ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শুঁটকি উৎপাদনকারীদের শুকনো মুখ

মহিউদ্দিন অপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুঁটকি উৎপাদনকারীদের শুকনো মুখ

মহিউদ্দিন অপু : ‘আগের নাহান এহন আর শুঁটকি ব্যবসা নাই। বছর-বছর সবখানেই ব্যবসায়ীর সংখ্যা কইম্মা যাইতে আছে। এমনে চললে একসময় শুঁটকির ব্যবসা করারই মানুষ থাকপে না। এই ব্যবসা বন্ধ হইরা দিয়া পেডের দায় অন্যকিছু হরা লাগবে।’- কথাগুলো বলছিলেন উপকূলীয় পটুয়াখালী জেলাধীন সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার শুঁটকি বিক্রেতা মো. নিজাম উদ্দিন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলোতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় শুঁটকির ক্রেতা ও পাইকার হ্রাস পেয়েছে। জীবিকার জন্য অনেকে শুঁটকি উৎপাদনের কাঁচামাল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। শুঁটকি ব্যবসার ক্রমাগত এমন মন্দাবস্থা দেখে এই ব্যবসা বাদ দিয়ে অনেকেই ছুটছেন শহরে। জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিচ্ছেন শ্রম বিক্রির অন্য পেশা। এমন তথ্যের বাস্তব চিত্র দেখা গেল উপকূলীয় জেলা বরগুনার শুঁটকি পল্লীগুলোতেও।

জানা যায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার আশার চর, পাথরঘাটা উপজেলার নতুন বাজার ও রুহিতা এলাকায় জেলার তিনটি বৃহৎ শুঁটকি পল্লী রয়েছে। এ তিন এলাকার হাজারও জেলে শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত।বরগুনার শুঁটকি পল্লী ঘুরে দেখা যায়, শুঁটকি পল্লীতে মাছ শুকোতে ব্যস্ত কর্মী। তবে ভরা মৌসুম থাকলেও পর্যাপ্ত ক্রেতা নেই। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু ক্রেতা থাকলেও তা সরবরাহের তুলনায় অনেক কম। অপরদিকে, সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় শুঁটকি উৎপাদনকারীসহ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্যরা পরেছেন চরম সংকটে। অনেকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে নামমাত্র দামে শুঁটকি বিক্রি করছেন।

 



আশার চরের শুঁটকি উৎপাদনকারীরা জানান, প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতেই পল্লীতে ছুটে আসেন পর্যাপ্ত ক্রেতা। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও ক্রেতার দেখা নেই। তারা আরো জানান, শুঁটকি সংরক্ষণের উন্নত ব্যবস্থাও এখানে নেই। ফলে তাদের উৎপাদিত শুঁটকি স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে অনেক কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ক্রেতা কমে যাওয়ায় শুঁটকি না দিয়ে কাঁচা মাছই বিক্রি করে দিচ্ছেন জেলেরা। ২০ বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আশার চর শুঁটকি পল্লীর পাইকার মো. বাদল মিয়া। তিনি বলেন, ‘একসময় বরগুনায় অনেক শুঁটকি পল্লী ছিল। নানা সমস্যায় সেগুলো বন্ধ হয়ে এখন মাত্র তিনটি রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি উৎপাদিত হয় তালতলীর এই আশার চরে।’ বাদল মিয়া আরো জানান, আশার চরে প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে অস্থায়ী ঘর তোলেন অনেক জেলে। তারা সাগর ও নদী থেকে বাইন, ছুরি, লইট্টা, ভোল, কোড়াল, রুপসা, পোয়া, ফ্যাসা, তপসী, বৈরাগী, ফইলসাসহ আরো অনেক নাম না জানা মাছ ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করেন। মৌসুম শেষে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে জেলে ও শ্রমিকদের বছরের বাদবাকি দিন।

হারুন আকন, জামাল আকন, বেল্লাল মৃধাসহ আরো কয়েকজন শুঁটকি উৎপাদনকারী জানান, ধারদেনা ও দাদন নিয়ে আশার চরে আসে জেলেরা। তবে এবছর এখনও পর্যাপ্ত ক্রেতার দেখা না পেয়ে ঋণ ও দাদনের টাকা কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে দিশেহারা জেলেরা। তারা জানান, বঙ্গোপসাগরের একদম তীরে হওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনের জন্য আশার চর ভালো জায়গা। কিন্তু এখান থেকে শুঁটকি পরিবহনের ভালো ব্যবস্থা নেই। কম মূল্যে এখানে শুঁটকি পাওয়া যায় বলে প্রতি বছর ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু এবার তেমন একটা ক্রেতার দেখা নেই। বস্তা ভর্তি শুঁটকি মাছ নিয়ে অপেক্ষা করেও দেখা মিলছে না ক্রেতার। উপকূলীয় এসব অঞ্চলে যদি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ফিডমিলসহ শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে উঠতো তাহলে জেলেদের এমন বিপাকে পড়তে হতো না বলেও জানান তারা।

 



প্রায় ১৫ বছর শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাথরঘাটার নতুন বাজারের ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক মো. সেলিম ফরাজি। তিনি বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে নতুন বাজার ও রুহিতা এলাকায় দূর হতে ব্যবসায়ীরা আগের মতো এখন আর শুঁটকি কিনতে আসেন না। কারণ এখান থেকে শুঁটকি কিনে শহর পর্যন্ত নিতে অনেক টাকা পরিবহন ব্যয়ে চলে যায়। তবে কক্সবাজারসহ অন্য জায়গা থেকে শুঁটকি কিনলে পরিবহন খরচ এত বেশি লাগে না বলেও জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়