ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘চরাঞ্চলের কলার স্বাদ বেশি’

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চরাঞ্চলের কলার স্বাদ বেশি’

জুনাইদ আল হাবিব : রাতের আঁধার মুছলো। পূর্ব আকাশে সূর্যটাও উঁকি মারলো। ঝলমলে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। এ আলোতে চিকচিক করছে দ্বীপের মেঘনাতীর। এরই মাঝে ট্রলার ভিড়লো কূলে। কিছু মানুষ ওপার যাবে। তাদের সঙ্গেই ট্রলারে করে কলা যাবে ওপারে। ব্যাপারি ব্যস্ত কলার ছড়াগুলো ট্রলারে উঠানো নিয়ে। সঙ্গে কিছু লোককে দেখা গেল তাকে সহযোগিতা করছে। কলার ভারে ভারি হচ্ছে ট্রলার।

ট্রলার ছাড়লো দ্বীপ থেকে। ওপারে যেতে না যেতেই ট্রলার ঘাটে অন্য ব্যাপারিদের হাকডাক শুরু... ‘এই কলা, কলা, কলা নিবেন নি? কলা। ২২০, ২৩০, ২৩৫, ২৪০....।’ এভাবে নিলামে চলছে কলা বেচাকেনা। স্থানীয় দোকানিরা, মানুষজন কিনে নিচ্ছেন তা। এসব কলা দোকান-পাটে বেশ জায়গা দখল করে নেয়। কেননা হালকা নাস্তা হিসেবে কলার বিকল্প যেন কলাই। কলার এমন গল্পটা বলছি মেঘনা উপকূলের চাঁদপুরের দ্বীপ হাইমচরের।

উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে ট্রলার ভিড়লো কূলে। দ্বীপে চোখ রাখতেই চোখ পড়লো মেঠোপথের। পথের দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত কলা গাছ। বাড়িগুলোর দিকে তাকালে এমন দৃশ্যটাও চোখে পড়ে। যা মনের দৃষ্টিও কেড়ে নেয়। এসব দেশি জাতের কলা।

নদীর বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ-চরাঞ্চলে কলা চাষে বাম্পার ফলনও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। উর্বর মাটির কারণেই খুব স্বল্প সময়ে কলা গাছ দ্রুত বড় হয় এবং ফলনও ভালো ধরে। যা মানুষের আয়-রোজগারে রাখছে বিরাট ভূমিকা।

দ্বীপে কথা হলো ২৫ বছর বয়সি মাসুদ আলমের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা নতুন বাড়ি নির্মাণ শুরু করি কলা গাছ রোপণ করে। কলা গাছও বেশ দ্রুত বড় হয়। ছয়-সাত মাস পরে আমরা কলা সংগ্রহ করতে পারি। কলা গাছ নতুন বাড়িতে একটা ছায়া হিসেবে থাকে। যতক্ষণ না অন্য গাছগুলো বড় না হয়। ওই গাছগুলো বড় হতে পাঁচ-ছয় বছর লেগে যায়। তাহলে দুইটা সুবিধাই পাওয়া। একদিকে কলাও পেলাম, অন্যদিকে বাড়িতে ছায়াও পেলাম।’

‘দ্বীপের প্রতিটি বাড়িতে এবং বাড়ির পুকুরপাড়ে সারি সারি কলা গাছ আছে। এসব কলা গাছ থেকে বছরে অনেকে লাখ লাখ টাকা আয় করে। আর চরাঞ্চলের কলার স্বাদটাও বেশি। যে কেউ খেয়ে টেস্ট করতে পারেন।’ বলছিলেন মাসুদ।

নোয়াখালীর ভুলুয়া নদী অতীতে ভয়াল নদী ছিল। বেশ খরস্রোতা ছিল এটি। এখন একেবারে মরে ধুঁকছে। ভুলুয়া মরে চর জেগে ওঠেছে। ফলে ভুলুয়ার চরে বসতি স্থাপন শুরু করেছে মানুষ। বসতি গড়ার সংখ্যাটা দিন বাড়ছে। প্রচুর কলা উৎপাদন হচ্ছে ভুলুয়ার চরেও।



ভুলুয়ার পাড়ের টেলিকম ব্যবসায়ী নাদিম হোসেন স্বজন। তার বয়সটা ২০ ছুঁয়েছে। ভুলুয়ার চরের সম্ভাবনার গল্প তুলে ধরে স্বজন বলছিলেন, ‘এখানের মানুষ একমাত্র কৃষিকাজ করেই বেঁচে থাকে। সে সুবাদে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় খুব কম সময়ে ভালো কিছুর আশায় মানুষ কলা গাছ লাগায়। পাশেই একটা বড় বাজার আছে করুণানগর নামে। এ বাজারটা জেলার মধ্যে অন্যতম বড় বাজার। প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে এ বাজারে। যার কারণে এখানে কলার চাহিদাও বেশি। তাই চরে কলা বেশি চাষ হয়। এখানের চাহিদা মিটিয়ে কলা বিভিন্ন স্থানে পাঠান ব্যবসায়ীরা। খেতেও অনেক মিষ্টি চরাঞ্চলের কলা। বেশি কষ্ট করা লাগে না। কম পরিশ্রমেই কলা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।’

কেবল সদ্য জেগে ওঠা দ্বীপ-চরাঞ্চল নয়। প্রান্তিক জনপদের গ্রামগুলোতেও কলা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। গ্রামে নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে গেলেই কলা গাছের চারা রোপণ করতে হয়। এমনটা জানিয়ে ৬০ বছরের কৃষক মো. মোস্তফা মিয়া বলছিলেন, ‘নতুন বাড়ি করেছি, পাশে মাছ চাষের জন্য দিঘিও করেছি। দিঘির পাশে কলা গাছ লাগিয়েছি। এখন আমার লাগানো গাছে কলা ধরেও। আত্মীয়-স্বজন নিয়ে কলা খাই। মাঝে মাঝে কলা বেচে সংসারের খরচও চালাই। অনেক সময় রান্নার সবজি হিসেবেও আমরা কাঁচা কলা ব্যবহার করি।’

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়