ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কারান্তরীণ শেখ হাসিনা ও একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ১৬ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কারান্তরীণ শেখ হাসিনা ও একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি

শাহ মতিন টিপু : ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কারান্তরীণ দিবস। ‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও জরুরি অবস্থা জারির ছয় মাসের মধ্যে ২০০৭ সালের এইদিনে ভোররাতে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সেদিন শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডিস্থ সুধা সদনের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের একটি জীপে করে ঢাকার সিএমএম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতির মুখেও দলের নিবেদিত কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। আদালত প্রাঙ্গণে প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে সমবেত হন হাজারো কর্মী-সমর্থক।

এই গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গতবছর নিউইয়র্কে এক স্মৃতিচারণ সভায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠজন প্রাক্তণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘১/১১ এর সেনাসমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো। ১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকার আসার পর আমরা শুনেছিলাম মাইনাস টুর কথা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ছিলো মাইনাস ওয়ান।’

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি এবং জামাত। বিএনপি এবং জামাত পুরো বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি করে দেয়। বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করে। গ্রেপ্তার করতে হলে করতে হবে খালেদা জিয়াকে। কিন্তু ৭১ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ন্যায় গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনাকে।’

গত বছর টিএসসিতে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতাও প্রাক্তণ মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘১৬ জুলাই এদেশের জন্য একটি কালো অধ্যায়। সেদিন মিথ্যা মামলা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করে এদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চেয়েছিল স্বৈরতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’

শেখ হাসিনা কারাগারে আটক ছিলেন প্রায় ১১ মাস। জাতীয় সংসদ ভবনের চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে শেখ হাসিনা মুক্তি পান ২০০৮ সালের ১১ জুন। দীর্ঘ ১১ মাস কারাগারে অন্তরীণ থাকাবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিভিন্ন মহলের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার আগে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে তার সংগ্রামের কথা বলেন। বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এবং মাথা নত না করার।

গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার দিবসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার ফেসবুক প্রোফাইলে প্রধানমন্ত্রীর সেই হাতে লেখা চিঠিটি শেয়ার করেন। প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন:

প্রিয় দেশবাসী,

 

আমার সালাম নেবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসীর ওপর আমার ভরসা।

আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব।আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

শেখ হাসিনা




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়