ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ১১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা

ফাইল ছবি

ঝুমকি বসু : ঢাকা শহরে অনেক মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়। কিন্তু কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন মঠের মন্দিরে। মহাঅষ্টমীর দিন এখানে জাঁকজমকভাবে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল ও যশোরে মঠের বিভিন্ন শাখায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ মাতৃজাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯০১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদাদেবীর অনুমতিক্রমে কুমারী পূজার প্রচলন করেন।

কুমারী পূজা এক বিশেষ ধরনের পূজা। এই পূজায় এক কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য ও উলুধ্বনি দিয়ে কুমারী মাকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেওয়া হয়। কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্বিক রূপ। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দেবী দুর্গার আরেক নাম ‘কুমারী’। মূলত নারীকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান মহারাজ এ পূজা প্রসঙ্গে বলেন, পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেও কুমারীর কথা উল্লেখ আছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, দেবীর কুমারী নাম অনেক পুরোনো। এই নাম যেমন পুরোনো, তার আরাধনা ও পূজার রীতিনীতিও তেমনি প্রাচীন।

দেবীজ্ঞানে যে কোনো কুমারীই পূজনীয় তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজা সর্বত্র প্রচলিত। ব্রাহ্মণ ছাড়াও অন্য জাতির কন্যাকেও কুমারীরূপে পূজা করতে বাধা নেই। কিন্তু অবশ্যই কুমারীকে ঋতুমতী হওয়া চলবে না। তন্ত্রঅনুসারে এক থেকে ষোল বছর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ বালিকাদের কুমারী পূজার জন্য নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও রামকৃষ্ণ মিশনে মহাঅষ্টমীর দিন সকালে কুমারী পূজায় বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে। প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে কুমারী মেয়েটির নাম ও পরিচয় পূজার আগে প্রকাশ করা হয় না। সকালে নির্দিষ্ট কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হবে। ফুলের মালা, চন্দন, নানা অলংকার, প্রসাধন ও উপাচারে নিপুণ সাজে সাজানো হবে। এরপর তাকে নিয়ে আসা হবে পূজা মণ্ডপের নির্দিষ্ট আসনে। চলবে পূজার যথাবিহিত আয়োজন।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের এ পূজা খুবই আকর্ষণীয়। কুমারী পূজা দেখতে প্রতি বছর মহাঅষ্টমীর দিন সেখানে প্রচুর ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঢাকায় থেকে যদি দুর্গাপূজা উপভোগ করতে চান তাহলে আগামী ১৭ অক্টোবর দেখে আসতে পারেন রামকৃষ্ণ মিশনের বিখ্যাত কুমারী পূজা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়