ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রক্তাক্ত তটরেখা

খেয়াঘাটের আর্তচিৎকার আজও অম্লান

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৬ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেয়াঘাটের আর্তচিৎকার আজও অম্লান

রফিকুল ইসলাম মন্টু : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। মার্চে মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারা দেশ। সবার প্রত্যয় ছিল একটাই- দেশকে শত্রুমুক্ত করা। যুবক-তরুণরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অবশেষে আসে মুক্তি। সারা দেশের ন্যায় মুক্তি সংগ্রামের সেই ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল উপকূলীয় জনপদের তটরেখা পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব ঐতিহাসিক তথ্যাবলী নিয়ে ধারাবাহিকের আজকের পর্বে ভোলা জেলা

‘ওইখানে লাইনে দাঁড় করিয়ে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করেছে পাকিস্তানি হায়েনারা। দূরে গ্রামবাসী শুনেছে আর্তচিৎকার। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে মানুষগুলো ঢলে পড়েছে ছোট তেঁতুলিয়ার পানিতে। গুলি করে যাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জীবিত মানুষদের বাঁচিয়ে দিয়েছি। রাতভর পাহারা দেওয়ার পর অরুণ কুমার নামের একজনকে চিকিৎসার জন্য নৌকায় তুলে দেই। দূরের এক মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে যাওয়ার পর তার চিকিৎসা হয়। তিনি বেঁচে যান।’

ভোলার খেয়াঘাটের গণহত্যার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন ভোলা সদরের চর সামাইয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকালি গ্রামের খোরশেদ আলম (৭৫)।

তিনি জানান, ভোলা খেয়াঘাট নামে পরিচিত স্থানটি এখন লঞ্চঘাট। লঞ্চ টার্মিনালের কাছে ছিল খেয়া ঘাট। এপার থেকে ওপারে মানুষজন পারাপার করতো ছোট্ট একটি নৌকা। যুদ্ধকালে ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো।

একদিনের গল্প বলছিলেন খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই আমরা হত্যার শিকার মানুষদের আর্তচিৎকার শুনতাম। একদিন হানাদার বাহিনী হত্যাকাণ্ড শেষ করে চলে যাওয়ার পর আমরা খেয়াঘাটের দিকে এগোই। সঙ্গে ছিলেন সিদ্দিক হাওলাদার নামের আরেকজন সমবয়সী স্থানীয় বাসিন্দা। তারা শুনতে পান- একজন বলছে- ‘মা, তুমি তো পাগল হয়ে গেছো। আমি এখনো বেঁচে আছি। আমাকে গুলি করেছে ওরা।’ খোরশেদ ও সিদ্দিক ওই জীবিত ব্যক্তিকে ধরে বাগানের মধ্যে তুলে আনেন। সারা রাত নদীর পাড়ে ভয়ের জঙ্গলে একটি মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা চলে। ভোর হওয়ার আগে নদীতে একটি নৌকা দেখতে পান খোরশেদ। ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে নৌকাটি থামিয়ে আহত মানুষটিতে তুলে দেন নৌকায়। মানুষটি এভাবে বেঁচে যান।’’

এমন হাজারো গল্প রয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। ভোলার লঞ্চ ঘাটে নেমে মুক্তিযুদ্ধের সন্ধান করি। বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে পূর্ব চরকালি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে দাইমুদ্দিন (৬২), একই গ্রামের ফজলুর রহমান মিয়া (৬৩), নূরুল ইসলাম ওরফে বাগন আলী (৬০), সিদ্দিক হাওলাদারসহ (৭০) আরো অনেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য দেন। পূর্ব চরকালি গ্রামে কোনো ধরনের আক্রমণ না হলেও এখানে মানুষের মধ্যে সারাক্ষণ আতঙ্ক বিরাজ করেছে। বহু নারী-পুরুষ ও শিশু পালিয়ে বেরিয়েছে দিনের পর দিন। এই খেয়াঘাটটি ছিল হানাদার বাহিনীর আসা-যাওয়ার স্থল। এক পর্যায়ে খেয়াঘাটকেই হানাদার বাহিনী গণহত্যার স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিদিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ বাঙালিদের এখানে ধরে আনা হতো। খেয়াঘাটে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হতো। অনেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ সাঁতরে অন্য কিনারে পৌঁছাতে পেরেছে, অনেকে আবার স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে। খেয়াঘাটের এই হত্যাকাণ্ডের কারণে আশপাশের এলাকায় সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করত।

ফজলুর রহমান মিয়া, যার বড় ভাইকে হানাদার বাহিনী ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে, তিনি স্মৃতিচারণ করছিলেন। তিনি জানান, দেশ স্বাধীনের নয় দিন আগে হানাদার বাহিনী খেয়াঘাটে অবস্থান নিয়েছিল। তার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাকে এবং ইউনুস তালুকদার নামে আরো একজনকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে হত্যা করা হয়।

তিনি জানান, খেয়াঘাটের পাড়ে দুটো তালগাছ ছিল। ওই তালগাছের পাশে এনে মানুষদের হত্যা করা হতো। লঞ্চ টার্মিনালের নিকটে খেয়াঘাটের স্থানটি দেখিয়ে

তিনি বলেন, ‘এখানেই বহু মানুষকে পাক বাহিনী গুলি করে মেরেছে। স্বাধীনতার পর হানাদার বাহিনীর মধ্য থেকে যারা ধরা পড়েছে, তাদেরকে ওই তালগাছের সঙ্গে বেঁধেই মেরে ফেলা হয়।’

ঐতিহাসিক সূত্রগুলো বলছে, হানাদার বাহিনী ভোলা শহরে প্রবেশ করে ১৯৭১ সালের ২ মে। পানি উন্নয়ন বিভাগের অতিথিশালায় তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। হানাদার বাহিনীর কমান্ডার জাহান জেব খান এই ভবনে অবস্থান করতেন। পানি উন্নয়ন বিভাগের পূর্ব পাশের দুটি ঘরই ছিল হানাদার বাহিনীর টর্চার সেল। ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা বহু লোককে এই টর্চার সেলে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। এদের লাশ পুঁতে রাখতো প্রাচীরের পাশে। প্রতি রাতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জনকে এখানে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়। অধিকাংশকে হত্যা করা হতো বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে। শুধু হত্যা আর নির্যাতন নয়, বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে এখানে ধর্ষণ করা হতো। এরপরও এরা প্রাণে রক্ষা পাননি। তাদের হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখতো পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা। ধর্ষণ, নির্যাতন আর লুটপাটের নায়ক ছিল ক্যাপ্টেন মুনীর হোসেন এবং সুবেদার সিদ্দিক। আর এসব কাজে সহযোগিতা করে শান্তি কমিটির সদস্য আর রাজাকাররা।

ভোলায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে জানা যায়, যুদ্ধকালে এ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর ৭টি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। এরমধ্যে দুটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের। সাহসী ভূমিকা রাখায় বরিশাল বিভাগে ‘বিজয়ের ৪০ বছর’ পদক পান তিনি।

এম এ তাহের জানান, দ্বিতীয় সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল বোরহানউদ্দিনের দেউলা তালুকদার বাড়ি। দেউলার দ্বিতীয় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা যায় সাত সেনা। আবুগঞ্জের গরুচোখা নামক এলাকায় সন্ধ্যার পর নৌপথে কয়েকজন রাজাকার নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে আসছিল। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি টের পেয়ে তাদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক মুক্তিবাহিনী বেড়িবাঁধের ওপর অবস্থান করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় তারা।

এম এ তাহের আরো জানান, ভোলার সবচেয়ে ভয়াবাহ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাংলাবাজারে। ভোলা থেকে হানাদাররা বাংলাবাজারে আসছে- এমন খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাবাজারের ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। কিন্তু হানাদার বাহিনী আসে বাঘমারা নামক এলাকা থেকে। তারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালি মিলে প্রায় ৩০০ মানুষ শহীদ হন।

বাংলাবাজারের সম্মুখযুদ্ধ প্রসঙ্গে আলাপ হয় বাংলাবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের সঙ্গে। তার বয়স এখন ৭০ বছর।

তিনি জানান, সেদিন ছিল ২৭ অক্টোবর ’৭১। ফজরের নামাজের পর চারিদিক কেবল পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। হানাদার বাহিনী নৌপথে বাঘমারা থেকে উঠে আসে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত ছিলেন। তারা রাত থেকেই এখানে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৭টার দিকে হানাদার বাহিনী ভারি অস্ত্র নিয়ে বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে থাকে। তারা বাজার ঘিরে ফেলে। বাংলাবাজার থেকে সোজা ভোলা সদরে যাওয়ার পথের একটি ব্রিজ ভেঙে দেওয়ায় হানাদাররা ওপথে আর বাংলাবাজার যেতে পারেনি। তবে তারাও দূর থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ সময় এযুদ্ধে অংশ নেন। হানাদার বাহিনীকে দমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের হাতে ছিল না প্রয়োজনীয় অস্ত্র। সারা দিনের যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ সাধারণ বাঙালির প্রাণ হারানোর পর এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজয় ঘটে। যুদ্ধের পর সেখানে বহু লাশ পড়েছিল। দাফনের লোক ছিল না বলে কুকুরে খেয়েছে অনেক মৃতদেহ। মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজয়ের পর এই এলাকায় বহু বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী।

জীবন-মরণ যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার পাশে গুলি খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছটফট করছে, আমি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। তবে বাংলাবাজার পরাজয়ের পরও মুক্তিযোদ্ধারা দমে যাননি। ১০ দিন পর তারা দৌলতখান ঘেরাও করে। সেখানে পাকিস্তানিরা পরাজিত হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে ভোলা সদরে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।’

ভোলার বাংলাবাজার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদের মধ্যে একজন বল্লভ চন্দ্র দাশ। দৌলতখানের জয়নগর ইউনিয়নের উত্তর জয়নগর গ্রামে তার বাড়ি ছিল। পেশায় ছিলেন শিক্ষক। বল্লভ চন্দ্র দাশের ছেলে শুভ দাশের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মায়ের কাছে শুভদাশ শুনেছেন, তার বাবা ওপার থেকে বহু মানুষকে নৌকায় নদী পার করে এনে এপারে পানের বরজে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এভাবে আরো অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। খাবার, পানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র  সরবরাহ করেছেন এবং পালিয়ে থাকতে সহায়তা করেছেন। যুদ্ধের সময় বাংলাবাজারের নাম ছিল ‘টনির হাট’। শত্রুমুক্ত হওয়ার পর এই নাম বদলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ঘুইংগারহাট যুদ্ধ হয় ২৭-২৮ অক্টোবর। এই এলাকাটি ভোলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য সেখানে ১০টি বাংকার খনন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ২৭ অক্টোবর হানাদার বাহিনী লঞ্চে বাগমারা এসে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি দল বাংলাবাজারের দিকে যায়, আরেকটি দল যায় ঘুইংগারহাটের দিকে। ঘুইঙ্গারহাটসংলগ্ন শরৎ ডাক্তারের বাড়ি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। কমান্ডার ফারুক বাচ্চু ২৭ অক্টোবর কয়েকজনকে পাহারায় রেখে ক্যাম্পে চলে যান। তিনি কমান্ডার আলী আকবরের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দেশ আসেনি।  হানাদার বাহিনী ছদ্মবেশে রাজাকারদের নিয়ে ঘুইংগারহাটে পৌঁছে। এসময় তারা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে ফেলে। খবর পেয়ে ফারুক বাচ্চু ৫০ জনের একটি দল সেখানে পাঠান। নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন। হানাদার বাহিনী বাগানে পালিয়েছিল। মনিরের দল কাছে এলে সেনারা গুলিবর্ষণ করে। মনির ও শামসুদ্দিন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।

ঘুইংগারহাট প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুইংগার হাটে সারা দিন গোলাগুলি হয়। আছরের নামাজের আগে আগে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়।’

১৯৭১ সালের ৪ মার্চ ভোলা কলেজ মাঠে প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু হয় কলেজের ডামি রাইফেল দিয়ে। ৭ মার্চের ভাষণের পর আরো জোরালোভাবে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুদ্ধের প্রস্তুতি চলে। ভোলার বাংলা স্কুল, সরকারি স্কুল ও কলেজে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, কলেজ মাঠে প্রশিক্ষণ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ট্রেনিং সেন্টার হয় বাংলাবাজার। বাংলাবাজার মাদ্রাসা মাঠে ট্রেনিং ও সভা হতো। হাবিলদার আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে এ কেন্দ্র।

হানাদার বাহিনী মোটামুটি বিনা বাধায় বরিশাল থেকে ভোলা প্রবেশ করে। ভোলা ছিল তখন ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত জনপদ। হানাদার বাহিনীর দোসর আবদুল্লাহ মৌলভী ছিল ভোলার ত্রাস। হানাদার বাহিনী, রাজাকার, শান্তি কমিটি হিন্দুদের বাড়িঘর লুট হত্যা, ধর্ষণ চালায়। হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় শান্তি কমিটির সাহায্যে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে ভোলা খেয়াঘাটে (বর্তমানে লঞ্চঘাট) লাইনে দাঁড় করিয়ে অথবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করতো। অনেককে ওয়াপদাতে নির্যাতন করে হত্যা করে ওয়াপদার পেছনে দেওয়ালের বাইরে  মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। জুলাই থেকে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর এসকল নির্যাতনের দাঁতভাঙা জবাব দিতে শুরু করে।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৯ ডিসেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা ওয়াপদা এলাকার চারিদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ঘিরে ফেলি। এক সময় তারা কোনো দিকে যাওয়া পথ না পেয়ে ভোর রাতের দিকে গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। লঞ্চযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর এলাকায় মিত্রবাহিনীর হামলায় হানাদারদের লঞ্চটি মেঘনায় ডুবে যায়। ভোলার আকাশে মুক্তির বারতা। চারিদিক থেকে মানুষজন ভোলা সদরে এসে মুক্তির উৎসবে যোগ দেয়। 

তথ্যসূত্র :
১) বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ;
২) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর;
৩) বরিশাল পিডিয়া।

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৯/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়