ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘পলাশ রাঙা’ স্কুল

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘পলাশ রাঙা’ স্কুল

আমিনুর রহমান হৃদয় : রেলস্টেশনের পাশেই একটি বস্তি। সেখানে একটি বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে একসঙ্গে পড়াশোনা করছে পনের থেকে বিশ জনের একটি শিশুর দল। ওদের কারো বয়স ছয় বছর, কারো সাত, আবার অনেকের আটও। ওদের অনেকের বাবা-মা শুধু নিজের নামটিই লিখতে জানেন। ভালো মতো পড়তেও পারেন না। এমন পরিবারের সন্তান এইসব শিশুরা। ওদের কারো বাবা-মা কাজ করেন দিনমুজুরের, কেউ চালায় ভ্যান-রিকশা, কেউবা করেন হোটেল শ্রমিকের কাজ। আবার অনেকের বাবা-মা ভিক্ষাও করেন।

অস্বচ্ছল পরিবারের এই শিশুদের অনেকের স্বপ্ন একদিন তারা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিক্ষক হবেন। এদের সবাই পড়াশোনা করছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওদের বাবা-মা স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাইরে বাড়িতে কোনো পড়াশোনার দিকনির্দেশনা বা সাহায্য করতে পারে না। বাড়িতে শিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়ানোর মতো সামর্থ্যও নেই তাদের। অস্বচ্ছল পরিবারের এই শিশুদের পড়ালেখায় দিকনির্দেশনা ও সাহায্য করতে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রেলস্টেশনের পাশেই ‘পলাশ রাঙা’ নামে একটি স্কুল গড়ে তুলেছেন কলেজ ও মাধ্যমিক পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাঠদান করান তারা।

স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ও মাধ্যমিক পড়ুয়া তিন জন শিক্ষার্থীদের কেউ পাঠ্য বইয়ের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওই শিশুদের, আবার কেউ হাতের লিখা শিখাচ্ছেন। কথা হয় কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীর সঙ্গে। রহিম বাদশা নামে এক শিশু জানায়, ‘বিকালে এখানে এসে পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। কোনো পড়া বুঝতে না পারলে ভাইয়ারা শিখিয়ে দেয়।’ সবুজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী সীমা আকতার দোলা। সে বলে, ‘আমাদের স্কুলের পড়াগুলো এখানে আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে বাবা-মা বুঝিয়ে দিতে পারে না। তাই আমি এখানে এসে ভাইয়াদের কাছে পড়া বুঝিয়ে নিই।’ প্রায় একই রকম কথা জানায় আরো কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী।



এই স্কুলটি পরিচালনা করছেন সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শুভ শর্মা। তিনি বলেন, ‘অস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা টাকা দিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে পারে না। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই মেধাবী। বিদ্যালয়ের বাইরে যদি তাদের একটু সঠিক ভাবে পড়াশোনায় যত্ন নেয়া যায় তাহলে তারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে। এই ভাবনা থেকেই আমার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আমি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পড়ালেখা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিই। আমাদের পড়াশোনার ফাঁকে আমরা এই স্কুলটি পরিচালনা করছি।’

অপূর্ব শর্মা অপু, হৃদয় ইসলাম, সজল আহমেদ, সাজু ইসলাম, আল-আমিন, লিমন, অনিক সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ‘রাঙা পলাশ’ স্কুলটিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান দিচ্ছেন। এসব শিশুদের পাঠ্য বইয়ের পড়াশোনার বাইরে সপ্তাহে একদিন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ল্যাপটপের ছোট পর্দায় দেখানো হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে নাচ, গান, খেলাধুলারও আয়োজন করা হয়। মাঝে মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও বিতরণ করা হয়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুন ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়