ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যে ৯ প্রাণী শরীরের রঙ পরিবর্তন করতে পারে

উদয় হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ৯ প্রাণী শরীরের রঙ পরিবর্তন করতে পারে

গোল্ডেন টরটয়েজ বিটল

উদয় হাসান : রঙ পরিবর্তনকারী প্রাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে আপনি সম্ভবত ক্যামেলিয়নের কথাই ভাববেন। কিন্তু অন্যান্য কিছু বিস্ময়কর প্রাণীও তাদের শরীরের রঙ পরিবর্তন করে থাকে। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্যে হলো শত্রু থেকে আত্মরক্ষা। শরীরের রঙ পরিবর্তন করতে পারে এমন ৯টি প্রাণী সম্পর্কে এ প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো।

* গোল্ডেন টরটয়েজ বিটল
এই সুন্দর, উজ্জ্বল পতঙ্গটি বৈজ্ঞানিকভাবে ক্যারিডোটেলা সেক্সপাঙ্কটাটা নামে পরিচিত। শরীরের রঙ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি যেন জাদুকর। এটি তার নিজের সোনালি রঙ পরিবর্তন করে কালো দাগযুক্ত (ব্ল্যাক স্পটেড অথবা ডার্কার স্পটেড) কমলা রঙ ধারণ করতে পারে। সায়েন্টিফিক আমেরিকা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার এই পতঙ্গটি দুটি কারণে রঙ পরিবর্তন করে: প্রজনন করতে এবং শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে।

* কাটলফিশ
এই সেফালোপড বা বড় মাথাযুক্ত ও খোলসাবৃত কোমল অঙ্গের প্রাণীটি ক্যামোফ্লেজের মাস্টার, অর্থাৎ এটি ছদ্মবেশ ধারণ করতে ওস্তাদ। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পেতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে প্রয়োজনীয় রঙ বা প্যাটার্ন ধারণ করতে পারে, তাই এটি ডলফিনের মতো ক্ষুধার্ত শিকারির চোখে অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে। এটির ত্বকের রঙ এতই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এটিকে হাই ডেফিনিশন টিভির সঙ্গে তুলনা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণীটি তার আকৃতিও পরিবর্তন করে।

* পিকক ফ্লাউন্ডার
গভীর মহাসাগরে বসবাসকারী এই প্রাণীটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শরীরের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। এটি ছদ্মবেশে সেসব মাছের কাছে যায় যেগুলোকে এটি ডিনারের আইটেম বানাতে চায়! বিজ্ঞানীদের মতে, যখন এটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে, এটির চোখ এটির মস্তিষ্কে একটি বার্তা পাঠায়- এই বার্তা অনুসারে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় যা এটির ত্বকের পৃষ্ঠে প্রয়োজনীয় রঙের যোগান দেয়।

* সি-হর্স
ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট আকারের এই প্রাণীটির রঙ পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো শিকারিকে এড়িয়ে চলা, কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়। শিকার ধরতে, অন্য সি-হর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং সঙ্গীকে আকর্ষণ করতেও এটি রঙ পরিবর্তন করে থাকে। বিপজ্জনক পরিস্থিতে একটি সি-হর্স কয়েক সেকেন্ডেই রঙের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। কিন্তু সঙ্গীকে আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে রঙ পরিবর্তনে দীর্ঘসময় লাগে।

* প্যাসিফিক ট্রি ফ্রগ
আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের এই প্রাণীটি রঙ পরিবর্তনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় গাছের ওপর কাটায়। ব্যাকগ্রাউন্ড, তাপমাত্রা ও মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে এটির রঙ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এসবকিছু এই উভচর প্রাণীকে র‍্যাকুন, বড় শিকারী পাখি ও সাপ থেকে নিরাপদ রাখে।

* হোয়াইটব্যান্ডেড ক্র্যাব স্পাইডার
এই প্রাণীটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পাওয়া যায়। নারী ক্র্যাব স্পাইডার দ্রুত সাদা থেকে হলুদ রঙ ধারণ করতে পারে, কিন্তু হলুদ থেকে সাদা রঙে ফিরে অধিক ধীরে। ইন্ডিয়ানার মুনসিয়েতে অবস্থিত বল স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, এটি মৌমাছির মতো পলিনেটর শিকার করতে ফুলের পাপড়ির সঙ্গে মিল রেখে রঙ ধারণ করে। নারী ক্র্যাব স্পাইডারের তুলনায় পুরুষ ক্র্যাব স্পাইডার ছোট এবং রঙ পরিবর্তন করতে পারে না। হলুদ থেকে সাদা রঙে আসতে অধিক শক্তির প্রয়োজন হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিজ্ঞানীরা, একারণে এ পরিবর্তনে দীর্ঘসময় লাগে।

ঘড়ির কাটার দিকে- হোয়াইটব্যান্ডেড ক্র্যাব স্পাইডার, আর্কটিক ফক্স, মিমিক অক্টোপাস এবং গ্রীন অ্যানোল

* আর্কটিক ফক্স
এটি রঙ পরিবর্তনকারী স্পাইডারের মতো দ্রুত রঙ পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু আর্কটিক ফক্স হলো অন্যতম স্তন্যপায়ী প্রাণী যার লোমের রঙ শীতকালে পরিবর্তিত হয়। এই প্রাণীর রঙ পরিবর্তনের সম্ভাব্য কারণ হলো: শিকারির চোখকে ফাঁকি দেওয়া এবং ঠান্ডা তাপমাত্রায় তুলনামূলক বেশি তাপ ধরে রাখা। স্নোশো হেয়ার, শর্ট-টেইলড উইজেল এবং পিয়ারি ক্যারিবোর মতো আর্কটিক ফক্সও বরফাচ্ছন্ন মৌসুমে সাদা রঙ ধারণ করতে পারে।

* মিমিক অক্টোপাস
এটির বৈজ্ঞানিক ল্যাটিন নাম হলো থাউমোক্টোপাস মিমিকাস। এই সেফালোপডটি ভালো কারণে তার নাম পেয়েছে। এটি শরীরের রঙ ও আকৃতি পরিবর্তন করে জলদেশের গভীরে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, যেমন- লায়নফিশ, জেলিফিশ, স্টিনগ্রে এবং সি স্নেক। কেন তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে তা সম্ভবত আপনি অনুমান করতে পেরেছেন: এই অবিশ্বাস্য স্মার্ট প্রাণীটি শিকারির চোখকে ফাঁকি দিতে এমনটা করে থাকে।

* গ্রীন অ্যানোল
কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না যে কেন এই গিরগিটিটি সবুজ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে আবার সবুজ রঙে ফিরে আসে। এটি বাদামী পাতায় বসে নিজের রঙকে সবুজই রেখে দেয় এবং সবুজ পাতায় বসে শরীরের রঙকে বাদামীই রেখে দেয়! তাহলে লাভটা কি হলো? এই প্রাণীর এমন আচরণের কোনো উপকারিতা আছে কিনা তা নিয়ে এখনো অনেক বিতর্ক রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়