ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রাইভেট প্রাকটিস করতে চান ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাইভেট প্রাকটিস করতে চান ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা

আরিফ সাওন : ডেন্টিস্টদের মতো প্রাইভেট প্রাকটিস করার অনুমতির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা। ইতিমধ্যে ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা পক্ষে রায়ও পেয়েছেন। ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের মামলা চলছে। মামলার বাদী ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গনি কবির।

তবে এ বিষয়টাকে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি বলে মনে করছেন ডেন্টিস্টরা। তারা বলছেন, ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট যদি ডাক্তার হয়ে যান, তাহলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। তা ছাড়া কেউ মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টাল সার্জারিতে পড়তে চাইবেন না।

ডেন্টাল সার্জন ও টেকনোলজিস্টদের লেখাপড়ার দিকে থেকে অনেক পার্থক্য আছে। বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, বিডিএস ডিগ্রিধারীরাই ডেন্টাল সার্জন। ডেন্টাল সার্জন শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৯ পেয়ে ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। ডেন্টাল সার্জনদের পাস করার পরে এক বছরের ইন্টার্নশিপ আছে। ডেন্টাল সার্জনরা সেসব কলেজে লেখাপড়া করেন, সেখানে হাসপাতাল আছে। সেই হাসপাতালেই ইন্টার্নশিপ হয়। দাঁতের এক্সরে করা, দাঁত বানানো বা ল্যাবের বিভিন্ন কাজ নিয়ে যে কোর্স তা হলো ডেন্টাল টেকনোলজি। ডেন্টাল টেকনোলজিতে দুটি কোর্স- ডিপ্লোমা ও বিএসসি। আগে ডিপ্লোমা পরে বিএসসি। জিপিএ ফাইভ থাকলে তারা টেকনোলজি পড়েন। মেডিসিন সার্জারি যাদের নাই তারা ডাক্তার হয় কীভাবে? তাদের কোনো ইন্টার্নশিপ নেই। নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই। টেকনোলজিস্টরা যদি ডাক্তার হয়ে যান, তাহলে মেডিক্যাল কলেজে তো কেউ পড়বেন না।

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মো. জাহিদ বলেন, টেকনোলজিস্টরা যদি প্রাকটিসের সুযোগ পান তাহলে ডেন্টাল সার্জনের মধ্যে আর তাদের মধ্যে কোনো তফাৎ রইল না। রবং ডেন্টাল সার্জনরা পিছিয়ে গেল। এর ফলে সবাই চিন্তা করবে, সার্জারি না পড়ে টেকনোলজিতে পড়ার।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক একরামুল হক সুমন বলেন, কোনো বিষয়ে সার্ভিস ডেলিভারি করতে হলে প্রোপার নলেজ থাকতে হবে। নলেজের ঘাটতি থাকলে সার্ভিসটা ইমপ্রোপার ডেলিভারি হবে। রাষ্ট্র সার্জনদের তৈরি করছে ট্রিটমেন্ট ডেলিভারি করার জন্য। আর টেকনোলজিস্টদের কোর্স কারিকুলাম অথবা লেখাপড়া ট্রিটমেন্ট দেওয়ার মতো ইনপুট দিয়ে তৈরি না। তাই তারা প্রাকটিসের অনুমতি পেলে তাতে জনগণ সাফার করবে এবং স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটা বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমে ডেন্টাল ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা রিট করে পক্ষে রায় পান। তারই ধারাবাহিকতায় রিট করে ডেন্টাল বিএসসি টেকনোলজিস্টরা। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী টেকনোলজিস্টদের রিটের সময় বিষয়টি ডেন্টাল সার্জনরা টের না পেলেও বিএসসি ডিগ্রিধারী টেকনোলজিস্টদের রিটের পর তারা টের পেয়ে যান। আর ঠিক রায়ের দিন সকালেই বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি মামলার বিবাদী হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করে। ডিপ্লোমাধারীদের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়। স্বাস্থ্য খাতে ডেন্টাল চিকিৎসাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সারা দেশে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির আহ্বানে মানববন্ধন ও সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন দন্ত চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, যারা ডেন্টাল ডিপ্লোমা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী টেকনোলজিস্ট আছেন, তারা তো ডেন্টাল সার্জন না। সার্জন না হয়েই তারা প্রাকটিসের অনুমতি চান। এজন্য বিএসসি টেকনোলজিস্টরা হাইকোর্টে রিট করেছেন। রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি ছিল রায়ের দিন। আমরা ওই দিন মামলার বিবাদী হওয়ার জন্য আদালেত আবেদন করেছি। ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, বিএসসিদের মামলার খবর পেয়ে বিবাদী হওয়ার জন্য কোর্টে গিয়ে জানতে পারি এর আগে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা আর্জি জানিয়ে পক্ষে রায় পেয়েছেন। সেই রায়ের রিবুদ্ধে আমাদের লিভ টু আপিল গ্রান্টেড হয়েছে। ৭ মার্চ পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের রায় পাওয়া প্রসঙ্গে ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, তারা রাষ্ট্রের যাদের বিবাদী করেছেন, তারা খুব ভালো রেসপন্স করে নাই। জজ সাহেব যখন বিবাদীদের কাউকেই পেলেন না, তখন রায়টা স্বাভাবিক ভাবে একতরফা হয়ে গেছে। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা রায় পাওয়ার পরে বিএসসিরা রিট করল। ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা যাদের বিবাদী করেছিলে বিএসসিরাও রাষ্ট্রের ঠিক তাদের বিবাদী করল।

তিনি আরো বলেন, সরকারপক্ষের যিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তিনি মনে হয় মামলার ক্ষেত্রে ততোটা প্রটেস্ট করেন নাই। তিনি যখন দেখলেন, কেউ আসেননি। তাহলে এটা নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো ইন্টারেস্ট নাই। থাকলে তো তারা দৌঁড়ে আসত। আসলে আমি ফেস করতাম। কিন্তু যেহেতু কেউ আসেননি, তখনই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ওই কেসটা তো ওইভাবে চলে গেল। বিএসসির বেলায় যখন রায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বিবেকের তাড়নায় হোক, আর যেভাবেই হোক তিনি বিষয়টা ভালো চোখে দেখলেন না। তার তো এটা ভালো লাগার কথা না যে, টেকনিশিয়ান ডাক্তার হয়ে যাবে। এটা স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটা ঝুঁকি। তখন তিনি মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টরকে সমস্ত বিষয় জানালেন। তিনি আমাকে জানালেন। পরে আমরা হাইকোর্টে ছুটে গেলাম।’

তিনি বলেন, আমরা বিবাদী ছিলাম না। এজন্য সাফারার যেহেতু আমরা হব, তাই এডিশনাল বিবাদী হওয়ার জন্য আবেদন করেছি। আর ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের রায়ে বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল গ্রান্টেড হয়েছে। বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির নির্দেশনায় সব প্রতিষ্ঠানে এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি অব্যাহত আছে। তারা আন্দোলন করবে আর আমরা নেতৃত্বে যারা আছি তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টর আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দুই দফায় ফোন করা হলে তিনি জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন। মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়