ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিশুদের স্থূলতাজনিত কিডনি রোগ উদ্বেগের

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুদের স্থূলতাজনিত কিডনি রোগ উদ্বেগের

আরিফ সাওন : প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালন করা হয়। সেই হিসেবে এ বছর ৯ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ বছরের প্রতিবাদ্য বিষয় ‘স্থুলতা কিডনি রোগ বাড়ায়, সুস্থ জীবনযাপনে সুস্থ কিডনি।’ বাংলাদেশের শিশুদের স্থুলতা জনিত কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সত্যিকার অর্থেই উদ্বেগজনক।

কিডনি দিবস উদযাপন কমিটির প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, কিডনি রোগ মূলত দুই ধরনের। আকস্মিক কিডনি রোগ ও ধীর গতির কিডনি রোগ। ধীরগতির কিডনি রোগের ৩টি প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী নতুন করে ধীর গতির কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগীর কিডনি কয়েক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না। বিভিন্ন গবেষণায় ধীর গতির কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট কতগুলো ঝুঁকি নির্নয় করা হয়েছে। তারমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ধুমপান, ব্যাথা নাশক ঔষধ বেশি সেবন, স্বল্প কায়িক পরিশ্রম ও স্থুলতা অন্যতম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ১৮ শতাংশ পুরুষ এবং ২১ শতাংশ নারী স্থুলতায় আক্রান্ত হবে। যার মধ্যে মারাত্মক আকার ধারণ করবে ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৯ শতাংশ নারী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (পিএনএসবি)- এর জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, বিশ্বে বর্তমানে শিশুদের স্থুলতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে বয়স্কদের মধ্যে এ হার শতকরা ৪০ শতাংশ। শিশুদের ক্ষেত্রেও এ হার ক্রমাগত বেড়ে চলছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এই স্থুলতার হার শহুরে শিশুদের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং গ্রামের শিশুদের মধ্যে ৮ শতাংশ।

এক গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, খাদ্যভ্যাস, শিশুদের কায়িক পরিশ্রম সম্পন্ন খেলাধুলার অভাব এবং বর্তমানে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে এই স্থুলতার হার ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ফলে শিশুরা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিজনিত রোগৎসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্থুলতাজনিত কিডনি রোগ নিয়ে শিশুরা দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। যা সত্যিকার অর্থেই উদ্বেগজনক।

ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চিফ  কনসালট্যান্ট ও ক্যাম্পাস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ ৭ মার্চ এক সেমিনারে কিডনি রোগের কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দুই কোটিরও অধিক লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় অকাল মৃত্যুবরণ করছে পাঁচ জন লোক। সাধারণত ৭৫ ভাগ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতেই পারে না যে, সে ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। কিডনি যখন বিকল হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার উপায় শুধু কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। অন্যদিকে কিডনি রোগের চিকিৎসা এতোই ব্যয়বহুল যে, এদেশের ১০ ভাগ লোকেরও সাধ্য নেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার।’

তিনি বলেন, ‘অনেক রোগ আছে যা শিশু বয়স থেকে শুরু হয়ে সুপ্ত অবস্থায় বাড়তে থাকে এবং বড় হলে তা কিডনি বিকলে রুপান্তরিত হয়। কিডনি নষ্ট হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে ‘স্থুলতা’ একটি অন্যতম কারণ। স্থুলতার কারণে কিডনির ছাকনি সরাসরি নষ্ট হয়ে যায়।’

অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগের ভয়াবহতা এখন অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছেন, তারা মনে করেন, চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব প্রশমন করতে হবে আর এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়।’

কিডনি রোগ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ভাবে ১০টি বিষয়ে অবলম্বনের তাগিদ তৈরি হয়েছে। তা হল কায়িক পরিশ্রম ও খেলাধূলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ যাতে প্রতিদিন শাকসবজি ও ফল থাকবে, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা ও ফাস্ট পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা, পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবার পূর্বে হাত ধোয়া, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যাথা নাশক ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন না করা, নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।

কিডনি দিবসে কর্মসূচি:
দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে মৎস ভবন পর্যন্ত র‌্যালীর আয়োজন করা হয়েছে। পরে ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

অপরদিকে সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাসের বটতলায় র‌্যালি ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। এছাড়া বিএসএমএমইউ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ মার্চ ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়