ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘ইসিকে পথ দেখাচ্ছে রংপুর’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ইসিকে পথ দেখাচ্ছে রংপুর’

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। ছোট বড় প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হয়েছে ইসি।

রংপুরে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে পারায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আশার আলো দেখছে দেশের এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।

এর আগে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন থাকা অবস্থায় কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। রকিব কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কে এম নুরুল হুদা কমিশন। নতুন কমিশন এসে ছোট বড় যতগুলো নির্বাচন করেছে প্রায় সব নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে এমন দাবি ইসির।

এই দাবির সঙ্গে একমত দেশের সুশীল সমাজের নাগরিকরাও। সুশীল সমাজের বক্তব্য বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কয়টি নির্বাচন করেছে তা সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

রংপুর নির্বাচন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটা ভালো দিক হচ্ছে তারা নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। তারা মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ বাড়াচ্ছে। এটা খুব ভালো একটা দিক দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য।

তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে একটা আগ্রহ ছিল। সবাই তাকিয়ে ছিল ইসির দিকে, তারা কি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে- এটা দেখার জন্য। আর আমার দৃষ্টিতে রসিক নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রসিকের প্রভাব পড়বে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে নির্বাচন কমিশন চাইলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে এমন কিন্তু না। সবার আগে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ইসিকে সাহায্য করতে হবে। যে কোন নির্বাচনেই সরকারের প্রভাব থাকলে ইসির পক্ষে সম্ভব না নির্বাচন সুষ্ঠু করার।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে আমরা আশা করতেই পারি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।’

ঠিক একই বিষয়ে কথা হয় ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডিব্লিউজি)পরিচালক মো. আব্দুল আলীমের সঙ্গে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রংপুরে কোন ধরনের সহিংসতা ও অনিয়ম ছাড়াই ভোট হয়েছে। এই নির্বাচন থেকে ইসির প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসি কতোটা সফল হতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নুরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে বড় নির্বাচন বলতে কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করেছে। আর আমার মতে এই দুটি নির্বাচনই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসি যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপ এখানে তাদের বড় সফলতা। তবে ইসিকে শেষ পর্যন্ত এসব সফলতা ধরে রাখতে হবে। তবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইসির কাছে জাতীয় নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ জাতীয় নির্বাচন সারাদেশে এক দিনে হয়। আর স্থানীয় নির্বাচন যেমন রসিক, এখানে কমিশন পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করতে পারে, মনিটরিং করতে পারে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন একটু ভিন্ন রকমের। ব্যাপক নির্বাচন, একদিনে ১০ কোটি ভোটের নির্বাচন। তাই রংপুরের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন জাতীয় নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে।’

রসিক নির্বাচন ও আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে সব নির্বাচনের গুরুত্বই এক। সকল নির্বাচনেই আমাদের চেষ্টা থাকে বা থাকবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার।’

তিনি বলেন,  ‘আমরা আগেই বলেছিলাম রংপুর সিটি করপোরেশনে মডেল নির্বাচন করবো। সেই মডেল নির্বাচন করতে আমরা পেরেছি। এটা কিন্তু শুধু আমাদের কথা না। দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সবাই বলছেন রসিকে গ্রহণযোগ্য ভোট হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রসিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার চেষ্টা করবো।’

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছি যেটা আপনারা সবাই কম বেশি জানেন। আমরা সংলাপ শেষ করেছি। সংলাপে অনেকগুলো বিষয় আমাদের সামনে এসেছে তা নিয়ে আমরা কমিশনাররা বসবো। আমাদের সকলের সমন্বয়ে চেষ্টা করবো জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুইটি সিটি নির্বাচন করেছি। আর এই দুইটি নির্বাচনেই ভোটারদের ব্যপক উপস্থিতি চোখে পড়েছে। সবার মধ্যে একটা উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। সবার মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহও লক্ষ্য করা গেছে। তাই আমরা আশা করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে সক্ষম হবো।’

উল্লেখ্য, রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে।



রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়