ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইন্টার্ন ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে রামেক হাসপাতালে অচলাবস্থা

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ৫ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইন্টার্ন ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে রামেক হাসপাতালে অচলাবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রায় এক মাস আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাবনার সদর থানার রাঘবপুর এলাকার আশরাফুল ইসলাম (২৮)। ভর্তি আছেন হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। রোববার দুপুরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।

আশরাফুল বলেন, ‘কাল থেকে ছোট ডাক্তাররা (ইন্টার্নরা) আসেননি। বড় ডাক্তার একজন এসেছিলেন। একবার দেখে গেছেন। তারপর খবর নাই। এত বড় ওয়ার্ড! সব রোগীর কাছে একবার করে গেলেও তো দিন শেষ। পায়ের ব্যথাটাও বেড়েছে। নতুন ওষুধ-টষুধ লাগবে কি না- তা জানার জন্যও কাউকে পাচ্ছি না।’

নওগাঁর মান্দা উপজেলার কাঞ্চন গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেনও (৬০) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কিছু দিন আগে। তিনি বলেন, ‘এ রকম অবস্থা কোনো দিন দেখিনি। ডাক্তার নাই, নার্স নাই, ওষুধ নাই, পানি নাই! একা একা শুধু পড়ে আছি। কাল থেকে এভাবেই যাচ্ছে।’

ভর্তি থেকেও চিকিৎসা না হওয়ায় জেলার বাগমারা উপজেলার বীরকোয়া গ্রামের বৃদ্ধ হারান উদ্দীনকে (৭০) হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার স্বজনরা। জরুরি বিভাগের সামনে নাতি ইকবাল হোসেন (২৫) জানালেন, ওয়ার্ডে থাকলে রোগীর ধুকে ধুকে মৃত্যু দেখতে হবে। কাল থেকে ইন্টার্নরা ওয়ার্ডে যাননি। একজন চিকিৎসককে ওয়ার্ডে পাওয়া গেলেও তিনি সব রোগীকে সময় দিতে পারছেন না। তাই রোগী নিয়ে ক্লিনিকের পথ ধরেছেন তারা।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তি দেওয়ার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে একাত্মতা ঘোষণা করে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রামেক হাসপতালের ইন্টার্নরাও কর্মবিরতিতে গেছেন। এ অবস্থায় রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবার এমন চিত্র দেখা গেল।

রোগীর স্বজনরা বলেছেন, ইন্টার্নরা না থাকায় ওয়ার্ডে একজন করে অতিরিক্ত চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ চিকিৎসক সব রোগীকে সময় দিতে পারছেন না। ফলে চিকিৎসার অভাবে ধুকছেন রোগীরা। রোগীর স্বজনরাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। এ অবস্থায় অনেকে রোগী নিয়ে চলে যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে।

তবে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম রফিকুল ইসলামের দাবি, ইন্টার্নরা না থাকলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমপক্ষে  ১৮০০ রোগীর চিকিৎসার ত্রুটি হচ্ছে না। ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কারণে সিনিয়র চিকিৎসকের পাশাপাশি রেজিস্ট্রার ও মিড লেবেলের চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসার ত্রুটি হচ্ছে না।

ইন্টার্নদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘না, এটা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটা সংগঠনের কর্মসূচি। এটি রাজশাহী থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় না। তাই আমরা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে চিকিৎসার যেন ত্রুটি না হয়, আমরা সেই দিকটি মাথায় রেখে কাজ করছি।’

রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মুখপাত্র রায়হান শরীফ জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতি আগামী মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে তাদের দাবিগুলো মেনে নিলে তারা কাজে ফিরবেন। তা না হলে সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কর্মবিরতি আরও বাড়তে পারে।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/০৫ মার্চ ২০১৭/তানজিমুল হক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়