ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনন্য জীবনগল্পে আশুলিয়ার অনন্যা

হাসিব জুবায়েদ সিয়াম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ২২ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনন্য জীবনগল্পে আশুলিয়ার অনন্যা

অনন্যা বণিক

হাসিব জুবায়েদ সিয়াম : হিজড়াদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হননি, এমন মানুষ রাজধানী ঢাকায় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সকলে এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তা কিন্তু নয়, আছে ব্যতিক্রমী কিছু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। যারা ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা মানুষকে হেনস্তার মাধ্যমে টাকা রোজগার করে জীবন-যাপন করতে চাননা, অন্যদশটা সাধারণ মানুষের মতোই সমাজ স্বীকৃত পেশার মাধ্যমে বাইতে চান জীবন সমুদ্রের তরী।

এমনই একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায়। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটির নাম অনন্যা বণিক।

তিনি তৃতীয় লিঙ্গের একজন হয়েও সফলতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং কাজ করছেন হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে। উত্তরণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এডিশনাল ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় তিনি ‘উত্তরণ বিউটি পার্লার’ নামে একটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায়। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল পার্লারটি উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। দক্ষ পরিচালনার স্বাক্ষর রেখে সম্প্রতি তিনি আরো একটি বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন সাভারের হেমায়েতপুরে। তার দুটি পার্লারে বর্তমানে কর্মরত আছে চারজন হিজড়া কর্মীর পাশাপাশি দুজন নারী কর্মী। দুটি পার্লার থেকে তার গড়ে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা।

পার্লার দুটি পরিচালনা ছাড়াও বর্তমানে তিনি সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ‘সাদাকালো’ নামের একটি হিজড়া সংগঠনের। তবে ইতোমধ্যেই হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেছেন আইসিডিআরবি, আরটিএম, এইচআরসি, সুস্থ জীবন এবং বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে। তাছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আয়োজিত ভুটান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে।

তার ভবিষ্যত পরিকল্পনায় রয়েছে, একটি ভ্রাম্যমাণ বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যবসায়িক সফলতা ধরে রাখতে এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে প্রযুক্তির উন্নয়নকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে চান আর তাই ভ্রাম্যমাণ পার্লারটি পরিচালনা করবেন মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে এমনটিই জানান, পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা অনন্যা বণিক।

অনন্যা বণিকের বর্তমান জীবনের গল্প যতটা সফলতার, তার চেয়ে আরও বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে সেদিন কৈশোর পেরোনোর আগেই তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তার পরিবার। তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আর কেউ যাতে আমার মতো নিজের পরিবারের কাছে বৈষম্যের শিকার না হয়, সমাজের কাছে এটা আমার অনুরোধ। সরকার আমাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও গেজেট প্রকাশ করেনি তাই প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া সমাজও আমাদের বাঁকা চোখেই দেখে।’

অদম্য ইচ্ছা, পরিশ্রম আর সততা সবকিছুই আছে অনন্যার জীবন গল্পে, হয়তবা এজন্যই লিঙ্গ বৈষম্যের পাহাড়সম দেয়াল টপকে হাঁটছেন সাফল্যের পথে।
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়