ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিশ্বকাপ রংধনুতে নেই নীল রঙ

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৪ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্বকাপ রংধনুতে নেই নীল রঙ

মুহাম্মদ মেহেদী হাসান : রবার্তো ব্যাজ্জিও যদি সেদিন পেনাল্টি শটটা মিস না করতেন তাহলে হয়তো এখন ইতালি হতো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন, আর ব্রাজিল চার বারের। হয়নি। তাতে কি আসে যায়। চারবার বিশ্বকাপ ঘরে তোলা তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়! বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমনটা আর কটা দেশই বা করতে পেরেছে। জার্মানি। আর ব্রাজিলের পাঁচ। এইতো। আর সেই ইতালি নেই রাশিয়ায়। বিশ্বকাপ যেন অভূতপূর্ব বিভীষিকা!

আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাশিয়ায় বেজে উঠবে সুরের মূর্ছনা। আর সে সুরের ঢেউয়ে মাতবে গ্যালারী। লাল-সবুজ-হলুদ কতো রঙে। কিন্তু থাকবে না সেই চির চেনা নীল রঙটি। তারপরও চলবে বিশ্বকাপ। তবে কলোসিয়ামের যুদ্ধ ময়দানে আজ রোমান গ্ল্যাডিয়েটররা থাকবে মাথানত করে। মিটিমিটি হাসিতেও বিষাদ ছড়িয়ে দিবে মোনালিসা। পিয়েৎসার ঝরনা যেন শুকনো মরুভূমি।

এ যেন এক অপার শূন্যতা। এ শূন্যতা পুরো মাস জুড়ে চিরনবীন রূপে থাকবে সদা বিরাজমান। যে রংধনুতে নীল রঙই নেই, তাকে কি আর রংধনু বলা যায়। রংধনুর হারানো রঙটা আজ কোটি ভক্তের মনে। বলা হয়ে থাকে কষ্টের রঙ নীল। মানে এ নীল বেদনা বয়ে বেড়াতে হবে তাদের। হয়তোবা সাময়িক। কিন্তু কম করে হলেও চারটি বছর। আবার যে বিশ্বকাপ সেই ২০২২ সালে।

এমনটা আর কবে দেখেছে পৃথিবী? সেই ১৯৫৮ সালে। সুইডেন বিশ্বকাপে সেবার বাছাই পর্ব উতরাতে পারেনি ইতালি। মাঝে কাটলো ৬০টি বছর। পাঁচটি যুগ পর সেই সুইডেন নামটাই দুঃখ বাড়ালো। বাছাই পর্বে তাদের বেড়াতেই যে আটকে গেছে আজ্জুরিরা। ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরোয়ার্ড সব বিভাগে পিছিয়ে থেকেও রাশিয়ায় বীর দর্পে খেলবে সুইডিশরা। আর বুফোন-ডি রসিরা তখন দর্শক।



কিন্তু প্লে অফের সে ম্যাচে কি করেনি ইতালি। প্রথম লেগে ০-১ গোলে হার। তাই মূল পর্বে যেতে হলে ২-০ গোলে জিততে হতো তাদের। ১-০ গোলে জিতলে হতো টাই ব্রেকার। গোল বারের নিচে অতন্দ্র প্রহরী জুয়ানলুইজি বুফনের বিশ্বস্ত হাত থাকায় বাড়তি আত্মবিশ্বাস তো ছিলই। কিন্তু সে ম্যাচে যে গোলই করতে পারেনি তারা। একের পর এক মুহুর্মুহু আক্রমণে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা সুইডিশদের। কিন্তু ভাঙলেও মচকায়নি। সানসিরোর ফুটবল কলোসিয়াম থেকে হাসি নিয়েই ফিরেছিল তারাই।

তারকা বিহীন সুইডেন ঠিকই রুখে দেয় ইতালিয়ানদের আক্রমণ। গুনে গুনে ২৭ বার। বারে ২৭টি শট নেওয়ার পরও একটা গোল আদায় করতে পারেনি নীল জার্সি ধারীরা। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার আর ৭৬ শতাংশ বল নিজেদের পায়ে রেখে কেবল পরিসংখ্যানকেই উন্নত করেছে। প্রথম লেগের ০-১ গোলের হারই কাল হয় তাদের। বিশ্বকাপের মাসটা তাই আজ্জুরিদের গভীর শোকের মাস।

হয়তো এমনটাই চেয়েছিল বিশ্বকাপ। কারণ ভুল থেকে যে শিক্ষা নিতে পারছিল না আজ্জুরিরা। শেষ দুই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ। অশনি সংকেতের ইঙ্গিতটা তো আগেই পেয়েছিল। কিন্তু তারপরও তো ঢেলে সাজাতে পারেনি। উল্টো হাই প্রোফাইল কোচ অ্যান্তিনিও কন্তের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় ৭০ বছর বয়সী বুড়ো পিয়েরো ভেঞ্চুরাকে। যার জীবনে সাফল্য বলতে গেলে ১৯৯৪ সালে লিসে'কে সিরি এ’তে উঠাতে পারা। তার হাতে দায়িত্ব দেওয়াটাই কি ভুল ছিলো না তাদের?

আর ইতালিয়ানদের চিরাচরিত ঐতিহ্যও যে আজ বিলীন প্রায়।আধুনিক আগ্রাসী ফুটবলের ছোঁয়ায় না পেরেছে তা আঁকরে ধরতে। না পেরেছে ঐতিহ্যবাহী সেই রক্ষণাত্মক ফুটবলটা খেলতে। ফ্রাঙ্কো বারোসি, জিউসেপ্পে বার্গোমি, পাওলো মালদিনির মতো ডিফেন্ডার যে দেশে জন্মেছিল, সে দেশের ডিফেন্স আজকাল সহজেই ভেঙে দেয় কোস্টারিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্লোভাকিয়া, প্যারাগুয়ের মতো দুর্বল দেশগুলো।



শুধু বারোসি-মালদিনিরা নয়, ইতালিতে জন্মেছেন জিউসেপ্পে মেয়াসসা, লুইগি রিভা,পাওলো রসসি, সালভাতর শিলাচ্চি, রবার্তো ব্যাজ্জিও, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো, ফ্রান্সেসকো টট্টির মতো স্ট্রাইকাররা।রক্ষণাত্মক ফুটবলের মাঝে একটা আক্রমণকেও তারা কাজে লাগাতে পারতেন। কিন্তু হালে নেই কোন মানসম্মত কোন স্ট্রাইকার। ধাক্কাটা যে তাদের প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু এ ধাক্কাটা কি শুধুই ইতালিয়ানদের? ফুটবল বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আজ্জুরিদের কোটি কোটি ভক্ত। যাদের কাছে ইতালিয়ান ফুটবল মানে ভালোবাসার অন্য নাম। তাদের অব্যক্ত হাহাকার শুনতে পাচ্ছে কি বিশ্বকাপ?



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৮/মুহাম্মদ মেহেদী হাসান/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়