ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাশফুলের জগতে মনে প্রশান্তির হাতছানি

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২২ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ২২:২৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
কাশফুলের জগতে মনে প্রশান্তির হাতছানি

জুনাইদ আল হাবিব : সবুজে মোড়ানো আমন। এর বুক চিরে বয়ে গেছে মেঠোপথ। কোথাও কোথাও পিচঢালা সড়ক। চারপাশে দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে মনে সতেজতা ফেরানো কাশফুল। এ মনোরম প্রকৃতি অন্তরের গভীরাংশে নাড়া দেয়।

ইট-পাথরের কংক্রিটের শহরের যান্ত্রিকতাময় জীবন। এ জীবনে একটু স্বস্তি ফেরাতে চাই কাশফুল। কাশফুলের অভয়ারণ্যে মন মিশে একাকার হয়ে ওঠে। জেগে ওঠে প্রাণ। এজন্য কেউ কেউ ছুটেনও কাশফুলের রাজ্যে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুধু কাশবনে গিয়ে কাশফুল দেখা নয় বরং কাশফুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে দেখা যায় প্রকৃতিপ্রেমী বহু মানুষকে। দর্শনার্থী নিজে শুধু এ নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করেন না। উন্নত মানের ডিএসএলআর ক্যামেরার ক্লিকে কিংবা স্মার্টফোনে সেলফির অপশনে তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা দর্শকদের কাশফুলের জগতে ঘুরাতে ভুলেন না অনেকে। কেউ কেউ আবার লাইভ দিয়ে কাঁপিয়ে তোলেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের। তারাও অনলাইনে এমন জগতে ঢু মেরে ক্ষণিকের তৃপ্তি মেটান।
 


মেঘনা উপকূলে কাঁশফুলের প্রকৃতি এখন আকাশচুম্বী। যার প্রমাণ রাখে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি, সদর ও রায়পুরের নিম্নাঞ্চল। আর চাঁদপুরের হাইমচর।

লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমুর স্টেশন হয়ে রামগতি সড়কের তোরাবগঞ্জ থেকে সড়ক পথে মতিরহাট। অনেকটা পিচঢালা এ পথ ধরে বাস অথবা সিএনজি যোগে আসা যায়। দূরত্বের দিকে জেলা শহর থেকে এ পথ ২৪ কিলোমিটার। পথ শেষ না হতেই এক কিলোমিটার থেকে নদীর কাছাকাছি এসে দক্ষিণের দিগন্তে চোখ ফেরানো যাক। ২৩ কিলোমিটার পথ এসে হাজী নজির মিয়াগো দরজা হয়ে দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনাতীরের প্রকৃতি কাশফুলে ভরে আছে। নতুন জেগে ওঠা খালে কাশফুলের দেখা বেশিই মিলে। স্থানীয় ভাষায় এ খালকে মানুষ ‘চরি খাল’ নামে চেনে। মেঘনার বুকে যখন জোয়ার তখন এ চরি খালের বুকও পানিতে ভরা থাকে। তাইতো নৌকার মাঝিরা কোমল হাতে বৈঠা বেয়ে নৌকা চালায় কাশফুলের মাঝ দিয়ে খালের বুক চিরে। এ চিত্রটাও বেশ চমৎকার। আমন ধানের বুক ঘেঁষে চলা আইলের পথ ধরে হাঁটলেও খুব কাছ থেকে এ কাশফুলের সান্নিধ্য মিলবে। তবে একা নয়! নিজের প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে চলুন। হয়তো তিনি হয়ে ওঠতে পারে আপনার ক্যামেরাম্যান, বা আপনি তার ক্যামেরাম্যান।

একই দৃশ্যের দেখা মিললো চাঁদপুরের হাইমচর শহর আলগী বাজারের পথ ধরে বয়ে চলা পথ চর ভৈরবীর মেঘনাপাড়ে। রাজধানী শহর থেকে পা ফেলা মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন কাঁশফুলের দ্বারে এসে। এ দৃশ্যটা চর ভৈরবী বাজারের উত্তর-দক্ষিণ, দু’দিকেই চোখ জুড়ানো কাশবনের কাশফুল।
 


লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র হেলাল মাহমুদ হিমেল কাশফুলের প্রকৃতি উপভোগ করে বলেন, ‘নদীরপাড়ে কী যে সুন্দর কাশফুল। কাল বিকেলের দিকে দেখতে গিয়েছিলাম শুনে। আমার কাছে খুব ভালোই লাগলো। এত সুন্দর কাশফুল যে এখানে আছে তা তো কখনও কল্পনাও করিনি। দেখে তো আমি পুরোই অবাক। একদিকে নদী দেখা হলো, অন্যদিকে কাশফুল। মাইন্ড একদম ফ্রেশ হয়ে গেল।’

কথা হলো কাশফুল দেখতে আসা দর্শনার্থী মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিয়াদ হোসেন ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন তালুকদারের সঙ্গে। তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে দুজন বলছিলেন, ‘কাশফুলের কাছে এসে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। মনকে পরিষ্কারের জন্য আমরা এখানে আসি। কাশফুলের সান্নিধ্য পাওয়াটা একটু বাড়তি বিনোদন। অবসর সময়টা কাটানোর ভিন্ন একটা স্থান কাশফুলে জেগে এ প্রকৃতি। আরেকটা বিষয় আমাদের খুব ভালো লাগে। সেটা হচ্ছে, এই যে সবুজ ধান আর ধানের ফাঁকেই কাশফুল। বিষয়টা দেখতেও বেশ রোমাঞ্চকর।’
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়