চোখ লাগিয়ে দেখতে হয়। চোখ মেললেই বাক্সের ভিতর দেখা যায়- দূরের দিল্লি শহর, মক্কা-মদিনা নগরী, রাম-লক্ষণের যুদ্ধ, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, আফগানের যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ অনেক ঘটনাবহুল রঙিন ছবি, যা দর্শকপ্রাণে শিহরণ জাগায়, অন্য রকম অনুভূতির সঞ্চার করে। বিশেষ করে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের আধুনিক মাধ্যম ছিল এটি।

তখন গ্রামে নানা ধরনের মেলা বসত। বিশেষ করে বৈশাখী মেলা। এটিই সবচেয়ে বড় মেলা। মেলায় নানা রকম খাবার-দাবার, মাটির, বাঁশের এবং অন্যান্য নানান ধরনের জিনিসপত্রের দোকান থাকত। আর মেলার সবচেয়ে আকষর্ণীয় বিনোদন ছিল, নানা রকমের খেলা। যেমন ষাঁড়ের দৌড়, ঘোড়ার দৌড়, লাঠিখেলা, সাপখেলা, বানরখেলা, গাঙ্গিখেলা, পুতুল নাচনাগরদোলা ইত্যাদি। দেখা যেতো মেলার এক কোণায় বায়োস্কোপওয়ালা তার চিরাচরিত আওয়াজ দিয়ে দর্শকদের ডাকছেন, ছড়া-ছন্দে বলছেন আকর্ষণীয় বাক্য আর দেখিয়ে যাচ্ছেন বাক্সের ভিতরের রঙিন ছবি। খঞ্জনি আর গানের তালে তালে বাক্সের ভেতরেও পাল্টে যায় ছবি। আর তা দেখে যেন গল্পের জগতে হারিয়ে যায় ছেলে বুড়ো সবাই। এ কারণে দর্শক ভিড় জমায় চতুর্দিকে। একজনের পর একজন; এক পয়সা, দুই পয়সা কিংবা তিন পয়সা দিয়ে দেখছে। ঘাড় নিচু করে, কোমার বাঁকিয়ে, দুই চোখের দুই পাশে দুই হাত রেখে কয়েক মিনিট ধরে একটানা দেখছে দিল্লি, ঢাকা, মুজিব, মক্কা-মদীনা আর কান দিয়ে শুনছেবায়োস্কোপওয়ালার ছান্দসিক বাক্য-এই দ্যাখেন ভাই ঢাকা শহর, এই দ্যাখেন ভাই দিল্লি ইত্যাদি।

এই যে দেখা, এর মজা আলাদা! বাংলার গ্রামীণ নিস্তরঙ্গ জীবনের বায়োস্কোপ নানা বয়সের মানুষকে আনন্দ দিতো, আলোড়িত করতো সেই সময়। তবে গ্রামেই শুধু নয়, নগর জীবনেও বায়োস্কোপ আনন্দ দান করতো। আধুনিক ঢাকার যারা গোড়াপত্তন করেন, সেই নওয়াবদের বাড়িতেও বায়োস্কোপ দেখানো হতো। তাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বায়োস্কোপের রূপছায়াময় বিবরণ পাওয়া যায়। সেই সময়কার ঢাকায় নানা ধরনের মেলা হতো, খেলাধুলা হতো এবং বায়োস্কোপও হতো।

পত্রিকার তথ্য মোতাবেক জানা যায়, কলকাতার একটি স্বদেশী মেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, যেখানে বায়োস্কোপ ছিল দর্শকদের জন্য। সেটি ১৯৩১ সালের কথা। সে-বছর ১৬ অক্টোবর ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় এ উপলক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনের ভাষা ছিল এরকম: ‘স্বদেশী মেলা/ ৩৭ নং বহুবাজার স্ট্রীট (শিয়ালদহ)/ অদ্য কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথের শুভ পদার্পণ হইবে। অদ্য শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর/ মেলা বিকাল ৩টায় খুলিবে/ ৬টায় ম্যাজিক/ ৭টায় থট্ রিডিং ও ভেন্ট্রিলাকুইজম।/৮টায় বায়স্কোপ/ প্রবেশ মূল্য তিন আনা।’

আবার দেখি, কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘গৃহদাহ’ উপন্যাসের এক জায়গায় বলেছেন, ‘দিন বারো কাটিয়া গিয়াছে। কেদারবাবুর ভাবগতিক দেখিয়া মনে হয়, এত স্ফূর্তি বুঝি তাঁহার যুবা বয়সেও ছিল না, আজ সন্ধ্যার প্রাক্কালে বায়োস্কোপ দেখিয়া ফিরিবার পথে গোলদীঘির কাছাকাছি আসিয়া তিনি হঠাৎ গাড়ি হইতে নামিতে উদ্যত হইয়া বলিলেন, সুরেশ, আমি এইটুকু হেঁটে সমাজে যাব বাবা, তোমরা বাড়ি যাও, বলিয়া হাতের ছড়িটা ঘুরাইতে বেগে চলিয়া গেলেন।’

এই যে রবীন্দ্র-শরৎয়ের কালেও বায়োস্কোপের স্বর্ণযুগ ছিল, সেই বায়োস্কোপ বাঙালির প্রাণের মাধ্যম। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের মানুষের। সুতরাং এর সাথে এ অঞ্চলের মানুষদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। গ্রামীণ প্রবীণ ব্যক্তিদের তো নয়ই। তখন জনপদজুড়ে নানা বিনোদনের আয়োজনে মানুষ মুখর ছিল। নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে বিশেষ করে যারা শহরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী জীবনযাপন করে অভ্যস্ত কিংবা যাদের জন্ম এইমাত্র একযুগ আগে তাদের কাছে হয়তো হাস্যকর এক বোকা বাক্স মনে হবে। কিন্তু বায়োস্কোপ মোটেও হাস্যকর কোনো বস্তু ছিল না কিংবা ছিল না কোনো বোকা বাক্স! প্রকৃতপক্ষে বায়োস্কোপ গ্রামবাংলার সিনেমা হল। রং-বেরঙের কাপড় পরে, হাতে ঝুনঝুনি বাজিয়ে বিভিন্ন রকমের আলোচিত ধারা বর্ণনা করতে করতে ছুটে চলত গ্রামের স্কুল কিংবা সরু রাস্তা ধরে। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছন পেছন বিভোর স্বপ্ন নিয়ে দৌড়াত গ্রামের ছেলেমেয়েরা। বায়োস্কোপওয়ালার এমন ছন্দময় ধারা বর্ণনায় আকর্ষিত হয়ে ঘর ছেড়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ছুটে আসত বায়োস্কোপের কাছে। একসাথে সবাই ভিড় জমালেও তিন কী চারজনের বেশি দেখতে না পারায় অপেক্ষা করতে হতো অন্যদের। সিনেমা হলের মতো এক শো, এরপর আবার আরো তিন বা চারজন নিয়ে শুরু হতো বায়োস্কোপ। বায়োস্কোপ দেখানো শুরু করলেই ‘কী চমৎকার দেখা গেল’ বলে ফের শুরু হতো বায়োস্কোপওয়ালার ধারাবিবরণী। আর এই বায়োস্কোপ দেখানোর বিনিময়ে দুই মুঠো চাল কিংবা দুই টাকা নিয়েই মহাখুশি হয়ে ফিরে যেত বায়োস্কোপওয়ালা।

এই যে প্রত্যন্ত গ্রাম এবং নগরজুড়ে এক সময় প্রচলন ছিল বায়োস্কোপের, যেটি কাঠের বাক্সে চোখ লাগিয়ে গানের তালে ছবি দেখার দৃশ্য নগরজীবনে এখন আর চোখেই পড়ে না। বায়োস্কোপ, বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের এক নাম। বর্তমান সময়ে গ্রামবাংলায় বায়োস্কোপ এমনই বিরল যে, জাদুঘরে রেখে দেয়ার জন্যও অন্তত একটি বায়োস্কোপ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বাংলার বিনোদনের এই লোকজ মাধ্যম। টিভি আর আকাশ সংস্কৃতি স্যাটেলাইটের সহজলভ্যতার কারণে আপনা-আপনি উঠে গেছে বায়োস্কোপ। বাংলাদেশেও আকাশ সংস্কৃতির দাপট এখন। ফলে সংস্কৃতি ও বিনোদন এই চিরচেনা মাধ্যম বায়োস্কোপ থাকলেও এটিকে দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি নতুন প্রজন্মের। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে বিনোদন মাধ্যমগুলো প্রত্যেকের হাতের মুঠোয় চলে আসায় বায়োস্কোপের কলাকুশলী এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ পেশার সাথে জড়িত যারা মাঠে ঘাটে প্রাচীন বায়োস্কোপ ব্যবসা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো তাঁরা এখন হারিয়ে গেছে। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এই ব্যবসার কদর নেই। মেলায় বসলেও অনেকে চেনেন না বায়োস্কোপ কি জিনিস। আগামী প্রজন্ম হয়তো জানবেনা বায়োস্কোপ কি ছিল? কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে বায়োস্কোপ; নতুন প্রজন্ম শুনবে বায়োস্কোপের গল্প।

আজকাল প্রযুক্তির কৃত্রিমতার কাছে অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। এই হারিয়ে যাওয়া শৈল্পিক ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়োজন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। গ্রামবাংলার সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে বায়োস্কোপ দেখানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে নতুন করে। এখন আমরা সবাই অনেক সামনে এগিয়ে এসেছি সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে, কিন্তু পেছনে ফেলে এসেছি আমাদের ঐতিহ্য। গুরুজনেরা যে জিনিসটি দেখে আনন্দ পেতেন আমাদের মতো বয়সে, সেই জিনিসের কথা শুনলে আমরা এখন হেসে উড়িয়ে দেই।  এভাবেই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে অতীতের সেই বোকা বাক্স যা এক সময় বাংলার শিশু, কিশোর, নারী, বৃদ্ধসহ সকলের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। অথচ এখন জাদুঘরে রাখার জন্যও কোনো বায়োস্কোপের সন্ধান পাওয়া যাবে না। ভরদুপুরের আলস্য ভাঙাতে কাউকে চিৎকার করে বলে উঠতে শুনি না-কি চমৎকার দেখা গেল!

বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম হিসেবে আমরা কি বাংলার ঐতিহ্যগুলোকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারি না? হয়তো পারি না। কিন্তু আজও, আমাদের বাবা-মা এই বয়সে এসেও টের পান তাঁদের বুকের গভীরে কোথায় যেন অমলিন রয়ে গেছে সেই রঙিন ছবিগুলো। টুকরো টুকরো অনেক ছবি ভেসে ওঠে তাঁদের চোখে। একসাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ের জটলা। উৎসুক হয়ে বসে আছে তারা। চারটি আয়নায় চোখ লাগিয়ে শিশু-বুড়ো সব বয়সী মানুষ ছবি দেখার দৃশ্য উপভোগ করছে। সঙ্গে সেই চিরচেনা আওয়াজ- কি চমৎকার দেখা গেল। তাঁরা আনমনে রাস্তায় চলতে চলতে আজও কোনো কিশোরের মুখে ভো-কাট্টা শুনে চমকে যান। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন কাটা ঘুড়ি ভেসে ভেসে যাচ্ছে। তাঁরাও যেন চলেন ঘুড়ির সঙ্গে। এক সময় পৌঁছে যান মেলার সেই মাঠে। যেখানে রয়েছে বায়োস্কোপ। যেখানে বানরওলা সজোরে ডুগডুগি বাজিয়ে খেলা দেখাচ্ছে।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিনোদনের এই লোকজ মাধ্যম। তবুও কোথাও না কোথাও দু’একজন রয়ে গেছে। সেই দু’একজন অকেজো হিসেবে ছুড়ে দেননি বায়োস্কোপকে। জড়িয়ে ধরে রেখেছেন সন্তানের মতো। মানুষ আজ বায়োস্কোপ না দেখলেও যখনই তার মন চায় তিনি গ্রামের সরু রাস্তা ধরে বায়োস্কোপ নিয়ে ছুটে চলেন। তিনি জানেন এখন আর কেউ টাকা দিয়ে দেখবে না, তারপরও তিনি বায়োস্কোপ নিয়ে বের হন। আবার দু’একজন আছেন যারা নির্দিষ্ট মৌসুম ছাড়া বায়োস্কোপ দেখান না। পেশা বদল করে প্রায় সবাই অন্য পেশা গ্রহণ করেছেন। রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ এমন একটি কি দুটি জেলায় দু’একজন আছেন। এদের মধ্যে রাজশাহীর আবদুল জলিল মণ্ডল একজন। তিনি রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানার চায়ের শারা গ্রামের মৃত বকশি মণ্ডলের ছেলে। বাবা বকশি মণ্ডল ৪০ বছর এ পেশায় জড়িত ছিলেন। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে ১০-১২ বছর বয়সে তিনি এ পেশায় আসেন। এরই মধ্যে ৩০ বছর পার করেছেন তিনি। এ পেশার রোজগার দিয়ে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে তার দিন চলে যাচ্ছে। বায়োস্কোপ পেশায় তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন। একটা সময় ছিল যখন গ্রামগঞ্জের পথেঘাটে হাটবাজারে তিনি ও তার বাবা বায়োস্কোপ দেখিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। তখন ধান, চাল ও অর্থের বিনিময়ে বায়োস্কোপ দেখাতেন। বায়োস্কোপ দেখানোর বিষয়বস্তুতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে বিভিন্ন প্রেমকাহিনী, তারপর যুদ্ধ, বিশ্বের দর্শনীয় স্থান, ধর্মীয় বিষয় ও রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে বায়োস্কোপ দেখানো হতো। এজন্য তাদের অনেক বেশি জানতে হয়। তারপর সেটা দেখানোর সময় এক এক করে ছন্দ মিলিয়ে বলতে হয়। তাহলেই দর্শক বায়োস্কোপ দেখতে আগ্রহী হয়। তার বাক্সে একসাথে ছয়জন দর্শক বায়োস্কোপ দেখতে পারে। তাঁর কাছে জানা যায়- এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন ও হাতে মোবাইল ফোন চলে আসায়, আগের মতো আর এর প্রতি দর্শকের চাহিদা নেই। তবে অনেকেই কৌতূহল নিয়ে এটি দেখতে এগিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মেলায় বায়োস্কোপ প্রদর্শন করেন।

এক যুগ আগেও বায়োস্কোপের যে জৌলুশ ছিল, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় তা আজ বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু জলিল মণ্ডল অকেজো জিনিস হিসেবে ছুড়ে ফেলেননি বায়োস্কোপকে। জড়িয়ে ধরে রেখেছেন সন্তানের মতো। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নীল দেশের সক্ষমতা অর্জন করেছে। ফাইভ জিতে যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে, এমতাবস্থায় অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রযুক্তির মহাসড়কে হাঁটা অবস্থায় পুরনো বিনোদন মাধ্যম কি টিকে থাকবে? যেখানে মানুষের হাতে হাতে ডিভাইস, যে ডিভাইসের মাধ্যমে সেকেন্ডে সেকেন্ডে দেখছে পৃথিরীর সব এবং সব। সেখানে বায়োস্কোপের কাল শেষ! শেষ নয় কি? প্রশ্ন শেষ হতে দেয়া কি ঠিক? নতুন আঙ্গিকে, নতুন মাত্রায় বাংলার নিজস্ব এই বিনোদন মাধ্যম বায়োস্কোপকে সকলের প্রচেষ্টায় টিকিয়ে রাখা দরকার।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়