ইলিশের রূপালি ঝিলিকে চোখটা ঝলমল করে ওঠে!
জুনাইদ আল হাবিব : সমুদ্রের বুকে বিশাল জলরাশি। উত্তাল ঢেউয়ের ভঙ্গিতে আসা জলরাশি, মেঘনার বুকে কখনও জোয়ার, কখনও-ভাটা। জোয়ার-ভাটার এ ঢেউয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে নৌকা চলে মোহনার দিকে। নৌকা নিয়ে মাঝিরা ছুটে যান জেলেদের নিয়ে। ওখানে রাত-দিনের হিসেবটা নেই। যখন জোয়ার, তখনি নদীতে জাল ফেলার সময়। তীব্র বেগে এ সময় ইলিশ ছুটাছুটি করে। যত গভীরে জাল পৌঁছানো যেতে পারে, ততই লাভ। জালের সঙ্গে ইট-পাথর যুক্ত করে এমনটা করেন জেলেরা। এতে স্রোতেও জাল থাকে অনুকূলে।
এসব জেলেদের সঙ্গে একদিন নদীতে ইলিশ ধরার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। স্রোতের সঙ্গে ইঞ্জিনচালিত নৌকা যেমন দ্রুত চলে, তেমনি জালটাও একটু দ্রুত নদীতে ফেলতে হয়। একজন নৌকা চালান। বাকিরা সবাই তাড়াহুড়া করেই জাল ফেলেন। এ সময় ক্ষিপ্রতারও বেশ প্রয়োজন হয়। এভাবেই ঘূর্ণিঝড়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গে লড়াই করে ইলিশ শিকারে ছুটে যান জেলেরা। এসব কিছু জেলেদের নিত্যসঙ্গী। কখনও কখনও জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াইটা জেলেদের কপালে আটকে থাকে। তবুও চাই তাজা-টাটকা ইলিশ। ইলিশের রূপালি ঝিলিকে চোখটা ঝলমল করে ওঠে! ইলিশের রান্না করা ঘ্রাণ প্রাণের গভীরে নাড়া দেয়।
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাস খানেক সময়। জেলেদের অবাধ বিচরণ মেঘনার মোহনায়। এমন মুহূর্তে কেমন আছে জেলেরা?
‘মোটামুটি ইলিশ পাই। পেট চলে আরকি। মনে করেন ১২-১৩শ’ টাকা খরচে ১০ হালি ইলিশ পাইছি। ৩২’শ টাকা বেইচ্ছি। দুই হাজার টাকার মতো থাকে। ভাগীদের এখান থেকে ভাগ দিতে হবে।’ বাজার থেকে বরফ কিনে নৌকাতে তুলতে তুলতে কথাগুলো বলছিলেন ভোলার ইলিশা ঘাটের জেলে মো. রাসেল। বয়স তার ২০ গড়িয়েছে।
একই নৌকায় একজন ভাত রান্না করছে, আর ক’জন মোহনায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সময়টা তখন সূর্যের আলোর বিদায়ের পর রাতের আঁধার। সন্ধ্যা। পাশ থেকে কয়েকজন সায় দেয়। আর বলে, আমরা এখন এলাকা থেকে দূরে গিয়ে ইলিশ ধরি। কাছে থাকলে খরচ বেশি। এজন্য বরফ নিয়ে নিলাম। কাছে থাকলে ভাগীদেরও পাওয়া যায় না। এজন্য দূরে গেলে ভাগীদেরও খরচ বাঁচে, দুই টাকা বাড়তি পাওয়া যায়।
লক্ষ্মীপুরের মেঘনাতীরের মতিরহাট ইলিশ ঘাটের জেলে বাসু মাঝি (৫৬), বেলাল মাঝি (৪৫) বলছিলেন, ‘এখন আগের চেয়ে কিছু ইলিশ নদীতে পাওয়া যায়। জেলেরা মোটামুটি দুই মুঠো ভাত খাইতে পারেন। আগের ধার-দেনা কিছুটা শোধ হচ্ছে। ইলিশ আরো একটু বেশি পাইলে আরো ভালো হইতো।’
মেঘনার মোহনা থেকে ইলিশ ধরে নৌকা কূলে ভিড়লো। সঙ্গে সঙ্গে এ ইলিশগুলো আড়তে নেয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছেন জেলে ইব্রাহিমের সহকর্মীরা। দুইটি এক কেজি ওজনের ইলিশ হাতে নিয়ে ইব্রাহিম বলতে লাগলো, ‘এমন এক হালি ইলিশের দাম ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা। এখনকার রেইটে। মোটামুটি নাগালের মধ্যে আছে দাম। শীতকাল হিসেবে খারাপ না।’
সারা দেশের ইলিশ ঘাটগুলোর শীর্ষে অবস্থানকারী, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশঘাট লক্ষ্মীপুরের মতিরহাট ইলিশঘাট। জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায়ও শীর্ষস্থানে অবস্থান এটির। নদীতে ইলিশ ধরা পড়লে এখানে দিন-রাত সরগরম থাকে। একই চিত্র ভোলার ইলিশাঘাট, চাঁদপুরের হাইমচরের চর ভৈরবী ইলিশঘাটেরও।
মাছের খারিতে করে ইলিশ রেখে দুজন ধরে ধরে ইলিশ নৌকা থেকে ঘাটের আড়তে পৌঁছে। অবশ্য বেশ হাকডাকের মধ্যেই নিলামে ইলিশের বিক্রি চলে। একটা প্রচলন আছে, ইলিশের একটু ঝোল হলেও পেট ভরে ভাত খাওয়া যায়। অবশ্যই সেটা মেঘনার ইলিশ!
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন