ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মেঘনার বুকে মায়া জাগানো সূর্যাস্ত

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ২ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেঘনার বুকে মায়া জাগানো সূর্যাস্ত

জুনাইদ আল হাবিব : সময়টা এখনকার। ঠিক পড়ন্ত বিকেল। যখন ক্লান্ত সূর্যটা হেলে পড়ে, ছুটে চলে পশ্চিমা দিগন্তে। ঘড়ির কাঁটায় পাঁচটা। সন্ধ্যে নামার আগে। অবশ্য তা শীতকাল বলে। সূর্যের মায়াবী রশ্মি যেন মেঘনার জলে মিশে যায়। মেঘনার জলে চোখ ফেরালে যেন আরেকটা সূর্য বিদায়ের দৃশ্য দৃশ্যমান। নদীর বুকে খেলা করে জোয়ার-ভাটার স্রোত। ঠিক ওই মুহূর্তে জোয়ার থাকুক আর ভাটা থাকুক, সূর্যাস্তের চিকচিকে আলো নিবিড় সখ্যতা গড়ে তোলে ঢেউয়ের সঙ্গে।

মেঘনাপাড়ে বেশ কিছু সৈকত আছে, যেখানে পড়ন্ত বিকেল বা সন্ধ্যা নামার মুহূর্তটা এমন উপভোগ্য। এমন কিছু মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে লক্ষ্মীপুরের উপকূলে। তেগাছিয়া স্লুইস গেট, ঝাউবন, আলেকজান্ডার মেঘনাপাড়, মতিরহাট মেঘনা সৈকত, দ্বীপ রমনী মোহন মেঘনা সৈকত, মাতাব্বরহাট মেঘনাতীর। এ স্থানগুলোতে প্রিয়জনদের নিয়ে আপনিও ঘুরে মনকে আনন্দ দিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, সময়টা ঠিক সূর্য যখন ক্লান্ত। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামার পথে।

 



তেগাছিয়া স্লুইস গেট ও বিশাল ঝাউবন :
জেলার সর্ব দক্ষিণের জনপদ রামগতির একদম দক্ষিণ-পূর্বে তেগাছিয়া বাজার পার হয়ে মেঘনার কূলেই স্লুইস গেট। এখানে রয়েছে বেশ প্রশস্ততম তর ও বিশাল ঝাউবন। সূর্যাস্তে এখানের মেঘনাতীর একদিকে যেমন অনিন্দ্যসুন্দর, তেমনি সারি সারি ঝাউগাছের মাঝে বিকেলের সূর্যের উঁকিটা অন্তরের গভীরে নাড়া দেয় বেশ তীব্রভাবে। স্থানটির এতদিন তেমন পরিচিতি ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সংখ্যক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুবাধে এ স্থানটিকে তুলে ধরছেন বিশ্বজুড়ে।

আলেকজান্ডার মেঘনাপাড় : এ দর্শনীয় স্থানটির শুরু নদী রক্ষা বাঁধ থেকে। এখানে মেঘনাতীরে বিকেল বেলায় পশ্চিম থেকে হেলে পড়া সূর্যের মোলায়েম দৃশ্য আর নদীর বুকে ঢেউ খেলা পানি একাকার হয়ে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। নদী রক্ষা বাঁধ আঁকা-বাঁকা হওয়াতে পূর্ব দিক থেকে সূর্যাস্তের দারুণ দৃশ্যের মাঝে হারিয়ে যান অনেকে। এটি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম একটি। বিভিন্ন উৎসবে এখানে হাজার হাজার পর্যটকের হৃদয়ের জানালা খুলে দেয় এমন দৃশ্য।

 



মতিরহাট মেঘনা সৈকত ও এর সংলগ্ন দ্বীপ রমনী মোহন মেঘনা সৈকত :
জেলার কমলনগর উপজেলার মতিরহাট বাজার। বলতে গেলে মেঘনার কোলেই জেগে আছে মতিরহাট। বাজারের উত্তর-দক্ষিণ প্রান্তে মেঘনার জলের সঙ্গে মিশে থাকা সৈকতকে অনেকে মিনি কক্সবাজার বলেন। এখানে বিকেল বেলার সূর্য রশ্মির সঙ্গে জোয়ার আর ভাটার দৃশ্য বেশ ঝলমলে। এখানের দৃশ্যটা অন্য স্থানগুলোর তুলনায় একটু ব্যতিক্রম। এছাড়া মাত্র পাঁচ মিনিটের নদী পার হয়ে পা রাখা যায় দ্বীপ রমনী মোহনের চর শামছুদ্দিনের মেঘনাতীরে। একদিন ওখান থেকে ফেরার পথে বিকেল বেলায় বেশ চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়েছে। এ যেন সূর্যকে খুব কাছে পাবার অনুভূতি। এমন দৃশ্য দেখতে যে কেউ যেতে পারেন। পাশাপাশি দ্বীপটি দেখার অভিজ্ঞতাটাও নিতে পারেন।

মাতাব্বরহাট মেঘনাতীর : এখানের গল্পটা ঠিক আলেকজান্ডার নদীতীরের মতোই। নদী ভাঙন থেকে কমলনগরকে রক্ষার জন্য এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর এ স্থানটিও রীতিমতো পর্যটকদের মনে জায়গা দখল করে নিয়েছে। এ পর্যটন কেন্দ্রটির গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। তাই বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ এখানে তরুণদের আড্ডা বেশ জমে ওঠে। কেউ কেউ এখানে বসে অনলাইনের জগতে ডুবে থাকে।

 



এ বিষয়ে কমলনগর কলেজের শিক্ষক আমজাদ হোসেন আমু বলেন, এমন দৃশ্য দেখতে বন্ধুদের নিয়ে নিয়মিত নদীর পাড়ে যাই আমরা। বাইক চালিয়ে যেতে খুব কম সময় লাগে। তাই যথা সময়ে আবার ফিরতে পারি। মনের যত দুঃখ-বেদনা, দুশ্চিন্তা আছে, সবগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে সূর্যাস্তের দৃশ্য বেশ কাজে দেয়। এজন্য আমরা এ অপরূপ ছোঁয়া পেতে আসি। অবশ্য এই অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে হলে এখনি ভালো সময়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়