ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তুর্কি, মোগল হয়ে মিরপুরের কাবাব

শরীফ আজাদ প্রীতম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তুর্কি, মোগল হয়ে মিরপুরের কাবাব

শরীফ আজাদ প্রীতম : কাবাব, জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি। কাবাব ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সুস্বাদু ও লোভনীয় যত খাবার রয়েছে তাদের মধ্যে কাবাব অন্যতম। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মুখরোচক সব খাবারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাবাব আজও বেঁচে আছে শান-শওকতের সঙ্গে। কিন্তু পছন্দনীয় খাবার হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই হয়তো জানেন না, কাবাবের উৎপত্তি কীভাবে? বা এর ইতিহাসই-বা কী?

কাবাব বা শুল্যমাংস যাই বলা হোক, এর স্রষ্টা আদিম মানুষেরা। তারা যখন আগুনের ব্যবহার শেখে তখন শিকার করা পশু বা পাখির মাংস আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করে। তবে এই পোড়ানো বা ঝলসানো মাংসকে প্রকৃত কাবাবের রূপ দেন রাজা-বাদশারা। রাজা কিংবা রাজপুত্র, শখের বশে বের হতেন শিকারে। মাঝে মধ্যে দুই বা ততোধিক রাজা একত্রিত হয়ে যাত্রা করতেন শিকারের উদ্দেশ্যে। শিকার করা পশুর মাংস আগুনে ঝলসে সামান্য লবণ ও লেবু দিয়ে উদরপূর্তি করতেন। খেতে খেতেই সেরে নিতেন অভ্যন্তরীণ কূটনীতি।

সাদ উর রহমান রচিত ‘ঢাকাই খাবার ও খাদ্য সংস্কৃতি’ গ্রন্থে বিস্তারিত জানা যায় কাবাব সম্পর্কে। কাবাব শব্দটি আরবি ‘কিবাব’ শব্দ থেকে এসেছে। কাবাব জনপ্রিয় করার পেছনে তুর্কিদের ভূমিকা অনেক। তুর্কি সৈন্যরা ধারালো তলোয়ারে গাঁথা মাংস আগুনে পুড়িয়ে খেত। কালক্রমে সেই স্থানে এলো শিক বা তার। শিকে তৈরি কাবাব তুর্কিদের বেশি প্রিয় ছিল। তবে কাবাবে রাজকীয় স্বাদ আনার পিছনে মোগলদের অবদান বেশি। প্রথমদিকে তুর্কিরা কাবাব তৈরি করতে লবণ, লেবু বা বিভিন্ন গুল্ম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করত। কিন্তু মোগলরা এতে গোলাপজল, কেওড়া, কস্তুরি, পোস্ত নানা ধরনের সুগন্ধি মসলার ব্যবহার শুরু করল। এই মসলার ব্যবহারই পরবর্তীতে কাবাবে এনেছে নতুন স্বাদ ও বৈচিত্র্য। মোটামুটি এই হলো কাবাবের আনুমানিক ইতিহাস।

যাই হোক বর্তমানে এই রাজকীয় খাবার খেতে শুধু হোটেল-রোস্তোরাঁর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভ্রাম্যমাণ দোকানেও অবাধে মিলছে কাবাব, যা ‘পথকাবাব’ হিসেবে পরিচিত। পথের কাবার খেতে চলে আসতে পারেন মিরপুর-১ নম্বরের ১নং রোডে। আন-নুরী-জামে-মসজিদের পাশে। এখানে বিকেল থেকে শুরু হয় কাবাবের এক বিশাল বাজার। বাজারজুড়ে পাওয়া যায় কাবাবের মন মাতানো গন্ধ যা জিভে জল এনে দিতে বাধ্য। প্রথমদিকে এখানে শুধুমাত্র টুপি, পাঞ্জাবি ও ফলের পসরা বসত। বিগত ৭-৮ বছরে এখানে পথের দু’পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু খাবারের দোকান। পথের ওপর বহনকারী কাবাব ও চাপের গাড়িগুলোর প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বেশি। ঢাকার অনেক জায়গাতেই কাবাব পাওয়া যায়। এর বাইরেও কিছু বিখ্যাত কাবাবের বাজার রয়েছে। যেমন: পুরান ঢাকার চকবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর-১ এর বেনারসি পল্লী ইত্যাদি। এই তালিকায় নতুন সংযোজন মিরপুর-১ এর কাবাবের বাজার।

পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরের কাবাবের সঙ্গে এখানকার কাবাবের পার্থক্য হলো, কাবাবগুলো কয়লায় ঝলসানো নয় বরং তেলে ভাজা। এখানে প্রায় ১২টি কাবাবের দোকান রয়েছে। তার মধ্যে ‘ঢাকা কাবাব ঘর’ ও ‘আল্লাহর দান কাবাব ঘর’ বেশি জনপ্রিয়। আল্লাহর দান কাবাব ঘরে ১৫ থেকে ১৬ ধরনের কাবাব পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো টিক্কা, জালি কাবাব, শামি কাবাব, বিফ কিমা, মাটন কিমা, শিক কাবাব, বিফচাপ, চিকেন চাপ, মাটন চাপ, গিলা-কলিজা, ক্ষিরি, বট, তিল্লি ইত্যাদি। শিক কাবাব, বিফ চাপ, মাটন চাপ ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে, আর বাকিগুলোর দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা। কাবাব ও চাপের সহকারী পদ হিসেবে থাকছে লুচি ও পরোটা। লুচি ও পরোটার দাম ৫ টাকা, আর স্বাদবর্ধক অনুঘটক হিসেবে থাকছে টক মিষ্টি দইয়ে ডোবানো শসার সালাদ। মজার বিষয় হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার ফুড রিভিউয়ের বদৌলতে মিরপুরের বাইরের মানুষজনও এখানে ভিড় করছে কাবাবের স্বাদ নিতে। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রশ্ন থাকতে পারে- এই পথকাবাবগুলো খেতে সুস্বাদু হলেও কতটা স্বাস্থ্যসম্মত?
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়