ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মণিপুরি সমাজ

মাইবম সাধন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১০ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মণিপুরি সমাজ

মাইবম সাধন : ‘মৈত্রবাক’ শব্দটি বাংলাভাষীদের কাছে খুবই অপরিচিত। কারণ ভৌগোলিক ও ধর্মীয় অপরাজনীতির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কোনো রূপ বৈশ্বিক জৌলুস দিতে পারেনি। বিধায় শব্দটি আগাগোড়া থেকে গেছে ইতিহাসের খেরোখাতায়। ‘মৈতৈ’ হলো মৈত্রবাক-এর মূল জাতির নাম আর ‘লৈবাক’ অর্থ হচ্ছে ভূমি। অর্থাৎ ‘মৈত্রবাক’ মানে মৈতৈদের ভূমি। সৃষ্টির শুরু থেকে স্বাধীন ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এই ‘মৈত্রবাক’ ইতিহাসের এক করুণ পরিণতিতে ‘মণিপুর’ নামধারণ করে। সেই থেকে মৈতৈরা মণিপুরি অর্থাৎ সমার্থক শব্দ আর ‘মৈতৈ লোন’ পরিচিতি পায় ‘মণিপুরি ভাষা’ হিসেবে। অবশ্য এর আগেও বহু নামে পরিচিত ছিল এই ভূ-খণ্ড। যেমন মৈতৈ লৈবাক, কংলৈপাক ইত্যাদি।

কখনো রাজ্য, কখনো ক্ষমতা দখলের প্রায়ান্ধ প্রয়াস, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে ইতিহাসের বিভিন্ন কাল পর্বে মণিপুরিরা মৈত্রবাক ছেড়ে অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের নানান দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আসাম, ত্রিপুরা, মিয়ানমার, নেপালসহ বর্তমান বাংলাদেশেও বসতি স্থাপন করে। সেই থেকে সকল আন্দোলন সংগ্রামে তারাও শরিক হয়েছেন, উজাড় করে দিয়েছেন  মাতৃভূমির জন্যে। ইতহাস সাক্ষ্য দেয়, ইছিম জমাদারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভানুবিল কৃষক-প্রজা আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান কিংবা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সর্বত্রই মণিপুরিরা অংশগ্রহণ করেছেন। তাই চিন্তায় চেতনায় সামগ্রিক মননে মণিপুরিরা পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশী।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে মণিপুরিদের স্বভাবজাত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মনোভাব আর দেশমাতৃকার নিবিড় প্রেম- সব মিলিয়ে একটি ঐতিহাসিক মুক্তির সুযোগ মণিপুরিদের সামনে আসে। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রাম। সাহসী যুবকেরা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ নিতে। ঘরে মা-বাবা কিংবা বোন কিংবা বৃদ্ধ দাদু-দাদী চিন্তায় দিন পার করেছেন খোকা কখন বাড়ি ফিরবে! কখন মুক্তি পাবো-এমন অসংখ্য বিলাপ-প্রলাপের ভোর যেন কাটতেই চাই না। অনেকেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সরবরাহ করেছেন। চরমপত্রের কপি বিলি করেছেন। জনমত গঠন করেছেন। আবার কোনো কোনো গ্রামে নিরক্ষর মণিপুরিরা পাহারা দিয়েছেন যুবতী মেয়েদের সম্ভ্রম বাঁচাতে। কোথাও আবার সম্ভ্রম খুইয়েছেন। বীরাঙ্গনা হয়েছেন। কোনো বৃদ্ধাকে মরতে হয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের বুটের তলায় পিষ্ট হয়ে। চোখের সামনেই ঘটে যাওয়া করুণ দৃশ্যগুলো দেখে অনেকেই নির্বাক হয়ে গেছেন। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মণিপুরি তরুণ জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই সময়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অর্জিত স্বাধীনতায় সমগ্র জাতির পাশাপাশি মণিপুরি জাতিকেও মহিমান্বিত করেছেন। সময়ের সেই সব বীর ও সাহসী যোদ্ধা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন ২০জন মুক্তিযোদ্ধার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরছি:

শ্রী নীলমণি সিংহ (ননী), পিতা: মৃত নিমাই সিংহ, লালাদিঘীর পাড়, সিলেট। তিনি প্রশিক্ষণ শেষে কর্নেল মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন (পরে লে. জেনারেল) ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বেশ কটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেন; সেগুলোর মধ্যে সিলেটের টুকের বাজার অপারেশন উল্লেখযোগ্য। তিনি সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম।

শ্রী আদিত্য শর্মা (কংকর), পিতা: মৃত অম্বিকা শর্মা, মাতা: মৃত লক্ষ্মী শর্মা, মণিপুরি রাজবাড়ী, সিলেট। মেঘালয়ের একোয়ান প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ নেন। ব্যাচ নম্বর ছিল ২৮। টুকেরবাজার অপারেশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে প্রবাসী।

শ্রী টি. অবনী কুমার সিংহ, পিতা: টি. যোগেশ্বর সিংহ, সুবিদবাজার, সিলেট। তিনি শ্রী নীলমণি সিংহের সঙ্গে একই সময়ে সীমান্ত অতিক্রম করে লোহারবন্দ ইকো ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে লে. কর্নেল মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরে যোগ দেন।

শ্রী কে. দিলীপ সিংহ, পিতা: মৃত কামেশ্বর সিংহ, শিবগঞ্জ, সিলেট। তিনি লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে কর্নেল সি আর দত্তের (পরে মেজর জেনারেল) অধীনে ইকো সেক্টর ৪-এ যোগ দেন। যুদ্ধের সময় তিনি সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

শ্রী এস. প্রদীপ কুমার সিংহ (কিরণ), পিতা: মৃত ক্ষীর সিংহ, শিবগঞ্জ, সিলেট। তিনি পানিবড়া ইয়ুথ ক্যাম্পে যোগ দেন সেপ্টেম্বরে। এখানে ফিজিক্যাল ট্রেনিং নেন। তারপর লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে বিভিন্ন অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ব্যবহারসহ গেরিলা যুদ্ধের নিবিড় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা একটি গ্রুপের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন।

শ্রী থাংজম জীতেন সিংহ, পিতা: মৃত বনমালী সিংহ, শিবগঞ্জ টিলাবাড়ি, সিলেট। এই অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা পাড়ার বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা শ্রী এস. প্রদীপ কুমার সিংহ ও শ্রী কে. দিলীপ সিংহ’র সাথে একই সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শ্রী কারাম নীলবাবু সিংহ, পিতা: মৃত সানারিক খোম্বা সিংহ, চুনারুঘাট, জেলা: হবিগঞ্জ। লাইট ও হেভি আর্মস চালনা, গ্রেনেড চার্জসহ বিভিন্ন অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেশ কিছু সময় তিনি সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রী কারাম নীলবাবু সাহিত্যিক। মণিপুরি ভাষায় কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন।

শ্রী নীলচান দত্ত, চুনারুঘাট, জেলা: হবিগঞ্জ। তিনি কালেঙ্গার ডালাসুন্দর অপারেশন, দুধপাতিল অপারেশন এবং চুনারুঘাট থানা হেডকোয়ার্টার অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়ে শ্রী নীলচান দত্ত এক ঘটনায় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, নিজ হাতে একজন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা না করা পর্যন্ত তিনি ভাতের সঙ্গে কোনো তরকারি খাবেন না। এই প্রতিজ্ঞা তিনি রক্ষা করেছিলেন এবং সার্থকভাবে দেশের জন্য জীবন বাজি ধরেছিলেন।

শ্রী মাইবম প্রমোদ সিংহ, পিতা: মাইবম বাবাতোন সিংহ, চুনারুঘাট, জেলা: হবিগঞ্জ। তিনি কে এইচ নীলবাবু সিংহের সঙ্গে একই গ্রুপে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন।

শ্রী এম. মনমোহন সিংহ, পিতা: মৃত বৈকুণ্ঠ সিংহ, মাতা, লৈফোন দেবী, হবিগঞ্জ। প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাপ্টেন এজাজ আহমদের নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বহু অপারেশনে অংশ নিয়েছেন; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কালেঙ্গার ডালাসুন্দর অপারেশন, সেখানে তিনি উরুসন্ধিতে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর অসম সাহসীকতার জন্য ক্যাপ্টেন এজাজ আহমদ তাঁকে একটি সার্টিফিকেটও প্রদান করেন। চিকিৎসার পর তিনি পুনরায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দীর্ঘদিন সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শ্রী কে এইচ নীলবাবু সিংহ, পিতা: মৌর সিংহ, মাতা: কবোকলৈ দেবী, হবিগঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে আসামের তেজপুর সালনিবাড়ি ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তের নেতৃত্বাধীন ৪ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

শ্রী খোমদ্রাম প্রতাপ চন্দ্র সিংহ, পিতা: খোমদ্রাম রাজমোহন সিংহ, মাতা: চন্দ্রমুখী দেবী, কুলাউড়া। তিনি ট্রেনিং শেষে ৪ নম্বর সাব-সেক্টরের অধীনে ক্যাপটেন হামিদের নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উল্লেখযোগ্য কিছু অপারেশনের মধ্যে অন্যতম হল চাতলাপুর ও নমুজার অপারেশন। ১৬ ডিসেম্বর প্রতাপদের দল নলধরীতে এসে সেখানে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে বন্দি হওয়া অনেক লোককে মুক্ত করেন। বন্দিদের মধ্যে তাঁর বাবা শ্রী খোমদ্রাম রাজমোহন সিংহও ছিলেন।

শ্রী ঙৈরাংবম লৈরিজাউ সিংহ, পিতা: মৃত মানিক সিংহ, মাতা: মল্লিকা দেবী, মৌলভীবাজার। বর্তমানে প্রবাসী এ মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যোগাড় করা সম্ভব হয়নি।

শ্রী য়ুমখাম ললিত সিংহ, পিতা: য়ুমখাম বাবাহন সিংহ, মৌলভীবাজার। য়ুমখাম ললিত সিংহ এবং লৈরিজাউ সিংহ এক সঙ্গে একই সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনিও ন্যাপ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও বর্তমানে প্রবাসী বিধায় বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

শ্রী হেনাম সানাতোন সিংহ, পিতা: হেনাম বাবাসনা সিংহ, মাতা: তনৌবী দেবী, উপজেলা: কুলাউড়া, জেলা: মৌলভবিাজার।

শ্রী হেনাম সানাতোন সিংহ মুক্তিযুদ্ধের নানা পর্যায়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর সানাতোন সিংহ সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মৌলভীবাজারের সরকারি হাইস্কুলে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর শত্রুপক্ষের পাতা মাইন বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত ও পরে শহীদ হন।

শ্রী ঙৈরাংবম দেবেন্দ্র সিংহ, পিতা: মৃত মানিক সিংহ, মাতা: মল্লিকা দেবী, উপজেলা: কুলাউড়া, জেলা: মৌলভীবাজার।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সরবরাহ করতেন। চরমপত্রের কপি নিয়ে সিলেট এবং মৌলভীবাজারে বিতরণ করেছেন। জনমত গঠন করেন। পরে মে মাসের ৪ তারিখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। অনেক অপারেশনে অংশ নিয়েছেন।

শ্রী হেনাম প্রহ্লাদ সিংহ, পিতা: বাবুসানা সিংহ, মাতা: তনৌবী দেবী, মৌলভীবাজার। সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তের অধীনে চাতলাপুর অপারেশনের সময় বোমার বিকট শব্দে কানের শ্রুতি হারান। স্বল্প চিকিৎসার পর তিনি ক্যাম্পের লঙ্গরখানার দায়িত্ব নেন।

শ্রী এল হরেন্দ্র সিংহ, পিতা: এল. বিদ্যা সিংহ, মাতা: কৃষ্ণা দেবী, উপজেলা: জুড়ী, জেলা: মৌলভীবাজার। প্রশিক্ষণ শেষে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে কুকিতল সাব-সেক্টরের আওতায় ফ্লাইট লেফটেন্যন্ট কাদিরের নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেন। অসম সাহসীকতা এবং বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য হরেন্দ্র কুমার সিংহকে প্লাটুন কামান্ডার করা হয়। তিনি বিটুলী, শিলুয়া, সাগরনাল, ফুলতলা, গোয়ালবাড়ি এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পরিচালিত বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন।

শ্রী থোঙাম ধীরেন্দ্র সিংহ, পিতা: ধ্বজ সিংহ, মাতা: মণি দেবী, শ্রীমঙ্গল, জেলা: মৌলভীবাজার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শ্রীমঙ্গল থানা ছাত্র লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। উল্লেযোগ্য অপারেশনগুলোর মধ্যে ধলাই অপারেশন স্মরণীয়। তিনি মণিপুরিদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।

শ্রী পুতুল সিনহা, পিতা: কালাচান সিংহ, মাতা: নাংবী দেবী, উপজেলা: শ্রীমঙ্গল, জেলা: মৌলভীবাজার। ঢাকায় পড়াশোনার সুবাদে ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে শোনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে লোহারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৪ নম্বর সেক্টরের অধীন সাব-সেক্টর কমা্ন্ডার ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও অসংখ্য মণিপুরি মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আবার অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নাম লেখাতে ব্যর্থ হন। কারণ তৎকালীন মণিপুরি সমাজের অনগ্রসরতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের উপেক্ষা-অবহেলা তার মধ্যে অন্যতম। অনেকেই আবার দেশান্তরি হয়েছেন, অনেকেই প্রবাসে স্থায়ী হয়েছেন। অনেকেই আর্থিক অনটন-অভাব ঋণে জর্জর হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়েছেন। আবার অনেকেই স্বাধীনতার বেদীমূলে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের সেই না-বলা কথাগুলো কোনো একদিন বন্ধু-বান্ধব-সহযোদ্ধাদের গল্পে চিরায়ত কাহিনী হয়ে জনমানসের সম্মুখে বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস রাখি। বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে একদিন। সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।

জয়তু মণিপুরি। জয়তু বাংলাদেশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ অক্টোবর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়