ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নাব্যতা হারিয়ে বিপন্ন ভুলুয়া

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নাব্যতা হারিয়ে বিপন্ন ভুলুয়া

জুনাইদ আল হাবিব : ‘আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।’ ছোটবেলায় বইতে পড়া কবির এ কবিতাটির লাইন, শব্দ চয়নগুলো বার বার মনে পড়ছে। শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতা ঠেলে গ্রামের দিগন্ত ছুঁতে বের হলাম এক সময়ের ভয়াল নদী ভুলুয়া পাড়ে। ভুলুয়ার এপাশ ওপাশের দূরত্ব এখন দেড়শ ফুট। তবে দৈর্ঘ্যের বিচারে এর বর্তমান দূরত্ব অর্ধশত কিলোমিটার। একেবারে নোয়াখালীর উদয় সাধুর হাট থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি সীমানা ছুঁয়ে ভুলুয়া এখন আছড়ে পড়েছে মেঘনার মোহনায়।

ভুলুয়া এক সময় বেশ ভয়ানক ছিল। প্রবীণদের মতে, এর বুকে নৌকা বয়ে চলতে হলে গরু-ছাগল, হাস-মুরগি মানত করা লাগত। তবে এখনকার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। ভুলুয়ার বুক চিরে জেগে ওঠা বিশাল আয়তনের চরে মানুষের বসবাস দিন দিন বাড়ছে। নাব্যতা হারিয়ে বিপন্ন ভুলুয়া। ভুলুয়া নদীর জীববৈচিত্র বেশ হুমকির মুখে। জীবিকার চাহিদা মেটানোর জন্য ভুলুয়া থেকে মাছ শিকার করে বেঁচে আছেন ভুলুয়াকে ঘিরে বসবাসরত মানুষেরা। এতে একদিকে যেমন ভুলুয়ার বুকে দিন দিন মাছের পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে নাব্যতা সংকটে ভুলুয়া নদীতে বাড়ছে না মাছের উৎপাদন।

ভুলুয়া এতটা গভীর যে, শুষ্ক মৌসুমে মানুষের হাঁটুসম পানি থাকে এতে। মেঘনার মোহনার সঙ্গে এর নিবিড় সখ্যতা থাকলেও ভুলুয়ায় নাব্যতা সংকটের কারণে ভুলুয়ার বুকে জল আসে না। অবশ্য মেঘনার এতে কোনো হিংসে নেই। ভুলুয়া খনন করলে মেঘনার মোহনা থেকে ভুলুয়ার বুকে জল আসবে অনায়াসে।

ভুলুয়া নদী খননের দাবি স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের। কিন্তু তবুও সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব গত কয়েক বছর আগে ভুলুয়া নদীর কিছু অংশ খনন করায় ওখানের কৃষকদের মুখ থেকে হাসির গল্প শোনা গেছে।

কমলনগরের চর কাদিরার ভুলুয়া পাড়ের বাসিন্দা সফি উদ্দিন। বয়স ঠিক ৬৫ ছুঁয়েছে। ভুলুয়া পাড়ের চা দোকানে বসে চা খাচ্ছেন আর গল্পের আসর জমিয়ে দিলেন সমবয়সীদের সঙ্গে। সাঙ্গ-পাঙ্গদের সঙ্গে গল্পের মাঝেই হাজির হলাম। এবার তাদের গল্পের মোড় ভিন্ন দিকে। সবাই এবার অভিযোগ দিচ্ছে, ভুলুয়া খনন হয় না। এমন সময় মোখলেছুর রহমানের কণ্ঠে, ‘রব সাহেব নদী খনন করার পর আমরা ভালো ধান পাই। যেমন ধরেন, আগে ছয় গন্ডা জমিতে ধান হতো দুই মণ। আর এখন সেই ছয় গন্ডা জমিতে ধান হয় দশ থেকে বারো মণ।’

 



সফি উদ্দিন এর সঙ্গে সায় দিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘বর্ষাকালে ফসল ফলাতে সমস্যা হয়, বীজতলার চারাগুলো পঁচে যায়, আমাদের ঘরের সমান পানি উঠে যায় আর শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না। কিন্তু রব সাহেব ভুলুয়া নদী একটু খনন করার পর আমাদের ফসল ফলাতে অনেক সুবিধা হয়। এখন যদি রব সাহেবের মতো পুরো ভুলুয়া নদী খনন করা হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষ খেয়ে বাঁচতে পারবে।’

ভুলুয়া পাড়ের ওই চা দোকানে আড্ডারত আবদুল হাসিম, আবদুল মালেক, মো. মুসলিম, আবদুর রবসহ বহু মানুষের কাছ থেকে এমন তথ্যের খোঁজ মিলে।

চর কাদিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন হাওলাদার এ বিষয়ে বলেন, ‘ভুলুয়া নদী খনন করা খুব জরুরি। ভুলুয়া নদীতে মাঝে মাঝে কিছু অসাধু লোক জাল বসিয়ে পানি চলাচলের বিঘ্নতা ঘটায়। এজন্য জলাবদ্ধতা এখানে আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এ বিষয়গুলোও একটু খেয়াল দেয়া জরুরি। ভুলুয়া খনন করলে ভুলুয়ার পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমেও ইরি ধান উৎপাদন সম্ভব।’

ভুলুয়ার এমন সংকট মোকাবেলায় আশ্বাস দিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ভুলুয়া নদী নিয়ে তেমন কোনো দাবি আমরা পাইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরাদ্দ আসার পর লক্ষ্মীপুরে আমরা দুইটা খাল খনন করছি। এখন যদি ভুলুয়া নদী খনন চেয়ে কোনো আবেদন পাই, তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পড়ুন : 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়