ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ডোরামাথা রাজহাঁস

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২১ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডোরামাথা রাজহাঁস

শামীম আলী চৌধুরী: ‘ডোরামাথা  রাজহাঁস’ বা ‘বাদিহাঁস’ বা ‘রাজহাঁস’ Anatidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি জলচর পাখি। যার দৈর্ঘ্য আকারভেদে ৭২-৭৫ সে.মি. এবং ওজন দেড় কেজি থেকে প্রায় সোয়া তিন কেজি। এরা একটাই প্রজাতি এবং এদের কোনো উপপ্রজাতি নেই। এদের শরীর দেখতে অনেকটা ধূসর বর্ণের। সাদা মাথা থেকে সাদা একটি লাইন গলার নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। মাথায় দুটি কালো দাগ বা ডোরা দেখা যায়। যার জন্য এই পাখিটি ‘ডোরামাথা’ নামে পরিচিত। মাথা সাদা বর্ণের হয়। দেহ ফিকে সাদা রঙের। ডানার পালকের অগ্রভাবে কালো রঙ দেখা যায়। পুরুষ ও মেয়েপাখি দেখতে একই রকম। কোনো পার্থক্য নেই। এদের চোখ বাদামী। ঠোঁট হলুদ ও নাক কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় হলুদ বর্ণের। বাচ্চা ও অপ্রাপ্ত বয়সের রাজহাঁসের মাথায় কালো ডোরা দাগ নেই। কপাল সাদা এবং গাল ও গলা মলিন। পিঠ ও পেটের রঙ একই।



ডোরামাথা রাজহাঁস লতাপাতা ঘেরা জলাশয় ও সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপে এমনকি বড় বড় নদীর চরে বিচরণ করে। দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে পছন্দ করে। এদের ঝাঁকে প্রায় ১০০টি পর্যন্ত রাজহাঁস থাকে। যদিও আমাদের দেশে নদীর চরগুলোতে ঝাঁকের সংখ্যা কম দেখা যায়। তবে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় এদের সংখ্যা অনেক। দলবদ্ধভাবে বিচরণ করতে পছন্দ করে। একা একা খুব কমই দেখা যায়। নদীর চরাঞ্চলে জেগে ওঠা চরে কৃষক যখন নতুন ধানের চারা রোপণ করে তখন এদের বিচরণ চোখে পড়ার মতো। এরা খুব সকালে ও সূর্য ডোবার আগে ধানক্ষেতে অবস্থান করে। দিনের বাকি সময় পানিতে ভাসে। এরা তীরের পাখি হিসেবেও পরিচিত।

কঁচি ঘাসের আগা ও ধানের চারা ও জলজ উদ্ভিদ এদের প্রধান খাবার। যার জন্য মাঝে মাঝে এরা চরাঞ্চলে কৃষকের ধানের জমিতে হানা দেয় খাবারের জন্য। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে উঁচু জলাভূমিতে এরা প্রজনন করে থাকে। প্রজননের সময় নদী বা উপকূলের ধারে মাটিতে লতাপাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে এক সঙ্গে ৩-৪টি ডিম দেয়। মেয়েপাখি একাই ডিমে তা দেয়। ৩০ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটে বের হয়। বাবা ও মা উভয়ে মিলে বাচ্চা লালন-পালন করে।



ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় ডোরামাথা রাজহাঁস হিমালয় পর্বতের চূড়া প্রায় ২৯০০০ হাজার ফুট  উপর দিয়ে পারিযায়ী হয়ে আমাদের দেশে আসে। (যদিও এটি নিয়ে মতবিরোধ আছে।) তবে এটা সত্য যে, প্রকৃতিবিদ আর শারীরতাত্ত্বিকদের কাছে এ এক বিরাট প্রশ্ন। কেন ডোরামাথা রাজহাঁস হিমালয় পর্বতমালার কম উচ্চতার গিরিপথ দিয়ে না এসে এত বেশি উচ্চতা দিয়ে পরিযান করে? যেখানে অন্যসব পরিযায়ী পাখি অহরহ সেসব গিরিপথ ব্যবহার করে। আবার অনেকে মনে করেন এত উচ্চতায় অক্সিজেনও বা কীভাবে এরা সংগ্রহ করে? এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, এরা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার অন্যতম বাহক। কাক, দাঁড়কাক, শিয়াল, গাঙচিল ও সিন্ধু ঈগল প্রভৃতি এদের প্রধান শত্রু।

ডোরামাথা রাজহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। শীতকালে আমাদের দেশে উপকূলে ও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ভোলা, সিরাজগঞ্জ ও হাওর এলাকায় দেখা যায়। এছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান, সাইবেরিয়া, আফগানিস্তান ও চীনে এদের বিচরণ দেখা যায়।

বাংলা নাম: ডোরামাথা  রাজহাঁস বা বাদিহাঁস বা রাজহাঁস।
ইংরেজি নাম: Bar-headed goose
বৈজ্ঞানিক নাম:  Anser indica

লেখক ছবিগুলো মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ ও রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে তুলেছেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুন ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়