বিশ্বজুড়ে লক্ষ্মীপুরকে তুলে ধরতে অদম্য প্রয়াস
জুনাইদ আল হাবিব : বিসিএস পরীক্ষা, প্রশাসনে যোগদান, ভর্তি পরীক্ষা। এমনকি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ প্রজন্মকে। কিন্তু দেখা যায় জেলাবিষয়ক পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে অনেক তরুণ পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে পারে না। ফলে শুরু হয় বেকার জীবনের অভিশাপ। ভাইভা বোর্ডে জেলাবিষয়ক তথ্যে প্রতিযোগী নিজে সমৃদ্ধ থাকলে ভবিষ্যতটা একটু উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই চিন্তা থেকেই সানা উল্লাহ সানু লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং তথ্যকোষ নিয়ে লিখেছেন ‘লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’। তিনি পেশায় স্কুল শিক্ষক, নেশায় সাংবাদিক, কাজের সূত্রে গবেষক। যার গবেষণায় রচিত এ বইটিকে ইতিমধ্যে কেউ কেউ ‘লক্ষ্মীপুরপিডিয়া’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। যেখানে লক্ষ্মীপুর জেলার সব রকমের তথ্য স্থান পেয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার কাটাবনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক মিডিয়া (বিজেম) মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।৬২৪ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে উপকূল প্রকাশন।
২৬টি অধ্যায়ে লেখা বইটিতে লক্ষ্মীপুর জেলার নানা ইতিহাস আর মৌলিক তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। বইটি রচনাকালে লেখক দুটি দুঃসাধ্য বিষয় সংযোজন করেছেন। তাহলো বিষয়বস্তু সংক্রান্ত ছবি এবং ম্যাপ সংযোজন।
বইটির প্রথম থেকে ষষ্ঠ অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে লক্ষ্মীপুর ভূ-খণ্ডের উৎপত্তি, জনবসতি, ঐতিহাসিক শাসন, সংগ্রাম। ৭ম থেকে ১২তম অধ্যায়ে জেলার নামকরণ, বিভিন্ন সময়ে জেলার পরিবর্তিত সীমানা, পরিবেশ ও জলবায়ু, প্রাচীন অর্থনীতির ইতিহাস, উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদের গঠন, নির্বাচনের প্রেক্ষাপট, এসবের গঠনকাল ও নামকরণের ইতিহাস, মধ্যযুগের গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, জেলার সবকটি পৌরসভা, ৫৮ ইউনিয়নের নামকরণসহ তথ্য ও ইতিহাস মিলবে। ১৩ম অধ্যায় থেকে শেষ অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে জেলার ভৌগলিক অবস্থানের জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন এবং গ্লোবাল পজিশন সিস্টেম ব্যবহারের বিষয়াদি। জেলার মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক তথ্য, জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জেলার স্বাস্থ্যসেবা, জেলার পেশাজীবী, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি-অর্থনীতি, জেলার ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ও খাদ্য পণ্যের তথ্য, জেলার পর্যটন, দর্শনীয় স্থান, প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়াদি, নদী, খাল, দীঘি ও জলাশয়ের তথ্য, জেলার বিখ্যাত ঈদগাহের তথ্য ও শতাধিক হাটবাজারের ইতিহাস, জেলার আঞ্চলিক ভাষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাহিত্য, লোকজ মেলার তথ্য, জেলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার তথ্যচিত্র, জেলার জনসমস্যা ও জনপ্রত্যাশা, জেলায় জন্ম নেয়া দু’শ গুণীব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং যাদের অনুপ্রেরণায় বইটির আত্মপ্রকাশ, তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা।
বইটি লেখার শুরুটা কীভাবে? জানতে চাইলে লেখক সানা উল্লাহ সানু বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস বা ঐতিহাসিক তথ্য ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জায়গা থেকে বইটি লেখা শুরু হয়েছে। কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। ২০১৭ সালের শেষ দিকে সংগৃহীত তথ্যের পাণ্ডুলিপি তৈরি শেষ করা হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে পুরো জেলার আনুষাঙ্গিক ছবি এবং ভিডিও করা হয়। তৈরি করা হয় লক্ষ্মীপুর জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের পৃথক মানচিত্র।’
বই রচনার পরিকল্পনার গল্প তুলে ধরে সানা উল্লাহ সানু আরো বলেন, ‘প্রযুক্তির ছোঁয়া নিয়ে মাল্টিমিডিয়া ভার্সন আকারে বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হবে সিডিতে। ৪র্থ সংস্করণে থাকছে ই-ভার্সন। বই না পড়ে শুধুমাত্র শোনার মাধ্যমেও এখান থেকে জ্ঞান আহরণ করা যাবে। ৫ম সংস্করণে এ কারণে পডকাস্ট পদ্ধতি সংযোজন করা হবে। ৬ষ্ঠ সংস্করণে বইটির ইংরেজি ভার্সন প্রকাশিত হবে। অনলাইনে পড়ার পাশাপাশি বইটি গুগল প্লে থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ডাউনলোড করে পাঠক পড়তে পারবে। এছাড়া খুব শিগগির বইটি বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স সাইট আমাজন ডটকমে পাওয়া যাবে।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন