ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সবুজ ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে ‘নগরকৃষি’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবুজ ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে ‘নগরকৃষি’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ঢাকা শহর যখন বসবাসের অযোগ্য হিসেবে খেতাব পাচ্ছে, মানুষের স্রোতে আর নগরায়নের মিছিলে হারিয়ে যেতে বসেছে সবুজের শেষ চিহ্নটুকুও। ঠিক তখন সবুজ ঢাকা গড়তে কাজ করছে তরুণদের সংগঠন ‘নগরকৃষি’।

সংগঠনটি রুক্ষ শহরে সবুজ বিপ্লব গড়তে বাসার ছাদে, বারান্দায়, সিঁড়ির কিনারায়, জানালায়, এমনকি পড়ার টেবিলেও চাষ করছে বৃক্ষ। নগরকৃষির লক্ষ্য কেবল শৌখিন বাগান করার মাঝেই সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এই উদ্যোগকে ছোট পরিসরে চাষাবাদে পরিণত করা। স্বল্প সময়ে বেশ সাফল্যও পেয়েছে নগরকৃষি।

নগরকৃষির শুরু গল্পটা জানিয়েছেন সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা আবু ইউছুফ শিহাব। তিনি বলেন, ‘আমরা শহরের মানুষ এই কংক্রিটের মাঝে বসবাস করছি। বিবর্ণ এই শহরে সব মানুষই এক টুকরো সবুজের ছোঁয়া প্রত্যাশা করে। এছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত শাকসবজি আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ করে তুলছে। অথচ আমরা চাইলেই আমাদের বাসস্থানকে দিতে পারি সবুজের ছোঁয়া, পাশাপাশি পেতে পারি নিরাপদ ও সতেজ শাকসবজিও। ২০১৬ সালে কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা কাজ শুরু করি। যেহেতু আমরা কৃষি বিভাগে পড়তাম তাই আমাদের জন্য কাজটা কঠিন ছিলনা বরং আনন্দের ছিল।’

নগরকৃষির প্রতিষ্ঠাতা কামরুল হাসান। সহ-প্রতিষ্ঠাতা শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ শিহাব, মাহফুজ মুনতাসির, আবু নোমান সায়েম। এছাড়া নগরকৃষির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কৃষিবিদ, গবেষক, স্থাপত্যবিদ। যারা পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করছেন।

আবু নোমান সায়েম জানান, ‘এমন কিছু করা দরকার যাতে শহরের মাঝেও সবুজ সহজেই বেড়ে ওঠে। সবার পক্ষে তো আর গ্রামে, খোলা জায়গায় গিয়ে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। যারা নিজেদের ছোট্ট পরিসরে একটু বাগান করতে ভালোবাসেন, তাদের সাহায্য ও উৎসাহ দিতেই জন্ম নেয় নগরকৃষি।’

নগরকৃষি তাদের ভাবনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে শহর জুড়ে। যারা বাসার ছাদে কিংবা বাসার ছোট্ট পরিসরে চাষাবাদ করতে চান তাদের উৎসাহিত করছেন, সরবারহ করছেন বীজ অথবা গাছের চারা। নগরকৃষি বর্তমানে গ্রাহকদের ইনডোর প্লান্টেশন, ল্যান্ডস্কেপিং, ভার্টিকেল গার্ডেন, রক গার্ডেন, এক্সপার্ট গার্ডেনার সার্ভিস, রুফটপ ফার্মিং, ডেকোরেটেড পটারি, আফটার সার্ভিস দিচ্ছে।

এছাড়াও নগরকৃষি শিশুদের নিয়ে ‘লিটল ফার্মার’ নামে আরেকটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের হাতে-কলমে গাছ লাগানো শেখানো হয়। বাচ্চারা যেহেতু পোকা ভয় পায়, তাই পোকা নিয়েও কিছু তথ্য জানানো হয় কথায় কথায়। সবশেষে তাদেরকে একটা করে বীজ দিয়ে তা রোপণ করতে বলা হয়। এটা কীসের বীজ তা জানানো হয় না, ফলে গাছটা বেড়ে উঠলে দারুণ একটা সারপ্রাইজ পায় সেই শিশুটি। এভাবে শিশুটির মাঝে নিঃসন্দেহেই গাছের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়। নগরকৃষি মনে করে এই শিশুরাই একদিন আধুনিক কৃষির বিপ্লব ঘটাবে।

নগরকৃষি স্বল্প সময়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০১৭, বেস্ট সাসটেইনেবল বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০১৮।

নগরকৃষি প্রতিষ্ঠাতা কামরুল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের এই কার্যক্রমটি ঢাকা শহরের মাঝে সীমাবদ্ধ। আমরা চাচ্ছি আমাদের এই কার্যক্রমটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে। আমরা শুধু সবুজ নগরী নয়, নিরাপদ নগরী গড়ে তুলতে চাই। বিষাক্ত রাসায়নিক সারমুক্ত খাবার সবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বাড়ি যেন হয় এক একটি শস্যের খামার, সঙ্গে সবুজ গাছপালায় যেন ভরে যায় আমাদের এই নগরী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়