ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্বে রাজপরিবারের বিয়ের যত কেলেঙ্কারি

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ৮ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্বে রাজপরিবারের বিয়ের যত কেলেঙ্কারি

মাহমুদুল হাসান আসিফ: বিয়ে মানেই আনন্দঘন পরিবেশ। বর-বধূকে ঘিরে সৃষ্টি হয় সেই আনন্দের। তবে বিয়েতে আনন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে নানা বিতর্ক, গুজব এবং ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিয়ের ক্ষেত্রে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে আলোচিত-সমালোচিত হয়। বিখ্যাত রাজপরিবারগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং ওই পরিবারের সদস্যদের বিয়ে নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়। রাজপরিবারগুলোর এমন ৯টি বিয়ের কেলেঙ্কারি নিয়ে এই লেখা।

 


পরিবারে পুনরায় মেনে নিতে আপত্তি : রানী এলিজাবেথের ছেলে রাজকুমার অ্যান্ড্রুর বিয়ে হয় সারা ফারগুসনের সঙ্গে। বিয়ের পর রাজপরিবারের নিয়মানুসারে ফারগুসনকে ইয়র্ক প্রদেশের ডিউক পদবি দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে ফারগুসন এবং অ্যান্ড্রুর ডিভোর্স হয়ে যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে ফারগুসন অ্যান্ড্রুর সঙ্গে পুনরায় বাস করতে শুরু করেন। রাজপরিবার ফারগুসনকে পুনরায় পরিবারের সদস্য হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। ফলে ২০১১ সালে রাজকুমার উইলিয়াম এবং কেট মিডলটনের বিয়েতে ইয়র্কের ডিউক ফারগুসনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ তার দুই মেয়ে রাজকুমারী ইউজিন এবং বিট্রেস সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ফারগুসন এক টিভি শোতে বলেন, ‘আমি সেখানে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে সুসজ্জিত হয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও একজন রাজপরিবারের সদস্য, কিন্তু আমাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ আমিও একদিন বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই এই পরিবারের সদস্য হয়েছিলাম।’ এই ঘটনা তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়।

 


রাজা অ্যাডওয়ার্ড-৭ এর সিংহাসন ত্যাগ : ১৯৩৬ সালে অ্যাডওয়ার্ড-৭, পিতার মৃত্যুর পর ব্রিটেনের রাজা হন। রাজা হবার আগে থেকেই ওয়ালিস ওয়ারফিল্ড সিম্পসনের সঙ্গে তাঁর প্রণয় ছিল। সিম্পসন তাঁর প্রথম স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স পাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে বহাল থাকা অবস্থায় তিনি অ্যাডওয়ার্ডের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। পরের বছর সিম্পসন দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স লেটার পেলেও রাজপরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। এ কারণে অ্যাডওয়ার্ড-৭ সিংহাসন ছেড়ে দেন এবং ১৯৩৭ সালে সিম্পসনকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে রাজকুমার জর্জ-৬ ব্রিটেনের নতুন রাজা হন। তিনি তাঁর ভাইকে উইন্ডসর রাজ্যের ডিউকের ক্ষমতা দিতে চাইলেও সিম্পসনকে রাজপরিবারের মর্যাদা দেননি।

 


ছেলের বিয়েতে রানী এলিজাবেথ-২ অনুপস্থিত : রাজকুমার চার্লসের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে বড় ধরনের এক কেলেঙ্কারির ইতিহাস রয়েছে। ক্যামিলা পার্কার বাওয়েলের সঙ্গে চার্লসের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এই কারণে চার্লসের প্রথম স্ত্রী লেডি ডায়ানার সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। এই ঘটনায় চার্লসের মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ-২ প্রচণ্ড রাগান্বিত হন এবং তিনিসহ রাজকুমার ফিলিপ, চার্লসের বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী সময়ে শোনা যায়, রাজবধূ ডায়ানার মৃত্যুর পর রানী মাতাল অবস্থায় ক্যামিলাকে ‘ডাইনী’ বলে গালি দিয়েছিলেন।

 


মঞ্চে ডায়ানার স্বামীর নাম ভুল : ১৯৮১ সালে রাজকুমার চার্লস এবং ডায়ানার বিয়ে পড়ানোর সময় ডায়ানা হবু স্বামীর নাম ভুল করেন। তিনি অবশ্য তেমন গুরুতর ভুল করেননি। তিনি ‘চার্লস ফিলিপ’এর জায়গায় ‘ফিলিপ চার্লস’ বলে ফেলেছিলেন। দুর্ঘটনাবশত ডায়ানা এই ভুল করে বসেন। চার্লসও কম যাননি। তিনিও বিয়ে পড়ানোর সময় সঠিক শব্দ উচ্চারণ না করে ইচ্ছে করে ভুল বলেন। বিয়ের মঞ্চে চার্লসের এই আচরণ সবাইকে হতবাক করে দেয়। আমন্ত্রিত সবার বুঝতে বাকি থাকে না চার্লস এই বিয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

 


রাজকুমারের বিয়েতে পিতার অনুপস্থিতি : হ্যানোভারের রাজকুমার আর্নেস্ট অগাস্ট জুনিয়রের সঙ্গে একাটেরিনা মালিসেভার ৮ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুজনে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক বিয়ের আগেই রাজকুমারের পিতার কাছে এক বার্তা পৌঁছে যায়, “আমি আমার রাজ্য ফেরত চাই।” এ যেন বাবার সঙ্গে ছেলের দ্বন্দ্ব তৈরির ষড়যন্ত্র! রাজা আর্নেস্ট অগাস্ট-৫ সেই ফাঁদে পা দেন। ছেলের বিয়ে তিনি মেনে নেননি। তিনি সন্তানের কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তি ফেরত চান যা কিনা প্রায় এক দশক আগে হ্যনোভারের আইনসভা দেখাশোনার জন্য তাকে প্রদান করা হয়েছিল। রাজকুমার আর্নেস্ট অগাস্ট জুনিয়র পিতাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, তিনি বড় ধরনের এক ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু রাজকুমারের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষমেশ বাধ্য হয়ে জুনিয়র তাঁর পিতার কথা অগ্রাহ্য করেন। এই কারণে আর্নেস্ট নিজের ছেলের বিয়েতে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

 


বিয়ের সময়জুড়ে রাজবধূর কান্না : মোনাকোর রাজকুমার আলবার্টের বিয়ে ছিল চরম রহস্যময় এক ব্যাপার। আলবার্টের বিয়ে হয় রাজকুমারী শারলিনের সঙ্গে। তাঁদের বিয়ের পরপরই গুজব রটে যে, এটা বিয়ে নয়; ধোঁকাবাজি। বিয়ের আগে শারলিন জানতে পারেন অন্য এক নারীর সঙ্গে আলবার্টের সম্পর্ক ছিল এবং তাঁর দুইটি অবৈধ সন্তান রয়েছে। শারলিন এই প্রতারণা মেনে নিতে পারেননি এবং তিনি তিন-তিনবার পালানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতি এসব গুজব অস্বীকার করেন এবং সংবাদ সংস্থা ‘সানডে টাইমস’-এর নামে মামলা দায়ের করেন। যদিও রাজবধূ শারলিন তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় চোখের জল ফেলেছেন। তাঁর এই কান্না সুখের ছিল নাকি দুঃখের, তা অবশ্য জানা যায়নি।

 


রাজকুমারীর বিয়েতে পিতা অনুপস্থিত : কেনিস্টন রাজপ্রাসাদের রাজা টমাস মার্কেলের মেয়ের বিয়ে নিয়ে গুজব রটে। প্রথমে শোনা যায় যে, তিনি তাঁর মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু রাজপরিবার থেকে এই গুজব অস্বীকার করা হয় এবং বলা হয়, তিনি বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। মেগানের বিয়ের এক সপ্তাহ আগে টমাস চরম এক বিতর্কের শিকার হন। সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছে মেগানের বিয়েকে লোভনীয় করার জন্য তিনি বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই মঞ্চ সাজিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনা জানাজানি হওয়ার ফলে ভেস্তে যায়। পরবর্তী সময়ে তাঁর হার্টে অপারেশন হয় এবং এই কারণে তিনি মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত হতে পারেননি।

 


রাজকুমারীর দেহরক্ষীকে বিয়ে : ১৯৮৮ সালে মোনাকোর রাজকুমারী স্টেফানির দেহরক্ষী হিসেবে ড্যানিয়েল ডাক্রুট নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। ঘটনাচক্রে স্টেফানি এবং ড্যানিয়েলের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের দুটি সন্তানের জন্ম হয়। সামাজিকতা রক্ষার্থে স্টেফানি এবং ড্যানিয়েল ১৯৯৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ঠিক একবছর পর ড্যানিয়েল অন্য এক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং তাঁদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিওচিত্র স্টেফানির হাতে পড়ে। ড্যানিয়েলের এই প্রতারণা স্টেফানি মেনে নিতে পারেননি এবং এই ঘটনার পর খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

 


বিয়ের মঞ্চে স্ত্রী অসুস্থ : ১৭৯৫ সালে ব্রিটেনের ওয়েলস রাজ্যের রাজকুমার ফ্রেডরিকের বিয়ে ঠিক হয় স্যাক্স-গোথা রাজ্যের অগাস্টার সঙ্গে। অগাস্টার বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর।  ফ্রেডরিকের সঙ্গে অগাস্টার পূর্ব পরিচয় ছিল না এমনকি তাঁরা একে অপরকে কখনো দেখেননি। তাছাড়া ওয়েলস রাজ্যের ভাষা অগাস্টার জানা ছিল না। সবকিছু মিলিয়ে চরম এক ভীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন অগাস্টা। বিয়ের মঞ্চে ওঠার পর অগাস্টা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। নিজের পোশাকে তাঁর পা আটকে যায় এবং তিনি হবু শাশুড়ীর গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে অগাস্টা বিয়ের মঞ্চেই অসুস্থ হন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ এপ্রিল ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়